দিদি অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। কিন্তু তার বদলে গত ২ বছর ধরে ওই পদে কাজ করছিলেন বোন। আরএসপি-র চাঁচল জোনাল সম্পাদকের মেয়েদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে ঘিরে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। মালদহের চাঁচল-২ ব্লকের চিলাপাতা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ঘটনা। বিষয়টি জানার পর সম্প্রতি বাসিন্দাদের পাশাপাশি প্রশাসনের দ্বারস্থ হন রাজনৈতিক দলের নেতারা। সম্প্রতি ওই অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্প দফতর। প্রাথমিক তদন্তের পর বেতন বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি প্রতারণার অভিযোগে গত দুই বছরের ভাতার টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চাঁচল-২ ব্লকের বিডিও ভাস্কর মজুমদার বলেন, “অভিযোগ পেয়েই সিডিপিওকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি। সরকারি অর্থ এ ভাবে নয়ছয়ের ঘটনা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।” আর চাঁচল-২ ব্লকের সিডিপিও প্রফুল্ল রায় বলেন, “তদন্তের পর শোকজের পাশাপাশি প্রতারণা করে তোলা টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মাণি শবনমকে। এরপর প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।” প্রশাসনের তরফেও তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রয়োজনে ওই মূল অঙ্গনওয়ারি কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় প্রতারণার মামলা দায়ের করা হবে বলেও প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে। বাম শরিক আরএসপি ওই জোনাল সম্পাদকের নাম সৈয়দ গৌসে আজমের। তার বাড়ি পরানিনগরে। তাঁর দুই মেয়ের মধ্যে বড় জনের নাম মাণি শবনম এবং ছোটজনের নাম জিমি শবনম। তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের আমলে মন্ত্রীর কোটায় ২০১০ সালে রতুয়া-২ ব্লকে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীপদে কাজে যোগ দেন মাণি শবনম। কয়েকমাস পর তিনি বদলিও হয়ে যান বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরের চিলাপাতা কেন্দ্রে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিজেকে মাণি শবনম পরিচয় দিয়ে সেখানে কাজে যোগ দেন তাঁর বোন জিমি। তারপর থেকে তিনিই মাণি শবনম হয়ে কেন্দ্রে কাজ করতেন। পাশাপাশি ভাতাও তুলতেন মাণি শবনমের স্বাক্ষর করে। এই সময়কালে মাণি শবনম কলকাতায় থেকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সমাজ উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়ে পড়াশোনা করতে চলে যান। দফতরের কর্তাদের দাবি, “কে মাণি আর কে জিমি তা দফতরের জানার কথা নয়। রিলিজ অর্ডার নিয়ে জিমি শবনম এসে নিজেকে মাণি শবনম পরিচয় দিয়ে কাজে যোগ দেন। ফলে বিষয়টি দফতরেরও নজর এড়িয়ে যায়।” অভিযোগ অনেকটাই স্বীকার করে নিয়েছেন জোনাল সম্পাদক সৈয়দ গৌসে। তিনি বলেন, “বড় মেয়েই কেন্দ্রে কাজ করে। সে কলকাতায় পড়লেও সপ্তাহে এক দিন করে যায়। ফলে কেন্দ্রটি যাতে বন্ধ না থাকে সে জন্য কখনও ছোট মেয়ে যেত। তৃণমূল ও কংগ্রেস মিলে বদনাম করতেই এসব করেছে।” বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছেন এলাকার আরএসপি-র বিধায়ক আবদুর রহিম বক্সিও। তিনি শুধু বলেন, “ওখানে মাণি শবনমই কাজ করে বলে জানি। তাঁর পরিবর্তে ছোট বোনের কাজ করার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।” বাম আমলে জেলায় জেলায় যে দলীয় মদতে পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে এটা তাঁরই একটি উদাহরণ বলে মন্তব্য করেছেন কংগ্রেস এবং তৃণমূল নেতারা। চাঁচল-২ ব্লক তৃনমূল সভাপতি প্রশান্ত দাস ও কংগ্রেস নেতা আদিত্য দাস বলেন, “ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে জোরদার আন্দোলন করা হবে।” |