এখনও যে সব জঙ্গিগোষ্ঠী শান্তি প্রক্রিয়ার বাইরে রয়েছেন তাদেরও সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসার আহ্বান জানালেন কংগ্রেস সভানেত্রী তথা ইউপিএ-র চেয়ারপার্সন সনিয়া গাঁধী। আজ, অসমের বর্তমান কংগ্রেস সরকারের তৃতীয় দফার শাসন পর্বের প্রথম বছর পূর্তি। সেই উপলক্ষ্যেই সনিয়ার অসম আগমন।
আর আসা যাওয়ার পথে গুয়াহাটির শুনশান পথঘাট সনিয়ার নজর নিশ্চয় এড়ায়নি। সনিয়ার এই সফরকে বয়কট করে আজ অসম বন্ধের ডাক দিয়েছিল আলফা (পরেশ) গোষ্ঠী। বর্তমানে রাজ্যে তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি থাক বা না থাক, সেই বিতর্কে না গিয়ে গুয়াহাটিবাসী সাবধানতা অবলম্বন করেছিল।
শনিবার, ছুটির দিনে রাস্তায় নামার ঝুঁকি নেয়নি তারা। হয়তো বা সেই কারণেই সরুসজাই স্টেডিয়ামে, বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের মঞ্চে সনিয়া গাঁধীর ভাষণে প্রাধান্য পেল রাজ্যে এখনও সক্রিয় থাকা জঙ্গিগোষ্ঠীগুলি। সনিয়া বলেন, “রাজ্যর অধিকাংশ জঙ্গি সংগঠনই বুঝতে পেরেছে, সন্ত্রাস সমস্যা সমাধানের রাস্তা হতে পারে না। তাই তারা শান্তির পথে পা মিলিয়েছে। আশা করি বাকিরাও একই পথের পথিক হবে।” ১১ বছর আগে রাজ্যে যখন কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় এল তখনকার পরিস্থিতি উল্লেখ করে সনিয়া বলেন, “সে সময় রাজ্যের অবস্থা ছিল ভয়াবহ। জঙ্গি কার্যকলাপ ছিল তুঙ্গে। অরাজকতা চরমে। ভাঁড়ার শূন্য। কর্মীদের মাসের মাইনে দেওয়ার মতো ক্ষমতাও সরকারের ছিল না। সেই অবস্থা থেকে কংগ্রেস অসমকে একটা শান্ত, আত্মবিশ্বাসের পরিবেশ দিয়েছে। |
মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের দেওয়া জাপি মাথায় সনিয়া গাঁধী। ছবি-উজ্জ্বল দেব |
দেশের উন্নয়নের দৌড়ে অসমকে সামিল করেছে কংগ্রেস সরকার।” গগৈ সরকারের প্রশংসা করে সনিয়ার আহ্বান, “রাজ্যের অধিকাংশ জঙ্গিগোষ্ঠী সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় সামিল হয়েছে। যাঁরা এখনও এই প্রক্রিয়ার বাইরে, তাঁরাও শান্তি আলোচনায় আসুন। এতেই অসমের সার্বিক মঙ্গল।”
তবে সরকারের প্রশংসার পাশাপাশি, আগামী দিনের দায়িত্ব সম্পর্কেও মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈকে সচেতন করে দিয়েছেন ইউপিএ চেয়ারপার্সন। তিনি বলেন, “কাজ অনেক হয়েছে। কিন্তু আরও অনেক কাজই বাকি। অসমবাসী তৃতীয় দফায় কংগ্রেসকে ক্ষমতায় বসিয়ে আরও অনেক বেশি দায়িত্ব আমাদের কাঁধে তুলে দিয়েছেন।” সেই দায়িত্ব সম্পর্কে সরকারকে সচেতন করে দেন তিনি। সনিয়ার কথায়, “রাজীব গাঁধী স্বাক্ষরিত অসম চুক্তি মেনে চলার চেষ্টা করেছি আমরা। অসমের সবচেয়ে বড় শক্তি এখানকার বৈচিত্র ও বিভিন্নতায়। প্রতিটি গোষ্ঠীর প্রয়োজন বুঝে তাদের সকলকে সঙ্গে নিয়ে, পর্যাপ্ত স্বশাসনের সুবিধা দিয়ে কংগ্রেস রাজ্যের উন্নয়নে সকলকে সামিল করতে পেরেছে।”
ব্রহ্মপুত্রে আরও চারটি নতুন সেতুর কথা ঘোষণা করেন সনিয়া। কংগ্রেস সভানেত্রী জানান, অসমের সাংসদ, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ অসমের ব্যাপারে বিশেষ নজর দেন। মহিলা উন্নয়ন, পঞ্চায়েতিরাজ প্রসার, উপজাতি উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, সড়ক ও যোগাযোগ উন্নয়ন, ১৮টি বিকাশ পরিষদ গঠন, বেকারত্ব দূরীকরণ, ছাত্রদের সকলকে কমপিউটার প্রদান-সহ সর্বস্তরে রাজ্যের বিকাশে মনোযোগী প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “রাজ্যের কৃষকরা এই বছর ফলনে দেশের পয়লা নম্বরে পৌঁছেছেন।’’ তাঁর মতে, এটাই তো উন্নয়নের ‘সূচক’। সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ, কেন্দ্রীয় উত্তর-পূর্ব উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী পবন সিংহ ঘাটোয়ার ও অসমের ভারপ্রাপ্ত এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক দিগ্বিজয় সিংহ। বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে সনিয়া ছাড়াও বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ভুবনেশ্বর কলিতা, পবন সিংহ ঘাটোয়ার ও রাজ্যে কংগ্রেসের জোট শরিক বিপিএফের প্রধান, হাগ্রামা মহিলারি। |