|
|
|
|
দাসেরবাঁধে চার্জ-গঠন পিছিয়ে গেল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
অসুস্থতার জন্য দুই অভিযুক্ত গরহাজির থাকায় ফের পিছিয়ে গেল দাসেরবাঁধ কঙ্কাল-কাণ্ডে চার্জ-গঠন সংক্রান্ত শুনানি। মামলার পরবর্তী দিন ধার্য হয়েছে ৫ জুলাই। ওই দিন শুনানি শুরু হতে পারে।
সোমবার মেদিনীপুরের চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা-দায়রা আদালতে এই মামলার চার্জ-গঠন সংক্রান্ত শুনানি শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে কিরীটী রায় ও শঙ্কর সাউ নামে দুই অভিযুক্ত এ দিন আদালতে গরহাজির ছিলেন। তাঁদের মধ্যে কিরীটীবাবু জামিনে মুক্ত রয়েছেন, তবে অসুস্থ। শঙ্করবাবু রয়েছেন জেলে। কিরীটীবাবুর ‘কেমোথেরাপি’ চলছে জানিয়ে তাঁর আইনজীবী রাণা গঙ্গোপাধ্যায় আরও অন্তত দেড় মাস সময় চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। সরকারপক্ষের আইনজীবী শক্তি ভট্টাচার্য অবশ্য জানান, এক-দু’জন অভিযুক্তের জন্য পুরো বিচার-প্রক্রিয়া পিছিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত চার্জ-গঠন হওয়া জরুরি। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক অভিজিৎ সোম আগামী ৫ জুলাই এই মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন। |
|
মেদিনীপুর আদালতের বাইরে সুশান্ত ঘোষ |
সোমবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ (গরমে সকালেই কোর্ট বসছে) দাসেরবাঁধ কঙ্কাল-কাণ্ডে জেলবন্দি ১৪ জনের মধ্যে ১৩ জনকে (শঙ্কর সাউ বাদে) মেদিনীপুরের চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা-দায়রা আদালতে হাজির করা হয়। এই মামলায় মোট ২১ জন গ্রেফতার হয়েছিলেন (চার্জশিটে নাম রয়েছে অবশ্য মোট ৫৮ জন সিপিএম নেতা-কর্মীর)। ধৃতদের মধ্যে সুশান্ত ঘোষ, দেবাশিস পাইন, কিরীটী রায়, বিলাস পাঁজা, বিশ্বরূপ ঘোষ, শেখ আরফিন, অর্ণব ঘোষ—এই ৭ জন জামিনে মুক্ত রয়েছেন। এর মধ্যে অর্ণব ২০০২-এ ঘটনার সময়ে নাবালক থাকায় বিচার চলছে জুভেনাইল আদালতে। অর্ণব ও কিরীটীবাবু ছাড়া সুশান্ত ঘোষ-সহ জামিনে মুক্ত অন্য ৫ জনও এ দিন ঠিক সময়েই আদালতে হাজির হন। শুরুতেই অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবীরা জানান, কিরীটী রায় ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর কেমোথেরাপি চলছে। অন্তত দেড় মাস পিছোনো হোক চার্জ-গঠনের শুনানি। সরকারপক্ষের আইনজীবী অবশ্য দ্রুত চার্জ-গঠনের জন্যই সওয়াল করেন। তাঁর বক্তব্য, “এর আগে ১৬ এপ্রিল মেদিনীপুর আদালতে এই মামলার দিন ধার্য ছিল। তার আগে ১২ এপ্রিল ওই অভিযুক্তকে (কিরীটী রায়) বাঘাযতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে ঠাকুরপুকুর হাসপাতালে ভর্তি করা হল।” কেন ওই অভিযুক্তকে আগেই ঠাকুরপুকুরে ভর্তি করা হল না, আদালতে সেই প্রশ্ন তুলে তাঁর বক্তব্য, “অন্যান্য অভিযুক্তদের কথাও ভাবতে হবে। একটা করে পিটিশন জমা পড়বে। আর চার্জ-গঠন পিছিয়ে যাবে— এটা হতে পারে না।” সরকারি আইনজীবীর মন্তব্য, “প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘আমার প্রতি অবিচার চলছে।’ ওঁরও তো দ্রুত বিচার দরকার। তাই এ ক্ষেত্রে দ্রুত চার্জ-গঠন জরুরি।” অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী পাল্টা বলেন, “কেউ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকলে কী আর করা যাবে?” দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক আগামী ৫ জুলাই মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
সরকারি আইনজীবীর দ্রুত চার্জ-গঠনের পক্ষে সওয়ালের কারণ হিসাবে মেদিনীপুর আদালতের অন্য আইনজীবীদের ব্যাখ্যা, চার্জ-গঠন যত পিছোবে উচ্চ আদালত থেকে অন্য জেলবন্দিদের জামিন পাওয়াও তত সহজ হয়ে যাবে। কেননা, এই মামলায় চার্জশিট পেশ হয়ে গিয়েছে গত বছর সেই ২৩ সেপ্টেম্বর। তার পরে আট মাসেও চার্জ-গঠন না হলে বন্দিদের বিনা বিচারে আটকে রাখার অভিযোগ উঠবেই। সেটা সরকারের পক্ষে বড় বিড়ম্বনা। এ দিকে, জামিনে মুক্ত এই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত দেবাশিস পাইনের আইনজীবী শাক্য মাইতি আদালতে জানান, তাঁর মক্কেলকে ফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। থানায় এ ব্যাপারে যে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, তারও প্রতিলিপি আদালতে জমা দেওয়া হয়। তাঁর বক্তব্য, “একাধিক মোবাইল থেকে ফোন করে আমার মক্কেলকে ভয় দেখানো হচ্ছে।” অন্য দিকে, এ দিনও গড়বেতা থেকে আসা কিছু যুবক আদালত চত্বরের বাইরে বিক্ষোভ দেখান। ‘সুশান্ত ঘোষের ফাঁসি চাই’ বলে স্লোগানও দেন তাঁরা। তবে, অনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতে সোমবার সকাল থেকেই আদালত চত্বরে ‘বাড়তি’ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। |
|
|
|
|
|