সব সময় নয়। কখনও সখনও উত্তরবঙ্গের নদীতে ঘড়িয়াল ভেসে উঠতে দেখা গিয়েছে। শুধুমাত্র সেই ভরসায় প্রাক্তন বনমন্ত্রী অনন্ত রায় নিজের গ্রাম কোচবিহারের খোলটায় তিন লক্ষাধিক টাকা খরচ করে তারজালে ঘেরা জলাশয় তৈরি করেছিলেন। প্রতিশ্রুতি ছিল স্থানীয় নদীতে ধরা পড়া ঘড়িয়াল ওই জলাশয়ে ছাড়া হবে। গড়ে তোলা হবে ঘড়িয়াল প্রকল্প। অথচ প্রকল্প তৈরির আগে এলাকার নদীতে ঘড়িয়াল আছে কিনা। থাকলে কতটা তা নিয়ে কোনও সমীক্ষা হয়নি। ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। নদীতে ঘড়িয়াল না মেলায় প্রকল্পটি তৈরির এক বছর পরেও চালু করা সম্ভব হয়নি। রাজ্যে পালা বদলের পরে ভিন রাজ্য থেকে কুমির এনে ওই জলাশয়ে ছাড়ার কথা ভাবছে বন দফতর। বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন বলেন, “ঘড়িয়াল পাওয়া যাচ্ছে না। তাই প্রকল্পটি চালু করা সম্ভব হয়নি। সেখানে কুমির ছাড়ার কথা ভাবা হয়েছে। পাটনা, চেন্নাইয়ের মত কয়েকটি জায়গায় কুমির পাওয়া যাবে বলে খোঁজ পেয়েছি। কবে নাগাদ কুমির পাওয়া সম্ভব হতে পারে সেটা নিশ্চিত হলে কেন্দ্রের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হবে।” বন দফতরের কয়েকজন কর্তারা জানান, প্রকল্পটি তৈরির সময় ভাবা হয়েছিল বিভিন্ন সময় উত্তরবঙ্গের নদীতে জেলেদের জালে বা অন্য কোনও ভাবে ঘড়িয়াল পাওয়া যাবে। নদী থেকে উদ্ধার করা একাধিক ঘড়িয়াল রসিকবিলে রাখাও হয়েছে। কিন্তু খোলটায় পরিকাঠামো তৈরির পরে ঘড়িয়াল মেলেনি। প্রকল্পটি তৈরির আগে কী ঘড়িয়ালের অস্তিত্ব জানতে উত্তরবঙ্গের নদীতে বন দফতরের তরফে কোনও সমীক্ষা হয়েছে? বনকর্তারা ওই বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানাতে পারেননি। প্রাক্তন বনমন্ত্রী বলেন, “মন্ত্রীরা প্রকল্পের প্রস্তাব দেয়। দফতরের অফিসাররা সেই বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেন। এ ক্ষেত্রে সমীক্ষা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।” বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহারের খোলটা প্রাক্তন বনমন্ত্রীর আদি বাড়ি। তিনি বনমন্ত্রী হয়ে ওই গ্রামে ‘খোলটা ইকোপার্ক’ গড়ে তুলতে উদ্যোগী হন। পর্যটক টানতে সেখানে হরিণ উদ্যান ও ময়ূর উদ্ধার কেন্দ্র তৈরি করা হয়। বসানো হয় ট্রয়ট্রেন। ঘড়িয়াল রাখার প্রকল্প তৈরির কাজ শুরু হয়। এ জন্য গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে ইকোপার্ক চত্বরে পাকা পাড় বাঁধানো জলাশয় তৈরির পরিকাঠামো গড়ে চারদিকে তারজালের বেড়া দেওয়া হয়। রাজ্যে পালা বদলের পরে বনমন্ত্রী হন জেলার বাসিন্দা হিতেন বর্মন। প্রকল্পের খোঁজ নিতে গিয়ে তিনি অবাক হয়েছেন। প্রশ্ন ওঠে ঘড়িয়াল মিলবে কোথায়! যদিও প্রাক্তন বনমন্ত্রীর দাবি, “নির্বাচন বিধি লাগু হয়ে যাওয়ায় প্রস্তুতি নিয়েও খোলটা ইকোপার্কে ঘড়িয়াল প্রকল্প চালু করা সম্ভব হয়নি। সরকার পরিবর্তন না-হলে অনেক আগে সেখানে ঘড়িয়াল রাখার ব্যবস্থা হয়ে যেত।” কোচবিহারের ডিএফও পিনাকী মিত্র ওই বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। এ দিকে চালু না হওয়ায় প্রস্তাবিত ঘড়িয়াল প্রকল্প ঝোপজঙ্গলে ভরে গিয়েছে। টলটলে জল অবহেলায় দূষিত হয়েছে। ওই দুর্দশা দেখে বিভিন্ন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বাসিন্দারা জানান, কোচবিহারের রসিকবিলে ঘড়িয়াল পার্ক আছে। তাই পর্যটকদের অনেকে সেখানে ভিড় করেন। খোলটায় কুমির প্রকল্প হলেও পর্যটন শিল্পের উন্নতি হবে। |