সম্পাদকীয় ২...
নেপালের সঙ্কট
নেপাল আবার রাজনৈতিক সঙ্কটের আবর্তে। সঙ্কটের কারণ দেশকে চার বছরেও একটি সংবিধান দিতে না পারা। রাজতন্ত্রের বিদায়ের পর নেপালের বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তি যে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা জনমনে জাগ্রত করিয়াছিল, নির্বাচিত গণপরিষদ একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধান প্রণয়ন করিয়া তাহা পূরণ করিবে, এমন প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু কেবল ক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রতিযোগিতায় গণপরিষদ হইতে একের-পর-এক সরকার গঠিত হইতে থাকে, বারংবার পরিষদের মেয়াদ সম্প্রসারিত করিয়াও সংবিধানের মৌলিক ধারাগুলি লইয়া কোনও ঐকমত্য অর্জিত হইতে পারে নাই। বাধ্য হইয়া প্রধানমন্ত্রী বাবুরাম ভট্টরাই গণপরিষদ বাতিল করিয়া দিয়া আগামী নভেম্বরে তাহার পুনর্নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করিয়াছেন। পরিষদ তথা পার্লামেন্টের অন্যান্য বৃহৎ দলগুলি (বিশেষত নেপালি কংগ্রেস ও সংযুক্ত মার্ক্সবাদী লেনিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টি) প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক ও এক্তিয়ার-বহির্ভূত আখ্যা দিয়া তাঁহারা আন্দোলনের হুমকি দিয়াছেন। কাঠমন্ডু সহ দেশের নানা স্থানে বিভিন্ন দলের সমর্থকদের মধ্যে ইতস্তত সংঘর্ষও শুরু হইয়াছে।
নির্বাচিত গণপরিষদ তথা পার্লামেন্টে মাওবাদীদের একক গরিষ্ঠতা থাকিলেও নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা ছিল না। রকমারি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তরাই অঞ্চলের মধেসি সংগঠনগুলির সমর্থন লইয়া মাওবাদী বাবুরাম ভট্টরাইয়ের প্রধানমন্ত্রিত্বে একটি দুর্বল ও জগাখিচুড়ি সরকার চলিতেছিল। কিন্তু সংবিধানে ১৪টি বা নিদেনপক্ষে ১০টি পৃথক প্রদেশে নেপালকে ভাগ করার যুক্তরাষ্ট্রীয় ক্ষমতাবিন্যাস লইয়া নেপালি কংগ্রেস এবং কমিউনিস্ট পার্টির সহিত মাওবাদী-মধেসিদের দ্বন্দ্ব তীব্র হয়। প্রধানত নেপালি অভিজাততন্ত্রের প্রতিনিধি নেপালি কংগ্রেস এবং কমিউনিস্টরা প্রদেশ বিভাজনের বিষয়টিকে নীতিগত ঐকমত্যের স্তরে বাঁধিয়া রাখিয়া একটা সংবিধান প্রণয়নের পক্ষপাতী। অন্য দিকে মাওবাদী ও মধেসিরা এই যুক্তরাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও এক্তিয়ারের বিভাজন আগাম নথিভুক্ত করাইতে ব্যগ্র। জাতীয় পার্লামেন্টের পাশাপাশি তাঁহারা ওই প্রদেশগুলির আইনসভাতেও সমান্তরাল নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষপাতী। এই বিরোধের নিষ্পত্তি না-হওয়াতেই প্রশাসনিক অচলাবস্থার সৃষ্টি। আর তাহারই জেরে গণপরিষদ বাতিল করিয়া নূতন করিয়া তাহার নির্বাচনের আয়োজন।
নূতন গণপরিষদ নির্বাচিত না-হওয়া অবধি আগামী ছয় মাস সরকার চালাইবে কে? মাওবাদীদের যে পরিষদীয় শক্তি গণপরিষদে ছিল, পরিষদ ভাঙিয়া দিলে তাহা অপ্রাসঙ্গিক হইয়া পড়ে। তখন কীসের জোরে বাবুরাম ভট্টরাই বা পুষ্পকমল দাহালরা নেপাল শাসন করিবেন? সেনাবাহিনীই বা সরকারের উপর মাওবাদীদের আধিপত্য শিরোধার্য করিবে কেন? সর্বোপরি নবনির্বাচিত গণপরিষদেও যে একটি দলেরই নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা থাকিবে, তাহার নিশ্চয়তা কী? না-থাকিলে সংবিধান প্রণয়নে ঐকমত্য তো আবারও অধরা রহিয়া যাইবে। তাই মনে হয়, সংবিধান রচনার কাজটি আর ফেলিয়া না-রাখিয়া চলতি গণপরিষদ হইতেই সম্পন্ন করিয়া ফেলা উচিত। নেপাল দরিদ্র দেশ। রাজনৈতিক অস্থিরতা সে দেশের উন্নয়নের সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করিয়া দিতে পারে। বিশেষত যখন রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে দীর্ঘ, রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়া প্রজাতন্ত্রের চৌকাঠ অবধি পৌঁছাইলেও নেপালের জনসাধারণ এখনও অভিজাততন্ত্রের ক্ষমতায় ফিরিবার ষড়যন্ত্র বানচাল করিবার শক্তি ও বিচক্ষণতা অর্জন করিয়া উঠিতে পারেন নাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.