নিউ টাউন
গভীর নলকূপের আধিক্য নামিয়ে দিয়েছে জলস্তর
কেই বৃষ্টির অভাব, তার উপরে যত্রতত্র গভীর নলকূপ বসানোয় রাজারহাট-নিউ টাউনে ভূগর্ভস্থ জলস্তর গড়ে দুই মিটার নেমে গিয়েছে বলে আশঙ্কা করছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। জলস্তরের এই নেমে যাওয়া এখনই রোধ করতে না-পারলে গুরুতর বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা। তাঁদের মতে, এর ফলে ভূপৃষ্ঠের ভারসাম্য যেমন নষ্ট হবে, তেমনই বাড়বে আর্সেনিক-দূষণ। আর্সেনিকের ক্ষেত্রে রাজারহাট-নিউ টাউনকে ‘বিপজ্জনক অঞ্চল’ বলে চিহ্নিত করেছে রাজ্যের আর্সেনিক টাস্ক ফোর্স।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রের খবর, নিউ টাউন-রাজারহাটে কয়েক বছরে প্রচুর আবাসন হয়েছে। সেখানে কেবলমাত্র গভীর নলকূপের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা হয়। এক-একটি গভীর নলকূপ দিনে ১ লক্ষ গ্যালন জল তোলে। উপনগরীটি একেবারে নতুন হলেও সেখানে নদীর জল শোধন করে বাড়ি বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা হয়নি। মাটির নীচে জল ফেরত পাঠানোর (রিচার্জিং) জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি রাখাও বাধ্যতামূলক করা হয়নি। চেষ্টা হয়নি বৃষ্টির জল ধরে রাখারও। তাই ভূগর্ভের জলস্তর নেমেই যাচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর জানাচ্ছে, বছর তিনেক আগেও রাজারহাট-নিউ টাউনে ২৪০ মিটার গভীরে ভাল পানীয় জল মিলত। কিন্তু এখন ওই জলস্তর অন্তত ২-৬ মিটার পর্যন্ত নেমে গিয়েছে। এর প্রধান কারণ হিসাবে যত্রতত্র নলকূপ বসানোকেই দায়ী করছেন কারিগরি দফতরের আধিকারিকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, রাজারহাট এলাকায় দু’টো গভীর নলকূপের মধ্যে অন্তত ৫০ মিটার দূরত্ব থাকার কথা। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না। অনেক আবাসন গভীর নলকূপ বসানোর সময়ে কোনও রকম অনুমতিও নিচ্ছে না বলে অভিযোগ।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের হিসেব, নিউ টাউনের অ্যাকশন এরিয়া ওয়ান-এ ১৯টি গভীর নলকূূপ এবং অ্যাকশন এরিয়া টু ও থ্রি-তে ১১টি করে গভীর নলকূপ রয়েছে। আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, এর বাইরে আরও বেশ কয়েকটি গভীর নলকূপ রয়েছে ওই এলাকায়। সেগুলি বসানোর সময়ে অনুমতি নেওয়া হয়নি। প্রতিদিন ওই উপনগরী থেকে যে পরিমাণ জল তোলা হচ্ছে, তার হিসেবই এলাকায় অনুমতিবিহীন গভীর নলকূপের উপস্থিতি প্রমাণ করে দিচ্ছে।
এই জলস্তর নেমে যাওয়া বন্ধে কোনও ব্যবস্থা না নিলে ওই এলাকায় আর্সেনিক-দূষণ যেমন বাড়বে, তেমনই মাটি বসে যাওয়ার মতো অবস্থাও তৈরি হবে বলে জানাচ্ছেন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা। নিউ টাউন এলাকায় একের পর এক বহুতল তৈরি হচ্ছে। মাটি বসে গেলে সেগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর।
যদিও রাজ্য জল অনুসন্ধান দফতরের চেয়ারম্যান সুরজিৎ দাস মনে করেন, রাজারহাটে জলস্তর যে পরিমাণে কমেছে, তা নিয়ে খুব চিন্তার কিছু নেই। বর্ষার পরে ওই জলস্তর অনেকটাই উপরে চলে আসবে। সুরজিৎবাবু বলেন, “কোথায় কত গভীর নলকূপ বসানো হচ্ছে, সেই দিকে নজর রাখার জন্য রাজ্যের প্রতিটি জেলায় একটি করে কমিটি রয়েছে। রাজারহাট অঞ্চলেও সেই কমিটি নজরদারি চালাচ্ছে।”
তা হলে গভীর নলকূপের উপরে কি কোনও নিষেধাজ্ঞাই জারি হবে না নিউ টাউনে? আর্সেনিক-দূষণের সমস্যা কি বাড়তেই থাকবে? সুরজিৎবাবু বলেন, “রাজারহাট নিউ টাউন এখন গড়ে উঠছে। এই অবস্থায় আমরা সব গভীর নলকূপের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারি না। তবে নলকূপ বসানোর ক্ষেত্রে আবেদনভিত্তিক অনুমতি দিচ্ছি। যেখানে নলকূপ বসানো হবে সেখানকার মাটি পরীক্ষা করা হচ্ছে। তার পরেই ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। আর্সেনিকপ্রবণ এলাকায় গভীর নলকূপ বসানোর অনুমতি মিলছে না। এ ব্যাপারে হিডকো-ও আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছে। এই ভাবে মাটি পরীক্ষা করে অনুমতি দেওয়া হলে আর্সেনিকের আশঙ্কাও অনেকটা কমবে।” হিডকো-র চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন বলেন, “নিউ টাউন এলাকায় মাটির গভীরে পানীয় জলের কী অবস্থা, তা পরীক্ষা করেন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা। যত দূর জানি, আর্সেনিক নিয়ে এখনও আতঙ্কিত হওয়ার অবস্থা হয়নি।”
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার সত্যদেব ভট্টাচার্য বলেন, “নিউ টাউনে পানীয় জলের সমস্যা পাকাপাকি ভাবে মেটাতে গঙ্গার জল শোধন করে এলাকাবাসীকে দেওয়ার যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, তার কাজ এখন চলছে। কয়েক বছরের মধ্যে এই কাজ শেষ হবে। তখন আর পানীয় জলে আর্সেনিক মেশার আশঙ্কা থাকবে না। ভূগর্ভের জলও সে ভাবে ব্যবহার করতে হবে না।” কিন্তু ওই প্রকল্প যে কবে শেষ হবে, তা সুনির্দিষ্ট ভাবে জানাতে পারেননি জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের আধিকারিকেরা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.