কিছু দূর অন্তর অন্তর রাস্তায় বড় বড় গর্ত। সংস্কারের অভাবে উঠে গিয়েছে কালভার্টও। কোথাও রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ, আলাদা করা যাচ্ছে না রাস্তা আর পার্শবর্তী জমিকে। বোলপুর-ইলামবাজার ভায়া মির্জাপুর রাস্তার এই বিপর্যস্ত অবস্থায় এলাকাবাসীর ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। সমস্যায় পড়ছেন নিত্যযাত্রী থেকে স্থানীয় স্কুল পড়ুয়া, জরুরী পরিষেবা ও পণ্য পরিবহণের যানবাহন-সহ পথচলতি মানুষ। অবিলম্বে সংস্কারের কাজ শুরু না হলে বর্ষায় ওই রাস্তা ভয়াবহ আকার নেবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বিষয়টি বার বার প্রশাসনের নজরে আনলেও কোনও পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না বলে দাবি করেছেন তাঁরা। অথচ ব্যবহারের দিক থেকে ওই রাস্তার গুরুত্ব কোনও অংশেই কম নয়।
ওই রাস্তা থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে জাতীয় সড়ক ২বি। জাতীয় সড়কের গায়ে সম্প্রতি নতুন রাজ্য সরকারের প্রস্তাবিত ‘শিল্প উদ্যান’-এর সিমেন্টের ভিত্তিপ্রস্তর। সংযোগকারী রাস্তা হিসেবে একদিকে রয়েছে গুসকরা স্কুলমোড় হয়ে বর্ধমান, অন্যদিকে বোলপুর শহর হয়ে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ। ওই রাস্তার সংযোগকারী রাস্তা শ্রীনিকেতেন হয়ে সিউড়ি এবং উল্টোদিকে ইলামবাজার হয়ে পানাগড়-মোরগ্রাম জাতীয় সড়কে ওঠে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় শতাধিক যাত্রীবাহী বাস চলাচলের পাশাপাশি হাজার খানেক পণ্যবাহী যানবাহনের নিত্যদিন আসা যাওয়া। শুধু তাই নয়, আদালত-হাসপাতাল-থানা-দমকলের মতো জরুরী পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে বোলপুর ও ইলামবাজার থানা এলাকার মানুষজন ওই রাস্তার উপরই নির্ভরশীল। তেমনি অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও হাট-বাজারের জন্যও ওই রাস্তায় নিত্য আনাগোনা বাসিন্দাদের। কিন্তু স্বাভাবিক কারণেই এমন এক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার বেহাল অবস্থা ক্ষোভ তৈরি করছে এলাকাবাসীর মধ্যে। বোলপুর-ইলামবাজার রাস্তার উপর মির্জাপুরের কাছেই রয়েছে প্রায় ১৫০ মিটার রাস্তাজুড়ে বড় বড় খানাখন্দ। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, পুরসভা, পঞ্চায়েত এবং পূর্ত বিভাগে (সড়ক) জানিয়েও কোনও সুরাহা হচ্ছে না। উপরন্তু সমস্যা বেড়েই চলেছে। নাকাল হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। |
স্থানীয় বাসিন্দা সনাতন পাল, স্কুল পড়ুয়া চুমকি দাস, বধূ রেজিয়া বেগম এবং বেসরকারি দফতরের কর্মী পল্টু কোনার-রা জানান, আশপাশের শতাধিক গ্রাম রয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, গর্ভবতী মহিলাদের বা কোনও মুমুর্ষু রোগীদের ওই রাস্তায় প্রাণ হাতে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পথের নাজেহাল অবস্থায় জরুরী পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন আধিকারিকেরাও। এমন কী জরুরী পরিষেবা দিতে গিয়ে, রাস্তার জন্য মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। আশঙ্কা করছেন এই অবস্থায় ওই রাস্তায় গাড়ি চালালে জরুরী পরিষেবা প্রদানকারী গাড়ি বা যন্ত্রাংশ অচিরেই বিকল হয়ে পড়তে পারে। বোলপুরের অগ্নি নির্বাপণ এবং জরুরী পরিষেবা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক শেখ আব্বাস বলেন, “সাম্প্রতিক কালে রাস্তা খারাপের জন্য বহু জায়গায় জরুরী পরিষেবা দিতে গিয়ে, মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে।”
বোলপুরের পুরপ্রধান সুশান্ত ভকতের আশ্বাস, “প্রয়োজনীয় সংস্কার করে অবিলম্বে রাস্তা সারানোর জন্য বোলপুর মহকুমার পূর্ত বিভাগকে চিঠি পাঠিয়ে আবেদন করছি।” রাইপুর-সুপুর পঞ্চায়েতের সামনে মুখ্য রাস্তার বেহাল দশায় ভোগান্তির কথা মেনে নিয়ে ওই পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান মীনা বিশ্বাস বলেন, “ওই রাস্তা পূর্ত দফতরের। বার বার আবেদন করলেও এখনও পর্যন্ত ইতিবাচক কিছু হয়নি। আমার সাধ্যমত সংস্কার আমি করছি।”
এ দিকে পূর্ত বিভাগের বোলপুর মহকুমার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার পার্থসারথি কুণ্ডু বলেন, “ওই রাস্তার উপর খুব চাপ। ওই রাস্তায় দীর্ঘস্থায়ী সংস্কারের জন্য পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ উদ্যোগী হচ্ছেন। ওয়ার্ক অর্ডারও হয়ে গিয়েছে। তাড়াতাড়িই কাজ শুরু হবে।” |