রাতভর বাঁধনহারা আনন্দ উদ্যাপনের মধ্যেও সিএসকে-কে নিয়ে তিক্ততা রয়েই গেল নাইট শিবিরে।
কেকেআরের কেউ কেউ দাবি করলেন, চেন্নাই তাদের সব দিক থেকে হারাতে চেয়েছে। এমনকী, ম্যাচে যথেষ্ট কার পার্ক স্টিকার পর্যন্ত পাঠায়নি। ওদের মনোভাব ছিল, হয় আমরা, নইলে কেউ না। এক কর্তা বললেন, “ফোটোগ্রাফারদের উচিত চিদম্বরমের দুই ড্রেসিংরুমে গিয়ে ছবি তোলা। একটা কাচে ভরা, আর একটা প্রায় কাচবিহীন। একটায় বাস্তুর মাধ্যমে পজিটিভ এনার্জি। আর একটায় ডিজাইনার নেগেটিভ। এগুলো তো ফাঁস হওয়া উচিত।” লক্ষ্মীরতন শুক্ল তখন বললেন, “কাচ ফিট করে ম্যাচ জেতা যায় না। ম্যাচটা ক্রিকেট খেলে জিততে হয়। আমরা সেটাই করেছি।”
তখনও খবর আসেনি, চেন্নাই মালিক শ্রীনিবাসন পুরস্কার বিতরণের সময় অসুস্থ হয়ে পড়ে গিয়েছেন। বিজয়ীর হাতে ট্রফি তুলে দেবেন কী, তাঁকে হুইলচেয়ারে করে গাড়িতে তোলা হয়। তাঁর রক্তচাপ প্রচণ্ড কমে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল, হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। বোর্ড প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ কেউ কেউ বললেন, সারা দিন ম্যাচের ধকল গিয়েছে। তার পর ম্যাচের বাড়তি টেনশন। আর গরমে স্যুট-টাই পরে থাকা। সব মিলিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর বদলে বিজয়ীদের হাতে ট্রফি তুলে দেন বোর্ড সচিব জাগদালে। টিভি ক্যামেরা সযত্নে তাঁর মঞ্চ থেকে পড়ে যাওয়ার দৃশ্যটা এডিট করে। উৎসবমুখর মুখগুলো শ্রীনিবাসনের অসুস্থতার খবর না জানায় অন্য আলোচনায় ব্যস্ত ছিল যে, ধোনিকে নিশ্চয়ই তিনি এতক্ষণে কড়কাচ্ছেন। জানতে চাইছেন, জাডেজাকে যে এত টাকা দিয়ে আমরা কিনলাম, ও তো ফাইনালে ব্যাট-বল কিছুই করল না। তা হলে টাকাটা ঢাললাম কেন? কোচ ফ্লেমিং গত রাত্তিরেই বলে দিয়েছেন, ধোনি কেন পাঁচ বোলারের বেশি ব্যবহার করেননি, সেটা তাঁর সিদ্ধান্ত। |
কেকেআরের কোনও কোনও মিডল অর্ডার ব্যাট ধোনির ট্যাকটিক্সে রীতিমতো উত্তেজিত। শেষ ওভারে প্রত্যেকটা বল হওয়ার পর ধোনি যে ভাবে সময় নিচ্ছিলেন, ওই সময়টা টি-টোয়েন্টি ম্যাচে কোনও ক্যাপ্টেন পায় না। ধোনি তবু নিচ্ছিলেন, যাতে দু’টো ডেলিভারের মাঝে সময় বাড়িয়ে ব্যাটসম্যানের ওপর চাপ বাড়ানো যায়। উইনিং স্ট্রোক মারা মনোজ তিওয়ারি অবশ্য বলে দিলেন, “ধোনি ফিল্ডটা ভুল সাজিয়েছিল। আমি প্রথম বাউন্ডারিটা পাওয়ার পর ওখানে ওর লোক রাখা উচিত ছিল।”
ধোনি এবং শ্রীনিবাসনের সম্পর্ককে চেন্নাই ক্রিকেটমহলে বলা হয়, মনমোহন এবং সনিয়া। সম্পর্কের রূপরেখা নতুন কোন দিকে বাঁক নেয়, আগামী ক’মাস ভারতের ফ্র্যাঞ্চাইজিমহল কৌতূহলের সঙ্গে লক্ষ্য করবে। বোর্ড কর্তাদের কেউ কেউ বলে দিলেন, শ্রীনিবাসনের বাস্তু সংস্কারের কথা তাঁরা ভালই জানেন। প্রত্যেকটা কাজ তিনি পুরোহিত ডেকে লগ্ন মেনে করেন। গত বার বোর্ডের বার্ষিক সাধারণ সভা বাস্তু জ্যোতিষীর নির্দেশ অনুযায়ী বারোটার বদলে বারোটা দুইয়ে শুরু করা হয়েছিল। শ্যাম্পেন আর ওয়াইন গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে অনেকগুলো মুখই সেখানে বলল, “পরের বছর আমরা ফাইনালে উঠলে খেলা কলকাতায়। সেখানে বাস্তুও নেই। উইকেটের ঘাস মর্জিমতো ছাঁটা যাবে না। আর আয়নাও লাগানো যাবে না।” |