ধান্য গবেষণা কেন্দ্র
নতুন প্রজাতির আমন চাষ নিয়ে উদ্যোগ
র্ষায় জলে ডুবে নষ্ট হওয়া থেকে ধান বাঁচাতে নতুন ধরনের আমন চাষে উদ্যোগী হয়েছে চুঁচুড়া ধান্য গবেষণা কেন্দ্র।
নতুন প্রজাতির এই আমন ধানের নাম ‘স্বর্ণ সাব-ওয়ান’। রাজ্যের কয়েকটি এলাকায় এই ধানের চাষ হচ্ছে গত তিনটি মরসুম ধরে। যে ধান অন্তত ১৫ দিন জলে ডুবে থাকলেও নষ্ট হবে না বলে আশ্বাস দিচ্ছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি, এই প্রজাতির ধানের ফলন বেশি। ভাতের স্বাদও যথেষ্ট ভাল। চাষিদের অভিজ্ঞতাও একই কথা বলছে।
তবে, এই নতুন প্রজাতির ধান ওই ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের কোনও আবিষ্কার নয়। ফিলিপিন্সের ‘আন্তর্জাতিক ধান্য গবেষণা কেন্দ্র’ একটি বিশেষ প্রকল্পে এই নতুন ধরনের ধানের চাষ বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে। যার মধ্যে রয়েছে ভারতও। ‘স্ট্রেস টলারেন্ট রাইস ফর পুওর ফার্মার্স ইন আফ্রিকা অ্যান্ড সাউথ এশিয়া’ (স্ট্রাসা) নামে ওই প্রকল্পেই এ রাজ্যে ‘স্বর্ণ সাব-ওয়ান’ প্রজাতির ধান চাষের প্রসার বাড়াতে চাইছে ধান্য গবেষণা কেন্দ্র।
চুঁচুড়া ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের যুগ্ম অধিকর্তা চিন্ময় কুণ্ডু বলেন, “এই চাষ কৃষকদের পক্ষে অত্যন্ত উপযোগী হবে। ইতিমধ্যেই চাষিদের কাছে ওই চাষ যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছে। স্বর্ণ প্রজাতির সঙ্গে সাব-ওয়ান জিন সংযুক্ত করে এই ধান তৈরি করা হচ্ছে। এর আরও কয়েকটি প্রজাতি নিয়ে গবেষণা হচ্ছে।”
কৃষি বিজ্ঞানীদের তত্ত্বাবধানে চলছে ভাতের স্বাদ পরীক্ষা। হুগলির বৈদ্যবাটিতে। ছবি: প্রকাশ পাল
কৃষি দফতর সূত্রের খবর, এ রাজ্যে ৪০-৪২ লক্ষ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়। তার মধ্যে সিংহভাগ জমিতে চাষ হয় ‘স্বর্ণ মাসুরি’ প্রজাতির। কেননা, এই প্রজাতির ধানের ফলন বেশি। কিন্তু বর্ষায় ৫-৭ দিন খেতে জল দাঁড়িয়ে গেলেই এই চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তা ছাড়া রয়েছে রোগপোকার আক্রমণও। সেই কারণে ‘স্বর্ণ মাসুরি’র পরিবর্তে ‘স্বর্ণ সাব-ওয়ান’ চাষে জোর দিতে চাইছেন কৃষি-বিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি, ‘স্বর্ণ সাব-ওয়ান’ ধানে রোগপোকার আক্রমণ অপেক্ষাকৃত কম। কীটনাশক কার্যত ব্যবহার করতে হয় না। স্বর্ণ-মাসুরির থেকে ১০-১৫ শতাংশ বেশি ফলন হয়।
ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে গত মরসুমেই ‘স্বর্ণ সাব-ওয়ান’ ধানের চাষ হয় হুগলির বৈদ্যবাটি, পাণ্ডুয়ার বেলেগ্রাম এবং বর্ধমানের ভাতারে। এ বার এই চাষ চলছে চুঁচুড়া-মগরা ব্লকের উত্তর সিমলা এবং নদিয়ার কৃষ্ণনগরেও। ওই গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানী সীতেশ চট্টোপাধ্যায় জানান, পরীক্ষামূলক ভাবে চাষিদের এই প্রজাতির ধান চাষ সম্পর্কে বোঝানো হচ্ছে। বীজও সরবরাহ করা হচ্ছে। এই চাষে উৎসাহিত হয়ে গত মরসুমে রাজ্যের চাষিদের থেকে প্রায় ৩৭ টন ‘স্বর্ণ সাব-ওয়ান’-এর ধানবীজ কিনেছে অসম সরকারও।
কী বলছেন চাষিরা?
সম্প্রতি বৈদ্যবাটি চক এলাকার কৃষক কেদারনাথ ঘোষের ১০ কাঠা জমিতে ‘স্বর্ণ সাব-ওয়ান’-সহ ১৫টি নতুন প্রজাতির আমন ধান চাষ করা হয়েছিল। তার মধ্যে যে দুই প্রজাতির ধান নিয়ে ওই এলাকার চাষিরা উৎসাহিত হন, তার মধ্যে রয়েছে ‘স্বর্ণ সাব-ওয়ান’। ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের এই উদ্যোগে সামিল হয়েছিলেন ফিলিপিন্সের ‘আন্তর্জাতিক ধান্য গবেষণা কেন্দ্র’-এর বিজ্ঞানী ডোনাল্ড ভিলানুয়েভা। একই পরীক্ষা হয় পাণ্ডুয়ার বেলেগ্রাম-সহ অন্যান্য জায়গাতেও।
কেদারনাথবাবু বলেন, “আমনের বীজ ফেলা হয় আষাঢ় মাসে। শ্রাবণে রোয়া হয়। ফসল ওঠে অঘ্রাণ-পৌষে। কিন্তু আমার জমিতে প্রতি বছর বর্ষায় বেহাল নিকাশির কারণে জল দাঁড়িয়ে ধান ডুবে নষ্ট হয়। স্বর্ণ সাব-ওয়ান কিন্তু দিব্যি বেঁচে গিয়েছে।” ওই এলাকার চাষি হারানচন্দ্র ধোলে, লক্ষ্মণ ঘোষ, চন্দ্রশেখর ঘোষ সকলেই কৃষি-বিজ্ঞানীদের জানিয়েছেন, ‘স্বর্ণ সাব-ওয়ান’ প্রজাতির ধানই তাঁরা চাষ করবেন। লক্ষ্মণবাবুর অভিজ্ঞতা বলছে, “গত খরিফ মরসুমে জমিতে জল দাঁড়িয়ে সব ধান নষ্ট হয়েছে। কিন্তু ২০ দিন জলের তলায় থেকেও বেঁচে গিয়েছে স্বর্ণ সাব-ওয়ান।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.