আইপিলের চ্যাম্পিয়নের মুকুট তাঁর মাথায় উঠেছে। কিন্তু একটা আফসোস এখনও যাচ্ছে না। তাই গত কাল ট্রফি জেতার পরও তাঁর কোচকে ফোন করে গৌতম গম্ভীর বলেছিলেন, “দিল্লি যাকে গুরুত্ব দেয়নি, কলকাতা তাকে মাথায় তুলে রাখল।”
শাহরুখ খানের স্বপ্ন তিনি সফল করেছেন। কলকাতার স্বপ্নও। কিন্তু তাঁর ছাত্রের মনে কোথাও যে একটা কাঁটা খচখচ করছে এখনও, সেটা বলছিলেন গম্ভীরের কোচ সঞ্জয় ভরদ্বাজ। কোচকে গম্ভীর ফোন করে আরও বলেন, “দলে থাকতেও দিল্লি যখন আমাকে উপেক্ষা করল, তখন কলকাতা শুধু ভালবাসা দিয়ে কাছে টেনেই নেয়নি, অধিনায়কও করে দিল। সম্মান দিল।”
নিজের ছাত্রকে নিয়ে সঞ্জয়ের আরও বক্তব্য, “নিজের উপর ওর একটা বিশ্বাস আছে। তার সঙ্গে ওর আত্মত্যাগই ওকে সকলের থেকে আলাদা করে দেয়। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ১৫০-র উপর রান করেও সহজেই ও বিরাট কোহলিকে ম্যান অব দ্য ম্যাচ ছেড়ে দিতে যেমন পারে, ঠিক তেমনই আইপিএলে দেবব্রত দাসকেও ছেড়ে দিতে পারে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার। এ জন্যই ও আলাদা।”
গত কাল করোলবাগের রামজাস রোডের বাড়িতে খেলা করেছে এক এক রকম আবেগ। চেন্নাই সুপার কিংস যখন ১৯০ রান তুলে ফেলে, গম্ভীর পরিবারের মাথায় হাত। এর পরে কেকেআর ব্যাট করতে নামতেই গম্ভীর আউট। বাবা দীপক নখ কামড়াতে শুরু করে দিলেন। মা সীমা শুরু করে দিলেন ভগবানের নাম জপ। |
আস্তে আস্তে খেলার রং বদলাতে লাগল চেন্নাইয়ে। কেকেআর অধিনায়কের করোলবাগ বাড়ির পরিবেশও উজ্জ্বল হতে থাকল। মনোজ তিওয়ারির মারা শটটা বাউন্ডারি পার হতেই পাড়া জুড়ে বাঁধ ভাঙা উল্লাস। অত রাতেও চলল মিষ্টি বিতরণের পালা।
তারই মধ্যে সঞ্জয় ভরদ্বাজ বলছিলেন, “ম্যাচের পরই গৌতম আমাকে ফোন করেছিল। এত আনন্দের মাঝেও কী বলল জানেন? বলল, ‘স্যর হিলফেনহসের বলটা আমার সোজা মারা উচিত ছিল। কিন্তু ভুল করে স্কোয়ারে মারতে গিয়ে বোকার মতো আউট হলাম।’ ভাবুন, ওই জায়গায় চলে যাওয়া একটা ব্যাটসম্যান এমন কথা বলছে।” শুধু তাই নয়, চেন্নাইয়ের রান তাড়া করার ব্যাপারে কেকেআরের কী পরিকল্পনা ছিল, সেটাও কোচকে বলেছিলেন গম্ভীর। ছকটা ছিল এ রকম: প্রথম ছয় ওভারের মধ্যে ৬০-৭০ রান তুলতে হবে। “আমি তাড়াতাড়ি আউট হয়ে যাওয়ার পরেও ভয় পাইনি। বিসলাকে চালিয়ে আর কালিসকে ধরে খেলতে বলেছিলাম,” কোচকে বলেছেন গম্ভীর।
এক দিকে মানুষ গম্ভীর লাজুক আর সোজা সরল একটা ছেলে। অন্য দিকে ক্রিকেটার গম্ভীর যেন অন্য ধাতুতে গড়া। ছাত্রের এই বৈপরীত্যও খুব কাছ থেকে দেখেছেন কোচ। তাই বলছিলেন: “জানেন, ওর বিয়ের দিন ও যেমন লজ্জা পাচ্ছিল মনে হচ্ছিল ও যেন বর নয়, কনে। আবার মাঠে নামলেই এই লাজুক ছেলেটা কিন্তু ইস্পাতের থেকেও কঠিন। সকলে যখন ইউসুফ পাঠানের সমালোচনা করেছে, ওই কিন্তু পাঠানকে দলে রেখে দিয়ে গিয়েছে।” |