পুষ্টির ঘাটতি জেদ দিয়ে পূরণ করতে চায় কিশোর ‘চ্যাম্প’
র্থই অন্তরায়।
শুধু টাকার অভাবেই হয় তো তাইল্যান্ড যাওয়া হবে না মহম্মদ ফারুকের। যোগ দিতে পারবে না ইন্দো-তাই আন্তর্জাতিক ক্যারাটের আসরে। অলিম্পিকে যাওয়ার, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্নে হয় তো বাধা পড়বে!
সেন্ট পলস মিশন স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ফারুক। বাবা গাড়ি চালাতেন। বছর দু’য়েক আগে তিনি মারা যাওয়ার পর থেকে অভাবের সংসারে অনটন চরমে উঠেছে। কোনও কোনও দিন শুধু এক বেলা খাওয়া জোটে, তা-ও ডাল-রুটি। তবু হাল ছাড়তে নারাজ ফারুক। পুষ্টির ঘাটতি সে মেটাতে চায় অদম্য জেদের জোর দিয়ে।
ফারুকের এই হার না-মানা জেদকেই বছর কয়েক আগে কুর্নিশ জানিয়েছিল ‘দ্য টেলিগ্রাফ স্কুল অ্যাওয়ার্ডস ফর এক্সেলেন্স’। ‘দ্য বেস্ট স্পোর্টস পার্সন’ নির্বাচিত হয় সে। তা ছাড়া, ‘ন্যাশনাল ওপেন ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপ’-সহ জাতীয় স্তরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বহু বার প্রথম বা দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে। কিন্তু শুধু জেদ দিয়ে আর লড়াই জিততে পারছে না ফারুক। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় যেতে পারছে না অর্থের অভাবে।
৬ জুন তাইল্যান্ডের ব্যাঙ্ককে বসছে ক্যারাটের আন্তর্জাতিক আসর। ফারুক এখনও পাসপোর্টের টাকাই জোগাড় করতে পারেনি। যাওয়া-আসা, থাকা-খাওয়া, সে তো বহু দূরের কথা।
মহম্মদ ফারুক
শুধু ফারুকই নয়, হতাশা গ্রাস করছে তার কোচ এম এ আলিকেও। ক্যারাটের সর্বোচ্চ স্তর পার করা ‘টেনথ্ ডান’ আলি বলছিলেন, “ছেলেটা ভাল করে খেতে পায় না। তবু জেদ ধরে আছে, তাইল্যান্ড যাবেই। প্রথম হবেই। দু’বেলা ডাল-ভাত খেয়ে ক্যারাটের সর্বোচ্চ শিখরে ওঠা অসম্ভব! শক্তি-স্ট্যামিনায় ঘাটতি হবেই। ফারুক কিন্তু সে কথা মানতে নারাজ।” পদ্মপুকুর সি আই টি রোডের ধারে মুসিদুল ইসলাম রোডে ফারুকের বাড়ি। মায়ের আনা কয়েকশো টাকা ছাড়া সংসারে কোনও উপার্জন নেই। তবু প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে ফারুক। পাশে কোচ রয়েছেন, সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে বন্ধুরাও।
কোচ-বন্ধুরাই মাঝেমধ্যেই ফারুককে দুধ-ডিম কিনে দেয়। অন্য সময়ে সেই আধপেটা ডাল-রুটিই সম্বল! কোচ আলি আক্ষেপ করছিলেন, “ক্যারাটেতে ভাল করতে হলে সুষম খাদ্য খুবই জরুরি। সব সময় তো আমরা সাহায্য করতে পারি না। মনে হয়, হেরে যাচ্ছি।”
কী খেতে ভালবাসো? বিরিয়ানি? লাজুক হেসে ফারুকের জবাব, “না, ডিম সেদ্ধ, ফল, দুধ আর চিকেন স্টু। যে দিন স্যার বা বন্ধুরা দু’টো ডিম, চার পিস মাখন পাঁউরুটি আর চারটে কলা কিনে দেয়, সে দিন আরও বেশি প্র্যাক্টিস করি। স্যার বলেছেন, তুই অলিম্পিকের কথা ভাব। আমরা তোর পাশে আছি।”
কিন্তু বিদেশে যাওয়া? সে তো অনেক টাকার ব্যাপার!
জেদি ছেলে এ বার নিষ্প্রভ হয়ে আসে। “ভাবছি সোনার মেডেলগুলো বিক্রি করে দেব। তাইল্যান্ড না গেলে কী করে আরও বড় ‘চ্যাম্প’ হব? মেডেলগুলো রেখে কী লাভ!” কিন্তু মেডেলে যে সোনা-রুপো খুব বেশি থাকে না? “অনেকগুলো মেডেল আছে। বড় বড় ট্রফি আছে। তা-ও হবে না?” ফারুকের গলায় হতাশা।ফারুকের কথা রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রকে বললে তিনি মহাকরণে আশ্বাস দেন, “বাংলা থেকে বহু ছেলেমেয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারাটে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে বিদেশে যায়। আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা ভাবে বিচার করে প্রয়োজন মতো সাহায্য করি। এই ছেলেটির দক্ষতা থাকলে রাজ্য সরকার নিশ্চয়ই তার পাশে দাঁড়াবে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.