চার বছর ধরে সংস্কারের কাজ চললেও কিছুতেই হাল ফিরছে না সরস্বতী নদীর।
এক অংশে নদী থেকে নোংরা-আবর্জনা সরিয়ে, পাড় বাঁধিয়ে দেওয়া হলেও কয়েক মাস পরে নদী সেই আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। কচুরিপানায় ভরা অংশটি দেখলে বোঝা দায় যে সেটি একটি নদী। অথচ প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় নদী সংস্কারের কাজ চলছে ‘জোরকদমে’।
সেচ দফতরের আধিকারিক সুমন্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সরস্বতী নদী সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিল গত ২০০৮ সালের এপ্রিল মাস নাগাদ। তা পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় শেষ করার কথা। তবে আশা করছি ২০১২ সালের মধ্যে সংস্কারের কাজ শেষ হয়ে যাবে।”
সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৭-এর ৩ জানুয়ারি প্রশাসন মারফত প্রথম সংস্কার অভিযান চলে। সেচ দফতর নদী সংস্কারের ভার নিয়েছিল। ২০০৮-এর ৫ এপ্রিল সেচমন্ত্রী সুভাষ নস্কর ও অর্থমন্ত্রী অসীম দাসগুপ্ত ও হাওড়া-হুগলির জেলা সভাধিপতির উপস্থিতিতে সরস্বতী নদী সংস্কারের কাজ শুরু হয়। হাওড়ার বালুহাটি থেকে সাঁকরাইল পর্যন্ত কাজ শুরু হয়েছিল। সুমন্তবাবু জানান, সরস্বতী নদী সংস্কারের জন্য ৩২ কোটি ১০ লক্ষ টাকা অনুমোদিত হলেও কাজের জন্য ২২ কোটি পাওয়া গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত যা কাজ হয়েছে, তাতে খরচ হয়েছে ১২ কোটি টাকা। চার বছর ধরে হাওড়া-হুগলি দুই জেলার বিভিন্ন জায়গায় কাজ চললেও নদী এখনও বেহাল বলে অভিযোগ। |
সংস্কার হওয়ার আগে |
সংস্কারের পরে |
|
কোথাও নদী মজে নালায় পরিণত হয়েছে, কোথাও সংস্কারে হওয়া অংশ ফের আবর্জনা, কচুরিপানায় ভরে গিয়েছে। জমি-ঘরবাড়ি উচ্ছেদের ঝামেলায় সংস্কারের কাজ কোথাও থমকেই গিয়েছে। হাওড়ার সাঁকরাইল থেকে হুগলির ত্রিবেণী পর্যন্ত প্রায় ৭৭ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীর দক্ষিণ অংশ, সিঙ্গুরের নসিবপুর থেকে সাঁকরাইল পর্যন্ত এখনও সংস্কারের দাবি জানানো হচ্ছে।
ডোমজুড়ের ভাণ্ডারদহে সরস্বতী নদীর কাছেই বাড়ি শম্ভু পালের। তিনি বলেন, “আমাদের এখানে নদীর পাড় বাঁধানোর কাজ চলছে সিমেন্টের স্ল্যাব দিয়ে। কিন্তু সরস্বতী নদীর অধিকাংশ সংস্কার হওয়া জায়গা তো আগের চেহারায় ফিরে এসেছে। কচুরিপানায় আবর্জনা, পশুর মৃতদেহ এসে আটকে থাকছে। দূষণ ছড়াচ্ছে। তার কী হবে!” এ ব্যাপারে সুমন্তবাবু বলেন, “সংস্কারের পরে দেখভালের অভাবেই এই সমস্যা হচ্ছে। বেহাল অংশে ফের সংস্কার হবে।”
‘সরস্বতী নদী বাঁচাও কমিটি’র সম্পাদক বাপি ঠাকুর চক্রবর্তীর অভিযোগ, “অবৈজ্ঞানিক ভাবে সংস্কারের কাজ চলছে। সংস্কারের কাজ যথাযথ না হওয়ায় বিষয়টি সেচ দফতর এবং সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়াকে বারবার জানাই। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। গোটা বিষয়টি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছি।” সাঁকরাইলের তৃণমূল বিধায়ক শীতল সর্দার বলেন, “সরস্বতী নদী সংস্কারের কাজ চলছে। ধীরে ধীরে সবই হবে। একটু সময় লাগবে।”
|
ডোমজুড়ে তোলা নিজস্ব চিত্র |