প্রথম চিৎকারটা উঠল রাত সাড়ে দশটা নাগাদ। বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে পাঁচ নম্বর গেটের কাছে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তৈরি মঞ্চে উঠে দাঁড়ালেন গৌতম গম্ভীররা। সঙ্গে সঙ্গে জনতার মধ্যে আনন্দের বিস্ফোরণ।
রাত বারোটা পেরিয়ে এল আর একবার চিৎকার। যখন বাইপাসের ধারে পাঁচতারা হোটেলে এসে ঢুকলেন দলের মালিক। শাহরুখ খান।
কেকেআর-এর বাদশা যখন বিমানবন্দরের কাছের অভ্যর্থনা মঞ্চে উঠলেন, তখনও ভিড় উপচে পড়ছে। শাহরুখ বললেন, “গৌতম গম্ভীরের নেতৃত্বে কলকাতা কাপ জিতেছে। আমি খুব খুশি। এই অভ্যর্থনার জন্য মমতাজিকে ধন্যবাদ। কেকেআর-এর সমর্থকদের ধন্যবাদ। তবে এখন আর ‘করব লড়ব জিতব রে’ নয়। এখন ‘করেছি, লড়েছি জিতেছি রে’।” সঙ্গে ছিলেন জুহি চাওলাও। তিনি বলেন, “কলকাতার মানুষদের জন্য এই কাপ।” শাহরুখ-জুহির ছবি তোলার জন্য ততক্ষণে হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে। মিনিট দশেক থাকার পর হোটেলের দিকে এগোন শাহরুখরা। এই মঞ্চ এর আগে দেখেছে গম্ভীরদের নিয়ে বাঁধভাঙা আনন্দ। |
সেখানে তখন যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও সাংসদ সুব্রত বক্সী, নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর, ঘরের ছেলে লক্ষ্মীরতন শুক্ল, ফাইনালের নায়ক মনবিন্দর সিংহ বিসলা একে একে মঞ্চে উঠলেন। মঞ্চে দাঁড়িয়ে গম্ভীর ঘোষণা করলেন, “আমি কলকাতার ছেলে।” একই ছবি হোটেলের সামনেও। চার দিকে কর্ডন করে হোটেলকে প্রায় দুর্গ করে ফেলা হয়েছে নিরাপত্তার খাতিরে। তার মধ্যেই গম্ভীরদের দেখে ফেটে পড়ল মানুষ। সব চেয়ে বেশি চিৎকার শোনা গেল গম্ভীরকে দেখে। লক্ষ্মীও পেলেন উষ্ণ অভ্যর্থনা। পরে আপ্লুত লক্ষ্মী বলছিলেন, “কেকেআর-কে জিতিয়ে শহরে ফেরার পরে যে অভ্যর্থনা পেলাম, তার সঙ্গে কিছুর তুলনা চলে না। ভারতের হয়ে খেলার সময়ও এমন আবেগ দেখিনি।” |
আর গম্ভীর? আবেগের হাতগুলো এড়িয়ে কোনও রকমে হোটেলের ঘরে ঢুকে গিয়েছিলেন। পরে ডিনারের জন্য লবিতে নেমে ফের ‘মবড’। এগিয়ে এল অটোগ্রাফের খাতা আর অজস্র ক্যামেরা। বেগতিক দেখে এগিয়ে এলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। বললেন, ওঁকে যেতে দিন, প্লিজ।
জয়ী দলকে স্বাগত জানাতে বিশেষ কেক রেখেছিলেন হোটেল কর্তৃপক্ষ। চলছিল পার্টিও। তবে সর্বত্র একই প্রশ্ন, বাদশা কখন আসছেন? এর মধ্যেই গম্ভীর জানালেন ট্রফি নিয়ে কলকাতায় নামার অনুভূতির কথা। বললেন, “আগেও বলেছিলাম, কলকাতা আমার শহর। আজ সেটা আরও ভাল ভাবে বুঝলাম। আজ তো বুঝতেই পারছিলাম না, দিল্লিতে আছি, না কলকাতায়!”
রবিবার রাত থেকে যে বিজয়োৎসব শুরু হয়েছিল, তা যেন থামতেই চাইছে না। তারই রেশ ধরে মঙ্গলবার সকালে রয়েছে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। সেখানে অবশ্য বিদেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে বেশির ভাগই থাকতে পারছেন না। প্রায় সকলেই চেন্নাই থেকে দেশে ফেরার বিমান ধরেছেন। তবে পড়শি দেশের তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান থাকছেন। সাকিব নিজেই তা আনন্দবাজারকে জানালেন। আর থাকছেন দলের মনোবিদ রুডি ওয়েবস্টার। |