সন্দেশ নয়, সন্দেক। কেক আর সন্দেশের মিশেলে বাঙালি মিষ্টি-শিল্পীর তুরুপের তাস।
এবং আজ, মঙ্গলবার শহরে শাহরুখ-বাহিনীকে কুর্নিশ জানাতে তা-ই হতে চলেছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর টেক্কা। কিংবা বলা যায়, ভাই শাহরুখ ও তাঁর ‘বাজিগর’দের মিষ্টি-মুখ করাতে ‘সন্দেক’ই দিদির সেরা পছন্দ।
অতএব উত্তর কলকাতার সিমলেপাড়ার পৌনে দু’শো বছরের দোকানের কর্তা প্রশান্ত নন্দীকে সটান ফোনে ধরেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ ‘ব্র্যান্ড কলকাতা’র ক্রিকেটদলকে আপ্যায়ন তথা নাগরিক সংবর্ধনার উদ্যোক্তা খাতায়-কলমে কলকাতা পুরসভা হলেও নিমন্ত্রণের আসল কর্ত্রী যে মুখ্যমন্ত্রী নিজে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
মমতার ফোন পাওয়ার পরে সাবেক কলকাতার হেভিওয়েট মিষ্টিস্রষ্টা নকুড় নন্দীর উত্তরপুরুষ প্রশান্তবাবুও শুরু করে দিয়েছেন বলিউডের বাদশা ও তাঁর আইপিএলজয়ী সেনানীদের মুখমিষ্টি করানোর তোড়জোড়। তৈরি হচ্ছে আড়ে-বহরে ২৭/২৭ ইঞ্চির মেগাসাইজ ‘কেক’-এ মাখামাখি ৩০ কেজির সন্দেশ আপাদমস্তক লোভনীয় সরের চাদরে মোড়া! মুখ্যমন্ত্রীর নিজস্ব একটি ‘ছোট্ট’ নির্দেশের সুবাদে যার বাড়তি একটা অলঙ্কারও জুটছে। ছানা মোটা করে স্ট্রবেরি শাঁস মিশিয়ে কেকের আইসিংয়ের আদলে সন্দেকের উপরে লেখা থাকবে, ‘করব, লড়ব, জিতব রে।’
কী থাকছে অতিকায় মিষ্টিটির ভিতরে?
এখনই পুরোটা ভাঙছেন না প্রশান্তবাবু। শুধু বলছেন, “এটাকে আসলে সন্দেশের একটা পাঁচতলা বাড়ি বলতে পারেন।”
কোন কোন তলায় কী কী আসবাবে সাজবে পাঁচতলা সন্দেক?
সোমবার রাত পর্যন্ত যা সিদ্ধান্ত, একতলায় থাকছে দোকানের বিশেষ সৃষ্টি মালাইরোলের পুরের ঈষৎ কাঁচাপাক সন্দেশ। দোতলায় জাফরানগন্ধি ‘দেলখোশ।’ তিনতলায় অনেকটা পুরু গোলাপগন্ধি পারিজাত। চার ও পাঁচতলায় ফের দেলখোশ ও মালাইরোলের পাক। সূত্রের খবর: সন্দেকের গর্ভে চকোলেট দেওয়ার কথাও এক বার ভাবা হয়েছিল। কিন্তু ভরদুপুরের গরমে চকলেট গলে একশা হতে পারে বলে মুখ্যমন্ত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করেন। সুতরাং সে পরিকল্পনা পত্রপাঠ বাতিল হয়।
সন্দেককে কী ভাবে এত মনে ধরল মুখ্যমন্ত্রীর? দিন কুড়ি আগে মহাকরণে মার্কিন বিদেশ-সচিব হিলারি ক্লিন্টনকে আপ্যায়নের মিষ্টি-তালিকায় প্রশান্তবাবুদের কাঁচাগোল্লা-পারিজাত ঠাঁই পেয়েছিল। আর অতি সম্প্রতি ‘পরিবর্তনের’ বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে মমতাকে ‘সন্দেক’ উপহার দেন প্রশান্তবাবুরা। সম্ভবত তখন থেকেই মমতা এর গুণগ্রাহী হয়ে ওঠেন। উত্তর কলকাতায় সন্দেশের আঁতুরঘরে এই ‘কেক’-এর কদর বেড়েছে বছর দশেক হল। সাহিত্যিক শঙ্কর এর নাম দেন সন্দেক।
শাহরুখ-গম্ভীরদের হাতে একেবারে তরতাজা জিনিসটি যাতে তুলে দেওয়া যায়, সে জন্য সোমবার গভীর রাতে প্রশান্তবাবুর নেতৃত্বে ওয়ার্কশপে বসে গিয়েছেন নেপাল, তমাল, পাড়ুই, গণেশরা। প্রশান্তবাবুর গলাতেও উত্তেজনার আঁচ “হাজার হোক, কলকাতার সম্মানের প্রশ্ন তো!” |