নাগপুরের ভূমিপুত্র, দলের সর্বভারতীয় সভাপতি। অথচ নিজের রাজ্যেও তাঁর গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে। তিনি বলতে উঠলে মুম্বইয়ের ভিড়ও পাতলা হয়। ‘ঘর’ গোছাতে নিতিন গডকড়ী এ বার তাই বালাসাহেব ঠাকরের দ্বারস্থ।
মুম্বইতে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক শেষ হওয়ার একদিন পরেই বালাসাহেবের সঙ্গে সরাসরি দেখা করতে চলে গেলেন গডকড়ী। বিজেপি সূত্রের মতে, বালাসাহেবের সঙ্গে অতীতে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ মেটাতেই শিবসেনা সুপ্রিমোর বাড়িতে সটান হাজির হয়েছেন বিজেপি সভাপতি। উত্তরপ্রদেশে ভালো ফল করে দেখাতে পারেননি গডকড়ী। তাঁর কৌশল নিয়ে আডবাণী-সুষমারা বেজায় ক্ষুব্ধ। এখন সভাপতি পদে গডকড়ীর মেয়াদ বৃদ্ধি হলে লোকসভা নির্বাচনে দিল্লির তখ্ত দখল সুনিশ্চিত করানোই তাঁর প্রধান লক্ষ্য। সে ক্ষেত্রে এনডিএর বিস্তারও ঘটাতে হবে। কর্মসমিতির বৈঠকের পরেই তাই নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে পরিবারে ভিত শক্ত করার কাজে নামলেন গডকড়ী।
গডকড়ী বিলক্ষণ জানেন, সঙ্ঘের আশীর্বাদ নিয়ে পরের লোকসভা নির্বাচন তাঁর নেতৃত্বে লড়া হলেও এখনও দলের ভিতরে কিংবা বাইরে সেভাবে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়েনি। গতকাল মুম্বইতে কর্মসমিতির বৈঠক শেষে তাঁর সামনেই নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে মানুষের উন্মাদনা চোখে পড়ার মতো ছিল।
কিন্তু মোদীর পরে তিনি বলতে উঠলে নিজের ‘গড়’ মহারাষ্ট্রের রাজধানীতে ভিড় পাতলা হতে শুরু করে। তার উপর এভাবে সঙ্ঘের হস্তক্ষেপে তড়িঘড়ি মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করানোয় খুশি নন লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজের মতো অনেক নেতা। খোদ নিজের রাজ্যেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের শিকার তিনি। এনডিএর সবথেকে পুরনো শরিক শিবসেনা প্রধান বালাসাহেব ঠাকরেও কিছুদিন আগে বলেছেন গডকড়ীর মতো নতুন প্রজন্মের নেতাদের সঙ্গে তাঁর কাজ করতে সমস্যা হয়। টেলিফোনেও বালাসাহেব কথা বলতে চাননি গডকড়ীর সঙ্গে। উল্টে কথায় কথায় শিবসেনা প্রধান বিজেপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে আরও উস্কে মোদীর তারিফ করেছেন। সেই ক্ষত নিরাময়েরই আজ চেষ্টা করেছেন গডকড়ী।
এতেও কি নিস্তার আছে? বিজেপির সাংসদ রাম জেঠমলানী আজই আবার গডকড়ীকে একটি কড়া চিঠি লিখে জানিয়েছেন, দলের অবস্থা ভয়াবহ। কংগ্রেসের দুর্নীতি যখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে, বিজেপির সামনে যখন তার সুযোগ তোলার ভরপুর সুযোগ রয়েছে, সেই সময় দল নিজেদের মধ্যেই ঝগড়ায় ব্যস্ত। অনেকটা এই সুরেই গতকাল কর্মসমিতির বৈঠকে সরব হয়েছিলেন আডবাণী। তিনি সংশয় প্রকাশ করে বলেন, কংগ্রেস দুর্বল হচ্ছে, কিন্তু বিজেপি কি মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে? বিজেপি কি প্রস্তুত কংগ্রেসের বিকল্প হয়ে উঠতে? আডবাণীর এই অশনি সঙ্কেতের বার্তা যে গডকড়ীর উদ্দেশেই ছিল, সেটি মনে করেন দলের অনেকেই। এমনকী কংগ্রেসও গডকড়ীকে ‘ধর্তব্যের’ মধ্যে ধরে না। কাল বিজেপির বৈঠক শেষ হওয়ার পর আজ মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস মুখপাত্র সচিন সাওয়ান্ত বলেন, “গডকড়ীর নেতৃত্ব ব্যর্থ হয়েছে।”
এমনকী যেদিন বালাসাহেবের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন গডকড়ী, সেইদিনই শিবসেনার মুখপত্র ‘সামনা’তে বিজেপি-র অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে মুখ খুলেছেন ঠাকরে। তাঁর মতে, বিজেপি-তে এখন নরেন্দ্র মোদীকে বাদ দিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। পাশাপাশি কর্নাটকের নেতা বি এস ইয়েদুরাপ্পা ‘মানববোমা’র মতো আচরণ করছেন। ঠাকরের বক্তব্য, সভাপতি হিসেবে গডকড়ীকে ল্যান্ডমাইন পেতে রাখা পথ ধরে এগোতে হবে। এই অবস্থায় গডকড়ীও বুঝতে পারছেন, শুধু সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের পূর্ণ আশীর্বাদ থাকলেই বিজেপির মতো কেন্দ্রের প্রধান বিরোধী দলের কাণ্ডারী হওয়া সম্ভব নয়। তার জন্য রাজনৈতিক দল থেকে আম-জনতার কাছে গ্রহণযোগ্য নেতাও হয়ে উঠতে হবে। |