|
|
|
|
উদ্যোগী প্রশাসন |
ব্রাত্য শিশুদের পড়াশোনায় নতুন ভাবনা |
সুমন ঘোষ • মেদিনীপুর |
শিক্ষার প্রসারে নানা ধরনের উদ্যোগ রয়েছে সরকারের। কিন্তু ‘পুব-খাটতে যাওয়া’র জন্য যে সব পরিবারকে মাঝেমধ্যেই যাযাবরের জীবন কাটাতে হয়, তাদের বাড়ির ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার কী হবে? কিংবা যে সমস্ত গরিব বা অনাথ ছেলেমেয়েরা ঘুরে বেড়াচ্ছে স্টেশনে বা বাসস্ট্যান্ডেতাদের ক্ষেত্রে কি কোনও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া যায় না? এই চিন্তাভাবনা থেকেই নতুন এক উদ্যোগ নিতে চলেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যেই একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। রাজ্য সরকার প্রকল্প মঞ্জুর করলেই জেলায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে বলে প্রশাসনিক কর্তাদের অভিমত। সর্বশিক্ষার জেলা প্রকল্প আধিকারিক শাশ্বতী দাসের কথায়, “এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাইরে কাজ করতে যাওয়া বা স্টেশন, বাসস্ট্যান্ডে ঘুরে বেড়ানো ছেলেমেয়েদেরও সহজেই শিক্ষার আঙিনায় নিয়ে আসা সম্ভব। সর্বশিক্ষা অভিযানের অর্থেই সেই কাজ করা সম্ভব। পরিকল্পনার কথা রাজ্য সরকারকেও জানানো হয়েছে। রাজ্য সরকার অনুমতি দিলেই কাজ শুরু হবে।” |
|
কোলাঘাটে দুঃস্থ পড়ুয়াদের স্কুল-সামগ্রী বিতরণে পুলিশ সুপার |
প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘রেসিডেন্সিয়াল স্কুল’। যে প্রকল্পে এখনকার স্কুলেরই একটি বা দু’টি বড় ঘরে থাকারও ব্যবস্থা থাকবে। সেখানেই থাকতে পারবে ছাত্রছাত্রীরা। এমনিতেই স্কুলে মিড-ডে মিলের ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে একবেলা খাবার নিশ্চিত রয়েছে। এর বাইরে রাতের খাবার ও দু’বেলার টিফিনের ব্যবস্থা করলেই হবে। আর দেখভালের জন্য স্থানীয় কোনও শিক্ষক ও স্ব-সহায়ক দলকে দায়িত্ব দিলেই হল। কেন এই পরিকল্পনা? প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও ঝাড়গ্রাম মহকুমার বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে মানুষ অন্য জেলার কাজ করতে যান। বিশেষত, ধান রোওয়া, ধান কাটার সময়ে বাড়ির ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়েই দু’তিন মাসের জন্য চলে যান সকলে। গ্রামের রেওয়াজ অনুযায়ী, ছোট্ট-ঝুপড়ি ঘরের দরজা বন্ধ করে দরজার সামনে কাঁটা দিয়ে চলে যান। অর্থাৎ বুঝিয়ে দেওয়া হয়, সপরিবারে কাজের সন্ধানে বাইরে গিয়েছেন। ফিরতে দেরি। বাবা, মা কাজে চলে গেলে সঙ্গের ছোট্ট ছেলেমেয়ে কী ভাবে একা বাড়িতে থাকবে। তাই তাদেরও সঙ্গে নিয়ে যান। গ্রামের থাকার সময় পাশের স্কুলে যেত ছেলেমেয়ে। কিন্তু বাইরে গিয়ে কোন স্কুলে ভর্তি হবে? যাঁরা পেটের টানে বাইরে কাজে যেতে বাধ্য হন, তাঁরা ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য এত ভাবারই বা সময় পাবেন কোথায়? ফলে ওই সময়ে পড়াশোনা বন্ধই থাকে। ফিরে এসে ফের যখন ছেলেমেয়েরা স্কুলে যায় তখন সহপাঠীরা অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। উল্টোদিকে এরা যেটুকু পড়াশোনা করেছিল, তা-ও ভুলে গিয়েছে।
এই বাচ্চাদের জন্যই সর্বশিক্ষা প্রকল্পের আওতায় ‘রেসিডেন্সিয়াল স্কুল’ তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। আগেও এক বার এ ধরনের প্রকল্প তৈরি করা হয়েছিল। তা অবশ্য মঞ্জুর হয়নি। এ বার অবশ্য রাজ্য সরকার ফের প্রকল্প-রিপোর্ট চেয়ে পাঠানোয় আশার আলো দেখছে জেলা প্রশাসন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে ২০টি স্কুলে ১৬ জন করে বাচ্চা রেখে পরীক্ষা-মূলক ভাবে প্রকল্পটি চালুর ভাবনা রয়েছে। তাদের রাতে থাকা, খাওয়া, দেখভাল মিলিয়ে বছরে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা খরচ হতে পারে বলে আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে। এই পরীক্ষায় উতরে গেলে আরও বৃহত্তর উদ্যোগ নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে স্টেশন, বাসস্ট্যান্ডের অনাথ বা ভবঘুরে বাচ্চাদেরও এই পদ্ধতিতে স্কুলের আঙিনায় নিয়ে আসা সম্ভব হতে পারে বলে প্রশাসনিক কর্তাদের অনুমান। কারণ, স্টেশন বা বাসস্ট্যান্ডে ঘুরে বেড়ানো এই বাচ্চারা ভিক্ষে করে উপার্জন করে। তা দিয়ে কেবল পেট চালায় তা নয়, মাদকাসক্তও হয়ে পড়ে। ভুল-পথে চলে যায়। নানা অসামাজিক কাজকর্মে জড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে অবশ্য এই ধরনের বাচ্চাদের বিভিন্ন হোমে রাখা হয়। কিন্তু হোমের সংখ্যাও এত বেশি নেই যে সব বাচ্চাকে রাখা সম্ভব হবে। কিন্তু ‘রেসিডেন্সিয়াল স্কুল’ করলে কম খরচেই বাচ্চাদের থাকা, খাওয়া ও পড়াশোনার ব্যবস্থা সম্ভব বলে প্রশাসনিক কর্তাদের অভিমত। তাই এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে রাজ্য সরকারের অনুমতিও চাওয়া হয়েছে। |
|
|
|
|
|