|
|
|
|
প্রবন্ধ ১... |
কেন্দ্র পিতা, রাজ্য সন্তান, শুরু থেকেই |
ভারত একটি যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু, নামেই। রাজ্যগুলি সব বিষয়েই কেন্দ্রের মুখাপেক্ষী।
এর পিছনে এক দীর্ঘ ইতিহাস আছে। লিখছেন
অমিতাভ গুপ্ত।
প্রথম পর্ব |
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্যমন্ত্রিত্বের এক বছর হল। গত এক বছরে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যে বেশ কয়েক বার দ্বৈরথে গিয়েছেন। দীনেশ ত্রিবেদীর রেল বাজেট নিয়ে লড়াই নয়। কেন্দ্রীয় সরকারের একতরফা কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে লড়াই। কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার জলবণ্টন চুক্তি রূপায়ণ করে ফেলেছিল প্রায়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা না করেই। মমতার ঘোর আপত্তিতে তা স্থগিত হয়েছে। ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টার নিয়ে অ-কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীরা যে আপত্তি তুলেছেন, মমতা তাতেও শামিল। এবং, যোজনা কমিশনের কাছ থেকে তিনি রাজ্যের জন্য খানিক বাড়তি বরাদ্দ আদায় করতে পেরেছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে মমতার এই লড়াইয়ের অন্তর্নিহিত কারণ হয়তো নেহাতই জোট রাজনীতির সমীকরণ। কেন্দ্রীয় সরকারকে চাপে রাখার জন্য যা করা দরকার, মমতা করেছেন। হয়তো তাঁর এই লড়াইয়ের মধ্যে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় চরিত্র বজায় রাখার তাগিদের বিন্দুমাত্র নেই। |
|
কিন্তু, গত এক বছরে বিভিন্ন কারণে যুক্তরাষ্ট্র কথাটি মূলধারার রাজনৈতিক বিতর্কে ঘুরেফিরে এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে, ভারত কি আদৌ যুক্তরাষ্ট্রের ধর্ম পালন করছে? না কি, কেন্দ্রীয় সরকার অসমঞ্জস ক্ষমতার অধিকারী হয়ে রয়েছে? দ্বিতীয়টিই যথার্থ উত্তর। এবং, কেন ভারতে কেন্দ্রীয় সরকার অসমঞ্জস ক্ষমতার অধিকারী, তার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। সংবিধানে বলা নেই যে ভারত একটি যুক্তরাষ্ট্র বা ফেডারেশন। কিন্তু, এই বিশেষ শব্দটুকু না থাকলেও ভারত যে আসলে একটা যুক্তরাষ্ট্রই, আ ইউনিয়ন অব স্টেটস, তা নিয়ে সংবিধানে দ্বিমত নেই। বস্তুত, ‘ফেডারেশন’ শব্দটি যে নেই, তার একটা ইতিহাস রয়েছে।
ভারতের সংবিধান এক দিনে রচিত হয়নি। তার একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া ছিল। কয়েক দিন আগেই সি বি এস ই-র ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে অম্বেডকরের একটা ‘কার্টুন’ নিয়ে বিপুল হইচই হল। কার্টুনটা সংবিধান রচনাকে কেন্দ্র করে অম্বেডকর একটা কচ্ছপের পিঠে চেপে সংবিধান তৈরির পথ অতিক্রম করছেন। সংবিধান তৈরির কাজটা কতখানি ধীর গতিতে হয়েছিল, কার্টুনটা সেই গল্প বলতে চেয়েছিল। কেন সংবিধান এত ধীর গতিতে লেখা হল, তা ভিন্ন প্রশ্ন। এখানে উল্লেখ্য, সংবিধান রচনার দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় ‘ফেডারেশন’ বা ‘যুক্তরাষ্ট্র’ নিয়ে প্রভূত আলোচনা হয়েছিল।
‘ফেডারেশন’ শব্দটি এক বিশেষ ধরনের রাষ্ট্রকাঠামোর প্রতি নির্দেশ করে (বা, সংবিধান তৈরি করার সময় অম্বেডকর এবং অন্যান্য নেতারা তেমন ভেবেছিলেন), যেখানে প্রদেশগুলি অনেক বেশি স্বয়ম্ভর, এবং দেশের বাঁধুনি খানিক শিথিল। এমন কাঠামোয় তাঁদের আপত্তি ছিল। অম্বেডকর বলেছিলেন, ভারত নামক রাষ্ট্রটি থেকে কোনও প্রদেশের বিচ্ছিন্ন হওয়ার কোনও অধিকার থাকবে না। তাঁর চিন্তাধারাটি খানিকটা এই রকম ছিল ভারত আসলে একটা বৃহৎ যৌথ পরিবার, এত দিনে যার একটা নিজস্ব বাড়ি হয়েছে। এ বার সে বাড়িতে মানিয়েগুছিয়ে থাকতে হবে, কিন্তু সেই বাড়ি ভাগ করা চলবে না মোটেই।
‘যুক্তরাষ্ট্র’ শব্দটার সঙ্গে জড়িয়ে ছিল একটা অন্য আশঙ্কা সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে ক্ষমতা বণ্টনের আশঙ্কা। স্বাধীনতা অর্জনের আগে পর্যন্ত গোটা চল্লিশের দশক ধরেই মুসলিম লিগ মুসলমানপ্রধান অঞ্চলগুলিতে কার্যত স্বশাসনের দাবি জানিয়ে এসেছিল। সেই দাবিকে ঠিক ভাবে দেখলে সেটা এক যুক্তরাষ্ট্রেরই দাবি, যেখানে প্রদেশের হাতে অনেকখানি স্বায়ত্তশাসনের ক্ষমতা, এবং কেন্দ্র অপেক্ষাকৃত দুর্বল। সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে শাসনক্ষমতা ভাগ করে নিতে কংগ্রেসের নীতিগত আপত্তি ছিল। ফলে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবটিই কংগ্রেসের কাছে বিপজ্জনক বোধ হয়েছিল। বস্তুত, সংবিধান রচনা নিয়ে যখন নিয়মিত বৈঠক চলছে, প্রাদেশিক নেতারা সেই বৈঠকে নিজেদের মতামত জানাচ্ছেন, তখনও খুব জোরালো ভাবে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর দাবি ওঠেনি। কারণ, ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের দাবিটি তখনও প্রদেশ বনাম কেন্দ্রের ক্ষমতা বণ্টনের জায়গা থেকে ওঠেনি, যুক্তরাষ্ট্রের ধারণাটি হিন্দু-মুসলমান ক্ষমতা বণ্টনের অঙ্কেই দেখা হয়েছিল। ফলে, কংগ্রেসের অন্দরমহলে শক্তিশালী কেন্দ্রের ধারণা নিয়ে অস্বস্তি তেমন ছিল না। এটা খানিক স্বীকৃতই ছিল যে স্বাধীন দেশে যে কেন্দ্র তৈরি হবে, তা প্রদেশগুলির তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী হবে এবং প্রদেশগুলির সঙ্গে তার কার্যত পিতা-সন্তানের সম্পর্ক থাকবে।
|
৩ জুন, ১৯৪৭ |
দেশ ভাগের সিদ্ধান্ত হল এই দিন। সিদ্ধান্তটি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আমূল বদলে দিল। দেশ ভাগের অভিঘাত কী বিপুল হতে চলেছে, সম্ভবত সেই দিন প্রথম বার সম্যক ভাবে বুঝতে পারলেন কংগ্রেস নেতারা। কংগ্রেসের যে দুটি কমিটি সংবিধান, ক্ষমতার বণ্টন ইত্যাদি প্রশ্ন বিবেচনা করছিল, সেই ইউনিয়ন কনস্টিটিউশন কমিটি আর ইউনিয়ন পাওয়ার্স কমিটি-র জরুরি বৈঠক বসল। সেই বৈঠকগুলির শেষে দেখা গেল, কংগ্রেসের অবস্থান আগের থেকে অনেক কঠোর হয়েছে। স্বাধীন ভারতে কেন্দ্র যে বিপুল শক্তিশালী হবে, একেবারে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হল। কেন? নেহরু বললেন, এমন একটা সময় স্বাধীনতা আসছে, যখন শক্ত হাতে হাল না ধরলে আগামী ছ’মাসেই এই দেশটা সম্পূর্ণ লণ্ডভণ্ড হয়ে যেতে পারে। কে এম পনিক্কর বললেন, প্রদেশগুলির হাতে অধিকতর ক্ষমতা ছাড়ার প্রশ্নই নেই। যখন সব কিছু ঠিকঠাক চলে, তখন ওই সব যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদি নিয়ে মাতামাতি করা যায়, কিন্তু এই টালমাটাল সময়ে কেন্দ্রকেই শক্ত হাতে হাল ধরতে হবে।
সময়টা সত্যিই অসামান্য ছিল। ১৯৪৩ সালের মন্বন্তরে শুধু বাংলাতেই প্রায় ত্রিশ লক্ষ মানুষ মৃত। দেশের সর্বত্র খাদ্যের অভাব, টাকা দিলেও অনেক সময় খাবার পাওয়া যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি খারাপ, যুদ্ধের ধাক্কায় সমাজের নৈতিকতার আগলগুলোও শিথিল। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আঁচ ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। কলকাতা, নোয়াখালি, পঞ্জাব, যুক্ত প্রদেশ সর্বত্রই আগুন জ্বলছে। বোঝা যাচ্ছে, সমস্যা ক্রমে আরও বাড়বে। এর সঙ্গে যোগ হবে দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতে যোগ দিতে বাধ্য করার প্রক্রিয়া, বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতাকে ঠেকানোর লড়াই। কাজেই, দেশ যখন দ্বিখণ্ডিত অবস্থায় স্বাধীন হল, তখন কেন্দ্রীয় সরকারের শক্তি নিয়ে সংশয়ের অবকাশ থাকল না।
স্বাধীনতা অর্জনের পরেও সংবিধান রচনার কাজটি চলছিল। যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে বিতর্কও ফুরোয়নি। স্বাধীনতার পরে বিতর্কটি ঠিক ভাবে দানা বাঁধল। কার এক্তিয়ার কতখানি, তা নির্দিষ্ট করতে তিনটি তালিকা তৈরি হল কেন্দ্রীয় তালিকা, রাজ্য তালিকা এবং যুগ্ম তালিকা। তালিকা তৈরির নিয়ম সহজ যে বিষয়গুলি সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকবে, সেগুলি কেন্দ্রীয় তালিকার অন্তর্ভুক্ত হবে, যেগুলি শুধুমাত্র প্রদেশের এক্তিয়ারে থাকবে, সেগুলি রাজ্য তালিকায়। আর, যে বিষয়গুলিতে কেন্দ্র এবং প্রদেশ, উভয়েরই এক্তিয়ার থাকবে, তা অন্তর্ভুক্ত হবে যুগ্ম তালিকার। কোন বিষয়টি কোন তালিকায় যাবে, তা নিয়ে বিতর্ক বড় কম হয়নি। একটা উদাহরণ দিই। শিক্ষা প্রদেশগুলির এক্তিয়ারে থাকবে, তাতে শিক্ষামন্ত্রী মৌলানা আজাদের ঘোর আপত্তি ছিল। তিনি মনেই করতেন, অন্তত কেন্দ্রীয় পরামর্শের জায়গাটুকু থাকলে গোটা দেশের শিক্ষিত সমাজ একই রকম ভাবে ভাবতে শিখবে। নেহরুর তাতে আপত্তি ছিল না। কিন্তু, ঔপনিবেশিক আমল থেকেই শিক্ষা প্রদেশগুলির এক্তিয়ারে ছিল। তিনি সেই প্রথা ভাঙতে সম্মত হলেন না। তবে স্থির হল, উচ্চশিক্ষা, কারিগরী শিক্ষার মতো বেশ কয়েকটি বিষয় কেন্দ্রীয় তালিকার অন্তর্ভুক্ত হবে। তর্ক হয়েছিল বহু বিষয় নিয়েই। বোম্বাই প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের প্রবণতায় বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, তা হলে প্রাদেশিক তালিকাটাকে বাতিল করে দিলেই তো হয়, শুধু কেন্দ্রীয় তালিকা আর যুগ্ম তালিকাই না হয় থাকুক! যুক্ত প্রদেশের প্রধানমন্ত্রী গোবিন্দবল্লভ পন্থ বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা যদি ভাবেন, রাজ্যগুলিকে কষে লাগাম পরিয়ে তার পর তাদের কেন্দ্রের সঙ্গে সহযোগিতা করতে বাধ্য করা হবে, এবং রাজ্যগুলি সেই সহযোগিতা করবে, তা হলে তাঁরা ভুল ভাবছেন।
|
যুক্তির ভিন্ন সুর |
এখানে একটা কথা নজর এড়ানোর নয়। স্বাধীনতার আগে এবং পরে, রাজনৈতিক ভাবে শক্তিশালী কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তার যুক্তি কিন্তু ভিন্ন। স্বাধীনতার আগে যুক্তি ছিল, কেন্দ্র শক্তিশালী না হলে সদ্যস্বাধীন দেশটাকে বাঁচিয়েই রাখা যাবে না। আর, স্বাধীনতা অর্জনের পর যে যুক্তি এল, তা মূলত কার্যকারিতার। কেন্দ্রীয় নেতারা তখন বললেন, নতুন দেশকে অভীষ্ট পথে চালাতে গেলে তার জন্য কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা প্রয়োজন, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রয়োজন। স্বাধীনতার আগের যুক্তি নিয়ে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে কার্যত কোনও ভিন্ন স্বর ছিলই না। স্বাধীনতার পরের যুক্তি অনেক বেশি প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছিল।
স্বাধীনতার পর রাজনৈতিক এককেন্দ্রিকতার সমর্থনে যে যুক্তি ব্যবহৃত হল অর্থাৎ সমগ্র দেশকে অভীষ্ট পথে চালনা করার জন্য কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন রয়েছে ঠিক এই যুক্তিটিই স্বাধীনতা অর্জনের ঢের আগে থেকে ব্যবহার করেছিলেন কংগ্রেস নেতারা। অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সমর্থনে। ১৯৩৭-৩৮ সালেও এই যুক্তি ব্যবহারের উদাহরণ পাওয়া সম্ভব। কিন্তু, সে আলোচনায় যাওয়ার আগে একটা অন্য কথা উল্লেখ করব। রাজস্বের কোন খাতের টাকা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে যাবে, আর কোন খাতের টাকা প্রাদেশিক সরকারগুলি পাবে, তা স্বাধীনতা অর্জনের আগেই স্থির হয়ে গিয়েছিল। আয়কর, কর্পোরেশন ট্যাক্স, আমদানি এবং উৎপাদন শুল্কের মতো শাঁসালো খাতগুলি থাকল কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। আর, কৃষি রাজস্ব, ভূমি রাজস্ব, বিক্রয় করের মতো অপেক্ষাকেৃত কম লাভজনক রাজস্ব খাতগুলি প্রদেশগুলির ভাগে পড়ল। অর্থাৎ, স্থির হয়েই গেল, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আর্থিক নিয়ন্ত্রণ মুখ্যত কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকবে। লক্ষণীয়, এই ব্যবস্থা মানতে কোনও প্রদেশই আপত্তি করেনি। আপত্তি উঠেছিল কার ভাগে কতটা পড়বে, তা নিয়ে। কিন্তু, সে প্রশ্ন ভিন্ন। অর্থনৈতিক এককেন্দ্রিকতা নিয়ে নীতিগত প্রশ্ন ওঠেনি।
এর একটা ঔপনিবেশিক ঐতিহ্য রয়েছে। ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন রাজস্ব বণ্টনের এমন ব্যবস্থাই করেছিল। কিন্তু, সেটুকুই সব নয়। আরও অন্তত দুটো বড় কারণ ছিল। এক, স্বাধীনতা অর্জনের পূর্বলগ্নে যখন এই হিসেবপত্র হচ্ছিল, তখন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে ঘোর অনিশ্চয়তা ছিল। ফলে, সব প্রদেশই কেন্দ্রীয় সরকারের ছত্রছায়ায় থাকাকেই শ্রেয় জ্ঞান করেছিল।
আর দুই, সব প্রদেশই নীতিগত ভাবে মেনে নিয়েছিল, স্বাধীনতার পর নতুন ভারতে প্রতিটি প্রদেশেরই তার প্রয়োজন অনুযায়ী টাকা পাওয়ার অধিকার থাকবে। এই প্রয়োজনভিত্তিক অর্থনীতির ধারণাটি বিশেষ আলোচনার দাবি রাখে। কোন প্রদেশ থেকে কতখানি রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে, সেই অনুপাতে রাজস্ব বণ্টন না করে, কোন প্রদেশের উন্নয়নের জন্য কতখানি টাকা দরকার, তাকে রাজস্ব বণ্টনের মাপকাঠি করার মধ্যে বিলক্ষণ একটি বিপ্লব ছিল। উন্নয়ন কী, তা অবশ্যই কেন্দ্রীয় সরকার স্থির করে দিত। কার কত টাকা চাই, সেটাও। কাজেই, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ছাড়া এই ব্যবস্থাটি কার্যকর হওয়া সম্ভব ছিল না।
প্রয়োজনভিত্তিক বণ্টন এবং সমগ্র দেশকে উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্যে চালিত করার যৌথ তাগিদ ভারতে অর্থনৈতিক এককেন্দ্রিকতার পথ তৈরি করে দিল। (চলবে)
|
ভারতীয় সংবিধানে স্বাক্ষর করছেন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। ১৯৫১। |
|
|
|
|
|