‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’-এর গল্প নেই। বরং আশঙ্কা উল্টোটাই! জামাই বাবাজীবনের ব্যাটেই না ঘটে যায় শ্বশুরবাড়ির স্বপ্নভঙ্গ! এবং জামাইষষ্ঠীর রাতে!
দু’টো চেয়ারে পাশাপাশি। মাঝখানে মহার্ঘ ট্রফি। বাঁ দিকে নাইটদের নেতার শরীরী ভাষায় সংকল্প। ডান দিকে সুপার কিংসের দলপতি তথা কলকাতার জামাইয়ের ভুবনমোহিনী হাসি। ছবি তোলার অনুরোধ এলে ধোনিকে দেখলাম, গম্ভীরের পিঠে হাত রেখে বললেন, “তুমি আগে!”
কে আগে ট্রফিটা ছুঁল না ছুঁল, আদৌ গুরুত্বপূর্ণ নয়। যে ছবিটা আজ বিকেলে আলোকচিত্রীদের লেন্সে ধরা থাকল, তাতে কখনওই ধরা যাবে না দুই অধিনায়কের ফটোফিনিশে টক্করের ছবি, যেখানে ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সূচ্যগ্র মেদিনী’ ছাড়া কোনও শব্দবন্ধ বসে না। একটা ক্যাপ্টেন ততটাই ভাল, যতটা ভাল তাঁর টিম আইপিএলের শুরু থেকে বারবার আউড়ে যাওয়া এই কথা আবার বলছিলেন গম্ভীর। তখনই ধোনির দিকে পাল্টা প্রশ্ন এল, ক্যাপ্টেন গম্ভীরকে কেমন লাগে? “অ্যাগ্রেসিভ। ওর ক্যাপ্টেন্সির ধরনটা আলাদা। আর এই ধরনটা কেকেআরের হয়ে দারুণ কাজ করেছে,” ব্যাখ্যা ধোনির। তার পরই মিষ্টি হেসে, “আমারটা অত ‘এক্সপ্রেসিভ’ নয়। এক এক জনের ধরন এক রকম।”
অন্য রকম! ধোনির ব্যাপারটা সত্যিই অন্য রকম। না-ই বা থাকল বছরভর প্রতিটা বিষয়ে লেটার মার্কস। প্রি-টেস্ট বা টেস্টে না-ই বা রইল ঝকঝকে রিপোর্ট কার্ড। ফাইনাল পরীক্ষায় একশোয় একশো পেলে কার বা সময় থাকে মাঝারিয়ানার পূর্ব ইতিহাস ঘেঁটে দেখার? তাই চলতি আইপিএলে শুরু থেকে নিষ্প্রভ, কিন্তু ডেকান ম্যাচে বেঙ্গালুরুর আচম্বিতে হারে প্লে-অফের দরজা খুলে যাওয়ার পর থেকেই মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ফের স্বমূর্তিতে। ঠিক যে ভঙ্গিতে সঙ্কটমোচন ‘অবতার’ হিসেবে দেখা দিয়েছেন বারবার, ঠিক যে ভাবে চূড়ান্ত চাপে তার ব্যাটিং শৌর্যে ডুবতে থাকা দল ভেসে উঠেছে বারবার।
|
তাঁর সব চেয়ে জুতসই নাম বোধহয় মহেন্দ্র ‘সঙ্কটমোচন’ ধোনি। যাঁর আসল ম্যাচে সেরাটা দেওয়ার ট্র্যাক রেকর্ড কাল অব্যাহত থাকলে নাইটদের কাপ জয়ে সম্ভবত ইতি। টানা তিন বার আইপিএল জয়ের চাপ আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধছে না? “বাঁধছে তো! অবশ্যই চাপের ম্যাচ। দু’টো টিমের কাছেই। তিনটে ঘণ্টা যে টিমটা চাপটা ঠিকঠাক নেবে, ট্রফি তার।” টিমের প্লে-অফে যাওয়াই যখন চূড়ান্ত অনিশ্চিত ছিল, সব কিছুই ছিল ভাগ্যের হাতে, তখন? “টিভিতে ম্যাচ দেখতাম, কিন্তু জানতাম কিছুই আর আমাদের হাতে নেই। প্লে-অফে ওঠার পরে ফের ক্রিকেট কিট ব্যাগ খুলেছিলাম,” বলছিলেন তিনি। জানাচ্ছিলেন, “মুরলী বিজয়কে বলেছিলাম, তুমি মুরলী। তুমি যা পারো, সবাই পারে না বলেই টিমে আছ। তাই অন্য কিছু করার চেষ্টাই কোরো না।” নিট ফল? গত ম্যাচে মুরলীর ৫৮ বলে ১১৩। ‘বস’ আর ‘লিডার’-এর তফাত বোঝাতে গিয়ে অ্যাপলের স্রষ্টা প্রয়াত স্টিভ জোবস একটা কথা বলেছিলেন। “বস সব সময় বলবে, ‘গো’। আর লিডার বলবে, ‘লেটস গো!” সম্ভবত ‘লিডার’ শব্দটাই খাটে ধোনির ক্ষেত্রে। নয়তো বারবার কী ভাবে সিএসকে পেরে যায়? যখনই দরকার পরে, ক্যাপ্টেনের ব্যাট কথা বলে। সে জন্যই তিনি বলতে পারেন, “কাল দু’টো টিমে বাইশ জন খেলবে। সকলেরই কাল হিরো হওয়ার সুযোগ আছে। আমি অন্তত এ ভাবেই দেখছি।” কী সহজ ব্যাখ্যা!
রাতে নাইটদের প্র্যাক্টিস শেষে চিপকের আনাচে কানাচে ফল নিয়ে চূড়ান্ত জল্পনা চলছে। গম্ভীর রান না পেলে নাইটদের কপালে দুঃখ আছে। সুনীল নারিনের চারটে ওভারে উইকেট না গেলেই চেন্নাইয়ের কেল্লা ফতে। ধোনির টিমে পাতে না দেওয়ার মতো স্পিনার না থাকায় ভুগতে হবে। অশ্বীনকে দিয়ে হবে না। এই সব। একটা হাল্কা বিয়োগান্ত মেজাজও আছে। দেড়টা মাস দেখতে দেখতে চলে গেল। এ বার আইপিএলের শেষ রাত কালই। ‘শেষ রাত’ শব্দ দুটো লিখতে গিয়ে মনে হচ্ছে, পড়ে নাইট ভক্তদের বুক ছ্যাঁক করে উঠতে পারে।
কে না জানে, ওস্তাদের মার বারবার শেষ রাতেই দিয়ে এসেছেন মহেন্দ্র ‘সঙ্কটমোচন’ ধোনি! |