মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী এর আগে একাধিক বার বলেছেন। নতুন সরকারের বর্ষপূর্তির মধ্যে দাঁড়িয়ে এ বার তৃণমূল নেতৃত্ব আবার জানালেন, দলে ‘সিন্ডিকেট-রাজ’ ভাঙতে এবং ‘বেনো জল’-এর প্রবেশ ঠেকাতে কড়া হবেন তাঁরা। শনিবার দমদমের টাউন হলে তৃণমূলের রাজনৈতিক সম্মেলন হয়। সেখানে দলীয় নেতৃত্বের তরফে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়দু’-চার জনের জন্য যাতে গোটা দলের বদনাম না হয়, সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। যাঁরা ব্যক্তিগত শ্রীবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে তৃণমূল করতে আসছেন, তাঁদের ঠেকাতে হবে। দলের নাম করে তোলা আদায় বা সিন্ডিকেট করা চলবে না। রাজারহাট-নিউটাউন এলাকায় সিন্ডিকেট রাজের অভিযোগ বেশি। সেই প্রেক্ষিতে ওই এলাকার অদূরে দমদমে সভা করে তৃণমূল নেতৃত্বের ওই বার্তা দেওয়া যথেষ্ট ‘তাৎপর্যপূর্ণ’।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সৌগত রায় ওই সভায় বলেন, “তৃণমূল শহিদের দল। এই দলের নাম করে কেউ তোলা তুললে বা সিন্ডিকেট করলে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে তার বিরোধিতা করতে হবে। দলে বেনোজল ঢুকতে দেবেন না।” সৌগতবাবুর আরও ব্যাখ্যা, “আমরা কেউ রামকৃষ্ণদেব, বিবেকানন্দ বা মহাত্মা গাঁধী নই। এমনকী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নই। তবু মমতার আদর্শেই আমাদের চলতে হবে। নিজের পরিবারকে খুশি করতে নয়। মানুষকে খুশি করতে রাজনীতি করুন।” সৌগতবাবুর অভিযোগ, আগে যারা সিপিএমের হয়ে ‘দুষ্কর্ম’ করত, এখন তাদের একাংশ তৃণমূলে আসতে চাইছে। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দাওয়াই, “২০০৯-এর লোকসভা ভোটের আগে যাঁরা দলে এসেছেন, তাঁদের আগে গুরুত্ব দিতে হবে। এখন যাঁরা আসছেন, তাঁদের নিতে হবে পরে।”
শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “দলে নতুন লোক নেওয়ার সময় তাঁর কোনও অভিসন্ধি আছে কি না, যাচাই করে নেবেন। দু’-চারটে লোকের জন্য দলের বদনাম হতে দেবেন না।” শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুও উপস্থিত কর্মীদের সতর্ক করে বলেন, “সিপিএম যা করেছে, আপনারা তা করবেন না। আমরা-ওরা বিভাজন করবেন না। মানুষ কিন্তু আপনাদের উপর লক্ষ রাখছেন।” দলে ‘বেনো জল’ ঠেকাতে ‘ছাঁকনি’ ব্যবহারের পরামর্শও দেন পূর্ণেন্দুবাবু। ‘সিন্ডিকেট-রাজ’ নিয়ে বিতর্ক চলাকালীন পূর্ণেন্দুবাবুর নামও তাতে জড়িয়েছিল। দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ তথা দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীরও বক্তব্য, “অসামাজিক কাজে যাতে দলের পতাকা জড়িত না থাকে, সেটা দেখার দায়িত্ব আপনাদেরই। অনেকে আমাকে অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে চিঠি দিচ্ছেন। যুক্তি থাকলে বিচার হবে।” রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হুঁশিয়ারি, অনুমতি ছাড়া তৃণমূলের পার্টি অফিস বানালে পুলিশ দিয়ে তা ভেঙে দেওয়া হবে। এ দিনের সভার আহ্বায়ক ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার ও তাপস পাল, বিধায়ক সুজিত বসু ও নির্মল ঘোষ, নাট্যব্যক্তিত্ব অর্পিতা ঘোষ এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডাও ওই সভায় ছিলেন। |