সিগন্যাল অমান্য করে আচমকা সামনে চলে আসা একটি সাইকেলকে দেখে বাস থামানোর চেষ্টা করেছিলেন চালক। কিন্তু ব্রেক কষলেও শেষরক্ষা হয়নি। সাইকেলটি সামনে থেকে সরে গেলেও কিছু দূর এগিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় বাসটি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দুই যাত্রী ও কন্ডাক্টরের। কিছুক্ষণের মধ্যে এক মহিলা-সহ ওই দুই যাত্রীর দেহ টেনে বার করা গেলেও কন্ডাক্টরের দেহ আটকে ছিল উল্টে যাওয়া বাসের নীচে। বহুক্ষণের চেষ্টায় ক্রেন দিয়ে বাসটি সরানোর পরে তাঁর দেহটি বার করতে সক্ষম হন দমকল ও পুলিশের কর্মী এবং অন্যান্যরা।
সোমবার সকাল আটটা নাগাদ মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে টালিগঞ্জ থানা এলাকার শরৎ বসু রোড ও রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের সংযোগস্থলে। সরকারের তরফে দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারপিছু ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এ দিন দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। |
পুলিশ জানায়, মৃতেরা হলেন তপতী দত্ত (৬২), তুলসীদাস বন্দ্যোপাধ্যায় (৬০) ও বাবাই মিস্ত্রি। তপতীদেবী ও তুলসীদাসবাবু ওই বাসের যাত্রী ছিলেন, বাবাইবাবু কন্ডাক্টর। এসএসকেএম হাসপাতালে তাঁদের মৃত ঘোষণা করা হয়। বাসটির চালক পলাতক।
পুলিশ জানায়, সোনারপুর-বটানিক্যাল গার্ডেন রুটের ডব্লিউবিএসটিসি-র ওই বাসটি (ডব্লিউবি ২৫সি৫০৯১) গড়িয়াহাট মোড় থেকে বাঁ দিকে ঘুরে রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে ঢোকে। দেশপ্রিয় পার্কে শরৎ বসু রোডের মোড়ের কাছে ট্রাফিক সিগন্যালে তখন সবুজ আলো। সিগন্যাল খোলা থাকায় বাসটি রাসবিহারী মোড়ের দিকে এগোয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে পুলিশ জেনেছে, আচমকাই বাসটির সামনে চলে আসে একটি সাইকেল। সাইকেলচালক সিগন্যাল অমান্য করেছিলেন বলে অভিযোগ তাঁদের। সাইকেলটিকে বাঁচাতেই ব্রেক কষতে বাধ্য হন বাসচালক। দ্রুত গতিতে কিছুটা এগোনোর পরেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাঁ দিকে কাত হয়ে উল্টে যায় বাসটি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, ক্রেন দেরিতে আসায় তাঁরাই বাসের জানলার কাচ ভেঙে দুই রক্তাক্ত যাত্রীর দেহ উদ্ধার করেন। কিন্তু বাবাইবাবুর দেহ এমন ভাবে বাসের নীচে আটকে গিয়েছিল, কিছুতেই সেটি টেনে বার করা যাচ্ছিল না। ফোন করে পুলিশকে তাড়াতাড়ি ক্রেন পাঠানোর কথা বলেও কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ তাঁদের। পরে ক্রেন এলে পুলিশ ও দমকলকর্মীদের সাহায্যে বাবাইবাবুর ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ বার করা হয়।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, সোনারপুরের বাসিন্দা তুলসীদাসবাবু দুর্ঘটনাস্থলের কাছে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। এ দিন অফিসেই যাচ্ছিলেন তিনি। যাদবপুরের বাসিন্দা তপতীদেবী যাচ্ছিলেন শিবপুরে তাঁর বোনের বাড়িতে। বাবাইবাবুও সোনারপুরের বাসিন্দা। অন্য যে যাত্রীরা আহত হয়েছেন, তাঁদের আঘাত গুরুতর নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। ওই বাসটিতে তখন বেশি যাত্রী ছিলেন না বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানিয়েছেন।
পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এ দিন মহাকরণে বলেন, “মৃতদের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই দুঃস্থ পরিবারের। ক্ষতিপূরণ শুধু ওই তিন জনের পরিবারকেই দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।” |