চিতাবাঘের ‘ডেরা’ বলেই পরিচিত শিলিগুড়ির অদূরে হাঁসখোয়া ও মুনি চা বাগানের মাঝে ৩৫ একরের সঙ্গতরাম চা বাগান। বছর দুয়েক আগে বাগানের জলাধারে একটি চিতাবাঘের শাবক পড়ে গিয়ে মারা যায়। তার পরে জলাধারের চারপাশের উচ্চতা তিন ফুট বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তাতে যে কোনও কাজ হয়নি তা ফের বোঝাল সোমবারের ঘটনা।
এ দিন ভোরে জলাধারে পড়ে যায় একটি চিতাবাঘ। জলাধারটির গভীরতা প্রায় ২০ ফুট। চার ফুট মতো জল ছিল। জলের খোঁজে সেখানে পড়ে আর উঠতে পারছিল না চিতাবাঘটি। কোনমতে মাথা তুলে গর্জন করছিল। সোমবার সকাল ৭টা নাগাদ ওই ডাক শুনে শ্রমিকরা ছুটে যান। খবর দেন বন দফতরে। জাল, মই, ঘুমপাড়ানি গুলি-সহ সরঞ্জাম নিয়ে বন দফতরের কর্মীরা পৌঁছন দুপুরে। দুপুর পৌনে ১টা নাগাদ চৌবাচ্চায় একটি মই নামিয়ে দেওয়া হতেই বিদ্যুৎগতিতে চিতাবাঘটি তা বেয়ে উঠে চা বাগানের ঝোপের মধ্যে দিয়ে মিলিয়ে যায়। |
বাগানটি যে চিতাবাঘের পরিচিত ‘ডেরা’ সেটা এদিনের ঘটনায় স্পষ্ট হওয়ার পরে চা বাগানের মালিক আশিস পাল লোহার জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। তিনি বলেন, “বন্যপ্রাণির কোনও ক্ষতি চাই না। কিন্তু চিতাবাঘের জন্য আমার চা বাগানে শ্রমিকেরা কাজ করতে ভয় পান। ফের যাতে এমন না-ঘটে সেজন্য চৌবাচ্চার চারপাশ কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে দেব ঠিক করেছি।”
এ দিন সকালে বাগানের কর্মী রাজকুমার নাগাশিয়া প্রথম চিতাবাঘটিকে দেখেন। গুদাম লাগোয়া জলাধারে সেটি ভাসছিল, মাঝেমধ্যেই হুঙ্কার ছাড়ছিল। পেটে জল ঢুকে ক্রমশই যে সেটি কাহিল হয়ে পড়ছে তা বুঝতে পেরে রাজকুমার তখনই ফোন করেন মালিককে। সুকনার ওয়াইল্ড লাইফ স্কোয়াডের রেঞ্জ অফিসার কাঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শে জলাধারে কয়েকটি কাঠের লগ ফেলার ব্যবস্থা করেন তিনি, যাতে কাঠের লগের উপরে উঠে চিতাবাঘটি বেঁচে থাকতে পারে। তাতে কিছুটা সুবিধা হলেও চিতাবাঘটি জলাধার টপকাতে পারছিল না। তার পরে সাজ-সরঞ্জাম নিয়ে ওই বাগানে পৌঁছে গিয়েছেন বনকর্মীরা। চা বাগানের কর্মী রাজকুমার নাগাশিয়া বলেন, “গুদাম থেকে স্প্রে মেশিন বার করার সময়ে হুঙ্কার শুনি। মনে হল, ভোরবেলা জল খেতে নেমে আটকে পড়েছে।” ওয়াইল্ড স্কোয়াডের রেঞ্জ অফিসার বলেন, “এই চা বাগানে বেশ কয়েকটি চিতাবাঘের আনাগোনা রয়েছে। এই চিতাবাঘটি অল্পবয়সী। কোনও ভাবে নিচে পড়ে যায়। তবে সময়ে খবর পাওয়ায় বাঁচানো গিয়েছে। মই বেয়ে নিজেই চা বাগানের ঝোপে ঢুকে পড়েছে।” চিতাবাঘ চৌবাচ্চায় পড়ে যাওয়ায় এদিন এলাকার কয়েকশো বাসিন্দা সেখানে হাজির হন। লাগোয়া সিংহিঝোরা চা বাগানের কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করেন, চিতাবাঘের অত্যাচারে তাঁরা অতিষ্ঠ। রোজই সন্ধ্যায় হামলা হয়। ছাগল, মুরগি টেনে নিয়ে যাচ্ছে। |