রাজ্যও আগ্রহী আইন সংশোধনে
প্রোমোটারদের নিয়মে বাঁধতে নিয়ন্ত্রক চায় কেন্দ্র
সারা দেশে জমি-বাড়ি কেনাবেচার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতে একটি নিয়ন্ত্রক কমিটি চাইছে কেন্দ্র।
প্রস্তাবিত সেই ‘রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটি’ গঠনের জন্য তারা সংসদে বিল আনতে ইচ্ছুক। এ বিষয়ে রাজ্যগুলির মতামত জানতে চেয়েছে দিল্লি। অন্য দিকে জমি-বাড়ির বিষয়টি যৌথ তালিকাভুক্ত হলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় আইনের ঘেরাটোপের বিরুদ্ধে নয়। আবাসন দফতর তাই এই সংক্রান্ত রাজ্যের ১৯ বছরের পুরনো আইনটিকে এ বার কেন্দ্রের প্রস্তাবিত আইনের ধাঁচেই সাজাতে উদ্যোগী হয়েছে।
কেন্দ্রীয় আবাসন মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, আগামী কুড়ি বছরে এ দেশে প্রায় ৬৬ লক্ষ কোটি টাকা শুধু জমি-বাড়ির কারবারে লগ্নি হওয়ার সম্ভাবনা। অথচ জমি-বাড়ি কেনাবেচার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের স্বার্থরক্ষায় যথাযথ কোনও আইনি ব্যবস্থা এখনও এ দেশে নেই। সুতরাং এই মুহূর্তে আবাসনশিল্পে আরও স্বচ্ছতা আনা জরুরি বলে
কেন্দ্র মনে করছে।
আর সেই তাগিদেই টেলিফোন, বিদ্যুৎ, বিমা, তেল বা পাটের মতো আবাসনেও একটি সর্বভারতীয় নিয়ন্ত্রক ও নজরদারি সংস্থা গঠনের উদ্যোগ শুরু হয়েছে, যারা রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করবে। প্রস্তাবিত ওই ‘রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটি’র শাখা থাকবে প্রতি রাজ্যে। মন্ত্রকের এক সূত্রের কথায়, “খতিয়ে দেখার জন্য প্রস্তাবটির খসড়া আমরা সব রাজ্যকে পাঠিয়েছি। অধিকাংশ রাজ্য ইতিবাচক মতামত দিয়েছে।”
পশ্চিমবঙ্গও সহযোগিতার হাত বাড়াতে তৈরি। রাজ্য আবাসন দফতরের এক সূত্র বলেন, কেন্দ্র ওই পথে হাঁটলে রাজ্য সরকারও ১৯৯৩-এর ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল বিল্ডিং (রেগুলেশন অফ প্রোমোশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ট্রান্সফার বাই প্রোমোটার্স)’ আইন সংশোধন করবে। তাতে ‘অসাধু’ প্রোমোটারদের শাস্তিদানের বিবিধ বিধান থাকলেও গত ১৯ বছরে কার্যত কারও বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকী, কলকাতা, হাওড়া, শিলিগুড়ি ও নিউটাউন-রাজারহাট ছাড়া কোথাও আইন প্রয়োগে সরকারি বিজ্ঞপ্তি-ই জারি হয়নি বলে আবাসন-সূত্রের খবর।
কী আছে ওই আইনে? ’৯৩-এর আইন মোতাবেক, প্রোমোটারকে এককালীন ১০ হাজার টাকা দিয়ে আবাসন দফতরে নাম নথিভুক্ত করাতে হবে। প্রতি বার বাড়ি তৈরির আগে নক্শা, চুক্তিপত্র-সহ যাবতীয় নথিতে দফতরের আগাম সম্মতি নেওয়া আবশ্যক। শুধু তা-ই নয়, ফ্ল্যাটের মাপ অনুযায়ী প্রতি বার নির্দিষ্ট ফি জমা দিতে হবে।
কিন্তু আইন প্রয়োগ না-হওয়ায় এ সবের অধিকাংশই স্রেফ কাগজে-কলমে রয়ে গিয়েছে। প্রোমোটারদের অনেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফি জমা না-দিয়েই পুরসভা থেকে নক্শার অনুমোদন পেয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ। আইনের পরিধিও যথেষ্ট নয়। রাজ্যের আবাসনমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের কথায়, “কে প্রোমোটার, কে মালিক, কে কত টাকায় কোথায় কাকে ফ্ল্যাট বেচছে বা কিনছে বর্তমান আইনে এ সব দেখার অধিকার পুরসভার নেই। এ বার পুরসভাকে সেই এক্তিয়ার দেওয়ার কথা হচ্ছে।” মন্ত্রীর মতে, এর ফলে নক্শা অনুমোদনের সময়েই সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। “নিজেদের প্রশ্নের যথাযথ জবাব পেলেই পুরসভা নকশা অনুমোদন করবে, নচেৎ নয়।” বলেন অরূপবাবু।
‘রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটি’ গঠন প্রসঙ্গে সব রাজ্যের মতামত পাওয়ার পরে কেন্দ্র প্রস্তাব চূড়ান্ত করবে। সেই মতো বিল আনা হবে সংসদে। তার পরে হবে আইন। কেন্দ্রীয় প্রস্তাবকে ‘স্বাগত’ জানিয়ে রাজ্যের এক আবাসন-কর্তা বলেন, “প্রোমোটারদের নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৯৩-এ পশ্চিমবঙ্গে যে আইন তৈরি হয়েছিল, প্রস্তাবিত রেগুলেটরি অথরিটি তা কার্যকর করতে সাহায্য করবে। কেন্দ্রের প্রস্তাব আইনের আকারে এলে আমরাও রাজ্যের আইনে কিছু অংশ সংশোধন করব। তা কার্যকর করতে আবাসন দফতরের সঙ্গে পুর-নগরোন্নয়ন দফতরের সমন্বয় বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন ওই কর্তা। আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে কড়া শাস্তির সংস্থানেরও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
যাঁদের ‘নিয়ন্ত্রণে’ এই প্রয়াস, সেই প্রোমোটারেরা একে কী ভাবে দেখছেন? প্রোমোটারদের সর্বভারতীয় সংগঠন ‘কনফেডারেশন অফ রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া’র শাখা ‘ক্রেডাই বেঙ্গলের’ সভাপতি হর্ষবর্ধন পাটোডিয়াও উদ্যোগটিকে সমর্থন জানিয়েছেন। পাটোডিয়া জানান, তাঁদের সদস্য ১৬০ জন, পশ্চিমবঙ্গে গৃহনির্মাণ ক্ষেত্রে যাঁদের সম্মিলিত অংশ বড়জোর ১৪%-১৫%। “ক্রেতাদের স্বার্থরক্ষা একান্ত দরকার। শক্তপোক্ত আইন চাই। সারা পৃথিবীতেই আছে। আমাদের থাকবে না কেন?” মন্তব্য পাটোডিয়ার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.