নিরীহ দেখতে দু’টি গাড়ি। একটি খানিকটা পুলিশের জিপ-এর মতো। অন্যটি মিনিবাসের আকারের। অপরাধ রুখতে আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেট এলাকায় এই দুই গাড়ি আমদানি করেছে পুলিশ।
গত সেপ্টেম্বরে এই কমিশনারেট গঠনের পরে পুলিশের পরিকাঠামো ঢেলে সেজেছে। তবে অপরাধের সংখ্যা কমেনি। খনি ও শিল্পাঞ্চলে গত কয়েক মাসে পরপর খুন-জখম, ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ নজরদারি চালানোর জন্য কয়েক সপ্তাহ আগেই পুলিশ পরীক্ষামূলক ভাবে শহরে নামিয়েছিল ‘হক’ (বাজপাখি)। বিশেষ বরাত দিয়ে তৈরি করানো এই গাড়িতে রয়েছে জোড়া ক্যামেরা। যে কোনও গণ্ডগোলে দ্রুত ব্যবস্থার জন্য ঘটনাস্থলে প্রয়োজনীয় নজরদারি চালাতে আনা হয়েছে এই গাড়ি। সম্প্রতি কমিশনারেটের তরফে শহরে আনা হয়েছে আরও একটি আধুনিক গাড়ি। ‘স্পট ইনভেস্টিগেশন ভেহিকল’ নামে মিনিবাসের আকারের এই গাড়িটির কাজ, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেই প্রাথমিক তদন্তের কাজ শুরু করা। তার জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় ব্যবস্থা এই গাড়িতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশকর্তারা। আজ, মঙ্গলবার এই গাড়িটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হওয়ার কথা। দু’টি গাড়ির ক্ষেত্রেই পুলিশের দাবি, দেশের অন্য কিছু বড় শহরে চললেও এ রাজ্যে এই ধরনের গাড়ি প্রথম এল আসানসোলেই। |
মাথায় পুলিশের লাল-নীল আলো লাগানো ‘হক’-এ দু’টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা রয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সেখান থেকে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে শহরের নানা ছবি পৌঁছে যাবে পুলিশ কন্ট্রোল রুম, প্রয়োজনে পুলিশ কমিশনারের ঘরে। এর ফলে প্রতি মুহূর্তে নানা ঘটনার উপর যেমন নজর রাখা যাবে, তেমনই ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশকর্মীদের উপরেও চোখ রাখতে পারবেন কর্তারা। পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনীয় পরামর্শও দিতে পারবেন তাঁরা। পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ জানান, পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকারের অনুমোদন থেকেই এই গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কমিশনার আরও জানান, ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে কন্ট্রোল রুমে পাঠাবে ‘হক’। তা দেখে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ওই গাড়ির একটি ক্যামেরা ১০০ মিটার ও অপরটি ৩০ মিটার দূর থেকে ছবি তুলতে পারে। স্বয়ংক্রিয় ভাবে দিক পরিবর্তনও করে সেগুলি। এই গাড়িতে চালক ছাড়াও থাকছেন এক জন প্রশিক্ষিত পুলিশ অফিসার ও দু’জন কনস্টেবল। রয়েছে একটি মনিটর ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। ক্যামেরায় তোলা ছবি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পুলিশ কন্ট্রোলরুম, প্রয়োজনে পুলিশ কমিশনারের কাছে পাঠানো হয়। কন্ট্রোলরুম থেকেই ‘হক’কে নানা নির্দেশ পাঠাতে পারেন পুলিশ-কর্তারা। এ ছাড়াও ঘটনাস্থলের যাবতীয় তথ্য ‘জিপিআরএস’ পদ্ধতিতে পুলিশকর্তাদের মোবাইল ফোনে পাঠানোর ব্যবস্থা রয়েছে।
অজয় নন্দ জানান, ঘন্টায় ১৪০ কিলোমিটার বেগে চলার সময়েও নিখুঁত ছবি পাঠাতে পারে ‘হক’। পরীক্ষামূলক ভাবে কিছু দিন ধরে শহরের নানা প্রান্তে চালানো হচ্ছে সেটি। পুলিশের দাবি, এখনও পর্যন্ত গাড়িটির কোনও প্রযুক্তিগত ত্রুটি ধরা পড়েনি। কিন্ত বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় সেটিকে নিরাপদ পরিসীমার মধ্যেই রাখা হচ্ছে। |
যে কোনও ঘটনার ক্ষেত্রে প্রাথমিক তদন্তের কাজ দ্রুত শুরু করার জন্য শহরে এসে পৌঁছেছে ‘স্পট ইনভেস্টিগেশন ভেহিকল’। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কোনও ঘটনার খবর পেলেই এই গাড়িটি পৌঁছে যাবে সেখানে। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই শুরু করা হবে প্রাথমিক তদন্তের কাজ। তার জন্য যা যা প্রয়োজন, সব রয়েছে এই গাড়িটিতে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই গাড়িতে রয়েছে ইন্টারনেট ও কম্পিউটরের ব্যবস্থা। আছে জেনারেটর। গাড়িটির চার পাশে রয়েছে প্রচুর জোরালো আলো। পুলিশের দাবি, এটি কার্যত একটি থানার ক্ষুদ্র সংস্করণ। কমিশনারেটের গোয়েন্দা দফতরের অধীনে থাকবে এই গাড়ি। গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকেরাও এই গাড়িতেই ঘটনাস্থলে যাবেন। কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগের এসিপি চন্দ্রশেখর বর্ধন জানান, আজ, মঙ্গলবার গাড়িটির উদ্বোধন হওয়ার কথা।
পুলিশ বলছে, অপরাধ রুখতে আপাতত এই তাদের ‘জোড়া ফলা’। আসল সময়ে কতটা কাজে আসে, তার পরীক্ষা অবশ্য এখনও বাকি। |
আসানসোলে ছবি তুলেছেন শৈলেন সরকার। |