জমিদাতা পরিবারের সদস্যদের চাকরির জন্য প্রশিক্ষণের আশ্বাস দেওয়ায় ইস্কো সম্প্রসারণ এলাকায় পড়ে যাওয়া ধর্মস্থান সরিয়ে নিতে রাজি হয়েছেন গ্রামীবাসীরা। ওই ধর্মস্থানকে ঘিরে পাঁচিল তোলা যাবে না, এই দাবিতে বারবার ইস্কো সম্প্রসারণের কাজে বাধা দিয়েছেন বার্নপুরের পুরোষোত্তমপুরের বেশ কিছু বাসিন্দা। মাস তিনেক আগে দু’পক্ষকে নিয়ে একটি বৈঠক করেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তার পরেই গ্রামবাসী ও ইস্কো কর্তৃপক্ষের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনার পরে সমস্যা মিটেছে বলে জানা গিয়েছে।
পুরুষোত্তমপুরে ইস্কোর সম্প্রসারণ প্রকল্প এলাকার মধ্যে পড়ে যাওয়া ওই ধর্মস্থানটি ‘ঝোড়বুড়ি’ নামে পরিচিত। যদিও সেখানে কোনও মন্দির নেই। ইস্কোর আধুনিকীকরণের জন্য কর্তৃপক্ষ নাকড়াসোতা, পুরুষোত্তমপুর ও কুইলাপুর মৌজায় প্রায় ৩৯১ একর জমি অধিগ্রহণ করেন। ওই ধর্মস্থান অধিগৃহীত জমির মধ্যে পড়ে যায়। ইস্কো কর্তৃপক্ষ প্রকল্প এলাকায় পাঁচিল দিতে গেলে বাসিন্দারা বাধা দেন। তাঁদের দাবি, পুরনো এই ধর্মস্থানে তাঁরা নিয়মিত পুজো করেন। বাসিন্দারা দু’টি দাবিতে পাঁচিল তুলতে বাধা দেন। প্রথমত, তাঁদের ওই ধর্মস্থানে যাতায়াত করতে দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, সম্প্রসারণ প্রকল্পের জন্য যারা জমি দিয়েছেন তাঁদের কারখানায় চাকরি দিতে হবে। প্রায় তিন বছর ধরে গ্রামবাসীদের সঙ্গে ইস্কো কর্তৃপক্ষের টানাপোড়েন চলে। |
ইস্কো কতৃপক্ষের তরফে জানানো হয়, ধর্মস্থানটি স্থানান্তর না করা হলে আধুনিকীকরণের কাজ শেষ হবে না। কারণ সেখানে রেললাইন বসানো যাচ্ছে না। কোনও যন্ত্র বসানো যাচ্ছে না। সীমানা পাঁচিল দিতে না পারার জন্য কারখানার নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হচ্ছে। দুষ্কৃতীরা যন্ত্রপাতি চুরি করে নিয়ে পালাচ্ছে। কিন্তু গ্রামবাসীরা নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। এই অবস্থায় ফেব্রুয়ারিতে ইস্কো কর্তৃপক্ষ ধর্মস্থান সংলগ্ন অঞ্চলে জোর করে অস্থায়ী পাঁচিল তোলেন। কিন্তু সেখানে গ্রামবাসীদের পুজো দিতে যাওয়ার জন্য দরজা রাখা হয়। সম্প্রসারণ প্রকল্পের বাধা দূর করতে ইস্কো কর্তৃপক্ষ রাজ্যের শিল্পমন্ত্রীর দ্বারস্থ হন। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি আয়োজিত বৈঠকে ইস্কো কর্তৃপক্ষকে গ্রামবাসীদের স্বার্থরক্ষা করে সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ করতে বলেন শিল্পমন্ত্রী।
তার পরে গ্রামবাসীদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করে সমস্যা মেটানো হয়েছে বলে জানান ইস্কো কর্তৃপক্ষ। সংস্থার মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ভাস্কর কুমার বলেন, “জমিদাতা পরিবারের এক জন করে সদস্যকে চাকরির জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বাসিন্দারা আমাদের এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে ধর্মস্থান সরিয়ে নিতে রাজি হয়েছেন।” স্থানীয় বাসিন্দাদের তরফে ‘পুরুষোত্তমপুর জমিহারা কমিটি’ তথা ‘ভৈরবনাথ যজ্ঞেশ্বর জিউ ট্রাস্টি কমিটি’র সম্পাদক চন্দ্রশেখর রায়ও বলেন, “ইস্কো কর্তৃপক্ষ জমিদাতাদের চাকরির প্রশিক্ষণ দেবেন, এই আশ্বাস পেয়ে আমরা ধর্মস্থান সরাতে রাজি হয়েছি।” তিনি জানান, ২১ জুন প্রকল্প এলাকা থেকে সরিয়ে ওই ধর্মস্থান গ্রাম সংলগ্ন একটি মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে ঠিক হয়েছে। |