‘বাজিগরের স্বপ্নে কোনও দিন
আসতে পারি স্বপ্নেও ভাবিনি’
তারকাখচিত কেকেআর টিমে আলাদা করে চোখেই পড়ছেন না। এমনকী ওই ম্যাচ জেতানো ৪৮ বলে ৮৯ রানের ইনিংসের পরেও। সাক্ষাৎকারের অনুরোধে ভোররাতেও প্রশ্ন তোলেন, মিডিয়া ম্যানেজারের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কি না। সোমবার ভোর তিনটেয় টিম হোটেলে আনন্দবাজারকে সাক্ষাৎকার দিলেন আইপিএল ফাইনালে কেকেআর-এর জয়ের মূল রূপকার মনবিন্দর সিংহ বিসলা।

প্রশ্ন: শাহরুখ তো ফাইনালের আগের রাতে আপনার সেঞ্চুরির স্বপ্ন দেখেছেন। টিভিতে বলেওছেন সেটা। জানেন?
বিসলা (হেসে): জানি। শাহরুখ নিজেই ম্যাচের পরে আমাকে এসে বলেছিল ব্যাপারটা। আমি তো তখন একটা ঘোরের মধ্যে। কী ঘটেছে বা আদৌ সেটা ঘটেছে কি না বিশ্বাস হচ্ছে না। আমি অতি সাধারণ একজন ক্রিকেটার। ছোটবেলায় লাইন দিয়ে টিকিট কেটে বাজিগর দেখেছি। শাহরুখের নতুন ছবি এলেই হলে ছুটতাম। কী সব দিন গিয়েছে! সেই বাজিগরের স্বপ্নে আমি আসতে পারি কোনও দিন স্বপ্নেও ভাবিনি। ভাবা যায় নাকি? শাহরুখের মতো মেগাস্টার যে আমার নামটা মনে রেখেছে, এই আমার কাছে যথেষ্ট।

প্র: আপনার তো ফাইনালটা খেলার কথাই ছিল না। কখন জানতে পারলেন, খেলতে হবে?
বিসলা: বালাজির চোট ছিল বলে ও ফাইনালটায় খেলতে পারবে না শুনেছিলাম। কিন্তু তাই বলে ব্রেন্ডনের বদলে আমি খেলব, ভাবিনি। ব্রেন্ডন বড় তারকা। কোনও দিন আমার মতো ক্রিকেটারের সঙ্গে ওর তুলনা হয় না। আমি ওর বিকল্প হতে পারি না। কিন্তু টিম কম্বিনেশনটা এমন ছিল যে বিদেশিদের কাউকে বসতে হত। গৌতম আমাকে টিম মিটিংয়ের আগেই বলেছিল, তৈরি থেকো। আর টিম মিটিংয়ে ঠিক হয়, খেলছি।

প্র: ওরা ১৯০ করল, তার পর প্রথম ওভারেই ক্যাপ্টেন গম্ভীর আউট। চাপ ছিল না? মনে হয়নি, এ বার আর হল না?
বিসলা: নিশ্চয়ই চাপ ছিল। গৌতমের উইকেট বিগ উইকেট। মনে হয়েছিল, আর উইকেট দেওয়া যাবে না। পাওয়ার প্লে-র ওভারগুলো একটু ধরে খেলব কি না ভাবছিলাম। কিন্তু জাক উইকেটে এসেই বলল, ‘কুল’। ওই একটা শব্দ মনে খুব সাহস দিয়েছিল। তার পর জাক বলেছিল, নিজের স্বাভাবিক খেলা খেলো। গুটিয়ে থেকো না। জানতাম পাওয়ার প্লে-তে ৫০ রান দরকার। সে ভাবেই খেলেছি।
চেন্নাইয়ে ট্রফি জয়ের রাতে সস্ত্রীক বিসলা। ছবি: উৎপল সরকার
প্র: কখন মনে হল, জেতা সম্ভব?
বিসলা: যখন ১০০ পেরিয়ে গেল স্কোরটা। উলটো দিকে কে বল করছে তখন আর মাথায় ছিল না। আউট হয়ে যাওয়ার সময় সেঞ্চুরি হয়নি বলে একটু খারাপ লাগছিল। শেষ ওভারটার সময় অসম্ভব টেনশনে ভুগছিলাম। যদি না জিততে পারতাম, কী হত জানি না। আমি ম্যান অব দ্য ম্যাচ হতে পারি, কিন্তু আসল কাজটা শেষ দিকে কিন্তু করেছে সাকিব আর মনোজ। মনোজ যে চার দুটো মেরেছে, জাস্ট ব্রিলিয়ান্ট।

প্র: বলা হচ্ছে আপনার উত্থান রূপকথাসদৃশ। কোথাও ছিলেন না, সুযোগই পাচ্ছিলেন না। অথচ এখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জাতীয় দলে ঢোকার অন্যতম দাবিদার?
বিসলা: প্রথম কথা, সুযোগ পাচ্ছিলাম না কথাটা ঠিক নয়। কেকেআর ম্যানেজমেন্ট আমাকে অনেক সুযোগ দিয়েছে। আর জাতীয় দলে ঢোকার স্বপ্ন সবার থাকে, আমারও আছে। ২০০২ আন্ডার নাইনটিন বিশ্বকাপে জাতীয় দলে ছিলাম আমি। কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক, কেরিয়ারটা যে ভাবে এগোনো উচিত ছিল, হয়নি। এটাই আমার জীবনের সেরা ইনিংস। কিন্তু জাতীয় দলে ঢোকার জন্য যথেষ্ট কি না জানি না। এটুকু বলতে পারি, এই ইনিংসটা আমাকে নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। স্বপ্নটা দেখতে শুরু করেছিলাম ফাইনালের আগে। যখন ম্যাচের আগে টিম মিটিংয়ে ভিডিওতে বাবা-মাকে দেখে খুব ভাল লেগেছিল।
বিসলার নানা দিক
যখন বোলার
হাসিম আমলা ক ভলথাটি বো বিসলা ০। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের স্কোরবোর্ডে এ রকমই একটা তথ্য আছে। ২০০২ অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে যখন বোলার বিসলা আউট করেছিলেন আমলাকে। নিজের ক্রিকেট জীবনের শুরুতে পেস বোলিংটাই করতেন বিসলা। পরে কিপিং গ্লাভস হাতে তুলে নেন।
টিম নেই
গত বছর কোনও রঞ্জি দলে খেলার সুযোগ হয়নি বিসলার। চোটের জন্য প্রথমে ছিটকে গিয়েছিলেন। তার পর আর কোনও রঞ্জি দলে সুযোগ পাননি। শেষ পর্যন্ত ঢাকায় গিয়ে লিগ ক্রিকেট খেলতে হয় তাঁকে।
স্ত্রীর জন্য
বিসলার স্ত্রী অর্পিতার সঙ্গে বিজয় দাহিয়া এবং রজত ভাটিয়ার স্ত্রীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তিন বান্ধবীকে অনেক সময়ই এক সঙ্গে দেখা যায়। বিসলার কেকেআরে থাকার পিছনে তাঁর স্ত্রীর বড় ভূমিকা আছে। বান্ধবীদের কাছাকাছিই থাকতে চেয়েছিলেন বিসলা-পত্নী।



প্র: কী রকম?
বিসলা: ম্যাচের আগে আমাদের যে ভিডিওটা দেখানো হয়, সেটা গোটা টিমটার কাছে ছিল একেবারে অন্য রকম অভিজ্ঞতা। কেউ ভাবেইনি, ও রকম একটা কিছু আমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে। ভিডিওটা দেখে আমি খুব অবাক হয়েছিলাম। তাতে বাবা মা বলছিলেন, ছেলে ভাল করলে কেন ওদের ভাল লাগবে। জীবনে খুব বেশি কিছু করিনি, যাতে ওরা খুশি হতে পারেন। সে জন্যই মনে হচ্ছে, কিছু করতে পেরেছি। আর একজনের কথাও বলতে হবে।

প্র: কে?
বিসলা: আমার স্ত্রী অর্পিতা। এমনিতে আসে না, ফাইনালের আগেই ম্যাচ দেখতে এসেছিল। ফাইনালের আগের দিন ছিল আবার ওর জন্মদিন। কেক-টেক কাটা হয়েছিল, উপহারও দিয়েছিলাম। তখনও তো জানতাম না, ফাইনালে খেলছি। এই ইনিংসের পরে বলছি, এটা আমার বউয়ের জন্য ওর জন্মদিনের উপহার। যখন কিছুই হচ্ছিল না জীবনে, অর্পিতা সব সময় বলেছে তুমি পারবে। এই ‘পারবে’টা ফাইনালের দিনও বলেছিল। সে জন্যই এই ইনিংসটা ওর জন্য।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.