বাড়ির ছবি দেখিয়ে মোক্ষম চাল শাহরুখের
পেশিবহুল চেহারাটাকে আষ্টেপৃষ্ঠে চেপে ধরে আছে জার্সিটা। ঘামে আর শ্যাম্পেনে ভেজা। তাতে কী? আবেগের পারদ তখন আকাশছোঁয়া। টিম হোটেলের লবি আর গড়িয়াহাটের মাছের বাজারের মধ্যে কোনও তফাত নেই। ‘কেকেআর-কেকেআর’ আওয়াজের মধ্যেই সাকিবের কাঁধে হাত রেখে ভিড়ের মধ্যে ভাসতে ভাসতে লিফটের কাছাকাছি পৌঁছে যান তিনি। সাকিব বলে ওঠেন, “আজ কারও ঘুম হবে না!” পাশ থেকে তাঁর রসিকতা, “ঘুম? নেক্সট দু’টো দিন জাস্ট ভুলে যা!”
তিনি মনোজ তিওয়ারি।
চার দিক থেকে ধেয়ে আসছে অভিনন্দনের জন্য বাড়ানো হাত, যাঁকে একটু ছুঁয়ে দেখার আকুতি। ছ’ফুটের দশাসই নিরাপত্তারক্ষীর পেশি যখন তাঁকে লিফটের মধ্যে সেঁধিয়ে দিল, ঘড়িতে ভোর পৌনে তিনটে।
ক্রমাগত বেজে চলছে ফোন। তাজ করমণ্ডলের ২০৮ নম্বর রুমে ঢোকার আগেই সামনে রুপোলি পর্দার নায়ক জিৎ। যিনি তাঁকে জড়িয়ে ধরতে ধরতে বলছেন, “বিশ্বাস করুন, ও যখন নামছে, মুখ-চোখ দেখেই মনে হয়েছিল ভীষণ পজিটিভ। মনে হয়েছিল জিতব!”
আর যাঁকে জড়িয়ে ধরা, অভূতপূর্ব তাঁর উদাসীনতা। ঘামে ভেজা জার্সিটা খুলতে খুলতে বলছেন, “ব্র্যাভো আসলে আমার জন্য ভুলভাল ফিল্ড সাজিয়েছিল। আমি ধরে ফেলেছিলাম, স্লোয়ার মারবে। একটু শর্ট অফ লেংথ। কোন দিক দিয়ে ওকে মারব, ঠিক করা ছিল।” কিন্তু ধোনি যে প্রতিটা বলের পরে নিয়ম করে সম্মেলন বসাচ্ছিলেন? মাঠে তখন ক্রমাগত হলুদ ঝড় উঠছে। এগুলো মাথায় খেলছিল না? “না। বললাম তো, ফিল্ড প্লেসিংটা ভুল ছিল। গ্যাপটা দেখে রেখেছিলাম। পরের বলটাতেও টার্গেট ঠিক ছিল। বাউন্ডারিতে পাঠাতে অসুবিধে হয়নি। এ-ও জানতাম, ওটায় না পারলে আরও দু’টো বল আছে। জিততে আমাদের হতই,” উদাসীন ভাবেই বলেন তিনি। তার পর খুলে ফেলা জার্সিটা তুলে দেন এই প্রতিবেদকের হাতে। বলেন, “রেখে দাও।”
স্মরণীয় মুহূর্তকে আর একটু স্মরণীয় করে রাখার জন্য জার্সিতে সইয়ের অনুরোধ। সঙ্গে সঙ্গে পেন বের করে সেটা সারতে সারতে অস্ফুটে বলে ওঠেন, “আমরাও তা হলে পারি!”
ঘরে ফেরা। সোমবার মনোজ।ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
পারেন তো বটেই! এবং হেলায়, নির্বিকার ভাবে পারেন, নয়তো বলবেন কেন? “দু’টো তো মাত্র বাউন্ডারি। এই ম্যাচ চাপে পড়ে মাঠে ফেলে এলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম?” কেন পারতেন না, তারও ব্যাখ্যা উঠে আসে হাওড়ার যুবকের মুখে, “ফাইনালে ভীষণ চার্জড ছিলাম আমরা সবাই। একে চেন্নাইকে চিপকে গ্রুপ লিগে হারিয়েছিলাম। তার উপর ম্যাচের আগে যে ভিডিওটা শাহরুখ আমাদের দেখিয়েছিল, আমার ক্ষেত্রে দুর্দান্ত মোটিভেশনের কাজ করেছে। মোটিভেশনাল ভিডিও আমি প্রায়ই ইউ টিউবে দেখি। আর এটা তো বাস্তব।”
ফাইনালের সন্ধেয় টিম মিটিংয়ের সময় কেকেআর টিম ম্যানেজমেন্টের মাস্টারস্ট্রোক ছিল ওই ভিডিও, যা শাহরুখের মস্তিষ্কপ্রসূত। টিমের প্রত্যেকের সামনে তুলে ধরা হয় তাঁদের বাড়ির ছবি, বাড়িতে কী হচ্ছে এবং কোনও না কোনও প্রিয়জনের বক্তব্য। কারও বাবা, কারও মা, কারও দাদা বা বোন, কারও বউ। ভিডিও-তে দেখানো হয়, বাড়িতে কী হচ্ছে, ওই বিশেষ মানুষটি ফাইনালের আগে কী ভাবছেন, কী আশা করছেন। যেমন মনোজকে দেখানো হয় দাদার বক্তব্য, লক্ষ্মীর ক্ষেত্রে বাবা। দু’জনকেই উচ্ছ্বসিত লাগে ভিডিও সম্পর্কে বলতে গিয়ে। “আমার তো দুর্দান্ত লেগেছে। ভেতর থেকে একটা তাগিদ চলে আসে,” সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলছিলেন মনোজ। পাশ থেকে লক্ষ্মীর সংযোজন, “অসাধারণ প্রেজেন্টেশন। তা ছাড়া মনোজের মাথা অদ্ভুত ঠান্ডা। দেখেননি, ইডেনে এ বছর কী ভাবে শেষ উইকেটে একটা দিক ধরে রেখে দেড়শোর উপর রান করে বেঙ্গলকে রেলিগেশন থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল। ও যখন ক্রিজে যাচ্ছে, তখনই মনে হয়েছিল জেতাবেই। এখনও দেখছেন, কী কুল!”
একটু পরেই শাহরুখের পার্টিতে যাওয়ার ডাক এল। তারই মধ্যে চলছে ব্যাগ গোছানো। কলকাতায় ফিরে সংবর্ধনা পর্ব শেষ হতে না হতেই উঠতে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজগামী বিমানে। ভারতীয় এ দলের সফরে বাংলা থেকে চার জন। মনোজ, ঋদ্ধি, সামি আমেদ ও দিন্দা। দ্রুত ব্যাগ গোছাতে গোছাতে মনোজ বললেন, “বাংলা এ বার বিজয় হাজারে জিতেছে, পূর্বাঞ্চল জিতেছে দলীপ ট্রফি। আর কেকেআর জেতা মানে তো বাংলার জেতা। আগেও বলেছি, আবার বলছি, খুব শিগগিরই আমরা রঞ্জি ট্রফি জিতব, দেখে নেবেন।”
আত্মবিশ্বাসের প্রতিমূর্তি হিসেবেই মনোজকে দেখে এসেছে বাংলার ক্রিকেট। দেখে এসেছে সৌরভের পরে বাংলার ক্রিকেটের সেরা সম্ভাবনা হিসেবে। যিনি এই চেন্নাইতেই গত বছরের শেষে কঠিনতম উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে-তে সেঞ্চুরির পর গোটা অস্ট্রেলিয়া সফরে বসে থেকেছেন টানা ১৩টা ম্যাচ। ধোনির ‘রায়নাপ্রীতি’-র জন্য খেলা হয়নি। সামনে আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর, ফের নতুন করে শুরু।
রায়না, কোহলি, রোহিত শর্মাদের সঙ্গে লড়াইয়ে এই আইপিএল কোথাও পিছিয়ে দিচ্ছিল তাঁকে। আইপিএল ফাইনালের শেষ ওভার এবং ৩ বলে ৯ নট আউটের ইনিংস নতুন করে এঁদের সঙ্গে এক আসনে বসাচ্ছে ‘সেরা বাঙালি’ মনোজকে। আর চার মেরে ডাগ আউটের দিকে ওই দৌড় লর্ডসে সৌরভের অভিষেক সেঞ্চুরির মতোই বাংলা ক্রিকেটের লোকগাথায় চিরস্থায়ী আসন করে নিচ্ছে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.