‘করব, লড়ব, জিতব’ বলে দৃষ্টান্ত গড়লেন এঁরাও
বোর্ডের প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা দিতে দিতেও জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন ‘মহাদেবী বিড়লা গার্লস হাই স্কুল’-এর ছাত্রীটি। তার আগে অসহ্য পেটের ব্যথায় কুঁকড়ে গিয়েছিল শরীরটা। মাঝে মধ্যেই এমন হয়। একেবারে বিনা নোটিসে। সেই ব্যথাতেই ফ্যাশন স্টাডিজের প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষায় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। মনস্তত্ত্বের প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষার দিন সকালে এমন ব্যথা শুরু হয় যে, সময়মতো স্কুলে পৌঁছতেই পারেননি। কিন্তু এ সব কিছুই গায়ে মাখেননি ওই ছাত্রী। মনের জোরে চালিয়ে গিয়েছেন পড়াশোনা। সেই হার-না-মানা জেদের জোরে সোমবার সিবিএসই দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় ৬৫.৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন জ্যোৎস্না মুন্দ্রা।
তিনি একা নন। কঠিন অসুখের বেড়া টপকে এই পরীক্ষায় ভাল নম্বর পেয়েছেন ‘ভারতীয় বিদ্যাভবন’ স্কুলের ছাত্রী শ্রেয়া বরও। বাণিজ্যের ছাত্রীটি ৮৪.৬ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন। ২০০৮-এ ‘হজকিন্স লিম্ফোমা’ নামে এক কঠিন অসুখে আক্রান্ত হন তিনি। সেই বছরই দশম শ্রেণির পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু পারেননি। শরীরের কিছু কিছু গ্ল্যান্ড ফুলে উঠত, সেই সঙ্গে আসত ধুম জ্বর। শ্রেয়ার মা শিপ্রা বর বলেন, “মাসে দু’বার প্রচণ্ড জ্বর আসত। পড়া মনে রাখতে পারত না। কোনও চিকিৎসক ওর অসুখটা ধরতে পারছিলেন না। এক জন তো যক্ষ্মার চিকিৎসা শুরু করে দেন।” টানা দু’বছর অসুখের সঙ্গে লড়াই করেছেন। ১২টা কেমোথেরাপি আর ২৩টা রেডিওথেরাপি করতে হয়েছে। শ্রেয়া দশম শ্রেণির পরীক্ষা দেন ২০১০-এ। এখনও একটানা বেশিক্ষণ পড়তে পারেন না তিনি। নিয়মিত মুম্বইয়ে যেতে হয় চেক-আপের জন্য।
শ্রেয়া বর জ্যোৎস্না মুন্দ্রা
দিনে আট-দশ ঘণ্টা পড়ে যাঁরা পরীক্ষায় ভাল ফল করেন কিংবা সম্ভাব্য মেধা তালিকায় যাঁদের নাম প্রথমের দিকে থাকে, তাঁদের থেকে শ্রেয়া-জ্যোৎস্নাদের লড়াইটা অনেক বেশি কঠিন। কিন্তু তাঁরা তেমনটা কখনওই মনে করেননি। কারণ, দু’জনেই নিজেদের অসুস্থতাকে বিশেষ পাত্তা দিতে নারাজ।
জ্যোৎস্নার মা মীনাক্ষি মুন্দ্রা জানান, প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে থেকে মেয়ের পেটে মাঝেমাঝেই ব্যথা শুরু হয়। তা এমন ভয়াবহ আকার নিত যে, যখন তখন সংজ্ঞা হারাতেন জ্যোৎস্না। মীনাক্ষিদেবী বলেন, “কলকাতায় চিকিৎসায় তেমন ফল না মেলায় ওকে হায়দরাবাদে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা জানান, ওর বৃহদন্ত্রে একটা সমস্যা রয়েছে। অস্ত্রোপচারও করতে হয়।” তার পরে জ্যোৎস্নার অসুস্থতা অনেকটা কমে গিয়েছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসে বোর্ডের প্র্যাক্টিক্যালের সময়ে ফের অজ্ঞান হয়ে যান জ্যোৎস্না। মীনাক্ষিদেবী বলেন, “হঠাৎ কী হয়ে যায়, সেই আশঙ্কায় লেখা পরীক্ষা চলাকালীন আমি ওর পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে বসে থাকতাম।”
জ্যোৎস্না নিজে অবশ্য একটুও উদ্বিগ্ন নন। সোমবার নিজের বাড়িতে বসে তিনি বলেন, “এখন তো আমি আগের থেকে অনেক ভাল আছি। পেট ব্যথা হলে কিছুদিন একটা ওষুধ খেতে হয়। ডাক্তারবাবু বলেছেন অসুখটা আস্তে আস্তে সেরে যাবে।” অসুস্থতার সময়ে স্কুলের অধ্যক্ষা-সহ শিক্ষিকারা যে ভাবে সাহায্য করেছেন, সে জন্য তাঁদের অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানাচ্ছেন ওই তরুণী। এ বার ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়তে চান জ্যোৎস্না।
শ্রেয়া চান বি কম পড়তে। পাশাপাশি সিএ এবং সিএস-এর জন্যও প্রস্তুত হচ্ছেন তিনি। দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় তিনি বাংলায় ৯৪, ইংরেজিতে ৯১। হিসাবশাস্ত্র, বিজনেস স্টাডিজ, অর্থনীতিতেও ভাল নম্বর পেয়েছেন। তবে গণিতে ফলটা আশানুরূপ না-হওয়ায় শ্রেয়ার মন খারাপ। এখন তাঁর লক্ষ্য একটা ভাল কলেজে ভর্তি হওয়া। এ জন্য সেন্ট জেভিয়ার্সই তাঁর প্রথম পছন্দ। শিপ্রাদেবীর অবশ্য চিন্তা অন্য কারণে। তিনি বলেন, “একটানা বেশিক্ষণ পড়তে পারে না। কী করে এত কিছু একসঙ্গে সামলাবে জানি না!” শ্রেয়া অবশ্য প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী। শ্রেয়া বলেন, “এখন আমি সুস্থ। রোগের পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা কম বলেই জানিয়েছেন ডাক্তারবাবুরা। এখন শুধু একটু শ্বাসকষ্ট আর থাইরয়েডের সমস্যা হয়েছে। ডাক্তারবাবু বলেছেন, যোগব্যায়াম করলে সেগুলোও কমে যাবে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.