বুধবার রাত থেকে দু’দফায় ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হল কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারের বিস্তীর্ণ এলাকায়। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝড়ে বাড়ি ভেঙে চাপা পড়ায় আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্রাম ব্লকের ডাঙাপাড়া গ্রামে এক ব্যক্তি র মৃত্যু হয়। শামুকতলা থানার খলিসামারি এলাকায় এক মহিলা ও একটি শিশু জখম হয়েছে বলে খবর মিলেছে। কোচবিহার সদর ব্লকের ইছামারি গ্রামে ঘরের চাল ভেঙে পড়ায় জখম হন আরও এক ব্যক্তি। তাঁকে কোচবিহার জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। দুই জেলায় সব মিলিয়ে প্রায় দু’হাজার কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়েছে। বিদ্যুৎ খুঁচি ভেঙে পড়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ ও পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসল। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার ভোরেই প্রশাসনিক স্তরে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নেওয়া শুরু হয়েছে। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কুমারগ্রামের ডাঙাপাড়ায় বাড়ি চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তির নাম থমাস কুজুর (৫০)। রাতে সাড়ে ৯টা নাগাদ ঝড়বৃষ্টির সময়ে ওই ব্যক্তি নিজের বাড়িতেই ছিলেন। প্রবল হাওয়ার তোড়ে আচমকা বাড়ি ভেঙে পড়লে ওই ব্যক্তি চাপা পড়েন। |
ঝড় থামার পরে লোকজন ভাঙা ঘরের তলা থেকে দেহটি বার করেন। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০ মিনিটের এই ঘূর্ণি ঝড়ে অন্তত ৪০০ কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়েছে। কুমারগ্রামের বিডিও শিলাদিত্য চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খোয়ারডাঙা-১ ও ২, ভলকা-বারবিশা-১ ও ২ এবং চেংমারি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। রাস্তার উপর গাছ ভেঙে পড়ায় এদিন সকালে কুমারগ্রাম রুটে প্রায় চার ঘণ্টা গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। বুধবার রাতে প্রবল ঝড়বৃষ্টি হয় তুফানগঞ্জে। বৃহস্পতিবার ভোরে শিলাবৃষ্টি হয় কোচবিহার সদর মহকুমা এবং আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের সোনাপুর এলাকায়। কোচবিহার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আধ ঘন্টার ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে দেড় হাজারের বেশি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আলিপুরদুয়ারের সোনাপুরের হাই স্কুলের চাল উড়ে যায়। গাছ পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এলাকার ডাকঘর। দুর্যোগের জেরে কোচবিহার-২ ব্লকের বাণেশ্বর, হাতিডোবা, কুঠিপাড়া, খোলটা, আমবাড়ি, পাতলাখাওয়া, পুন্ডিবাড়ি ও লাগোয়া বিভিন্ন এলাকায় সাত শতাধিক বাড়ি ভেঙে পড়ে। কোচবিহার-২ ব্লকের ইছামারীতে একটি প্রাথমিক স্কুলের টিনের চাল উড়ে যায়। মহকুমার অন্যত্র বহু জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ায় তার ছিড়ে গিয়েছে। প্রচুর গাছ ভেঙে পড়েছে। তুফানগঞ্জ-১ ব্লকের ধলপল, অন্দরান ফুলবাড়ি এলাকায় ক্ষতির পরিমাণ বেশি। তুফানগঞ্জ-১ ব্লকের বিডিও তাপস সিংহরায় বলেন, “প্রাথমিক ভাবে পাঁচ শতাধিক বাড়ির ক্ষতির খবর এসেছে।” কয়েকশো বিঘে পানের বরজের পাশাপাশি বোরো ধান, পাট, ভুট্টা ও সবজি খেত লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে। জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “বেশ কিছু এলাকা ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরির কাজ চলছে। দুর্গতদের ত্রাণের ব্যাপারেও ব্যাবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” তৃণমূলের কোচবিহার-২ ব্লক সভাপতি পরিমল বর্মন বলেন, “এলাকা ভিত্তিক হিসেব নিয়ে ব্লকে সাত শতাধিক বাড়ির ক্ষতির হিসাব মিলেছে।” বাণেশ্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পরিমল রায় বলেন, “কেবল ইছামারিতেই শতাধিক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রশাসনকে সবই জানানো হয়েছে।” আলিপুরদুয়ার-১ বিডিও প্রদীপ্ত ভগত জানান, চকোয়াক্ষেতি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় শতাধিক বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চারটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের চাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উত্তর সোনাপুর এলাকায় একটি ডাকঘরে গাছ ভেঙে পড়ে। সোনাপুর বিকে হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রনজিৎ ঠাকুর জানান, স্কুলের কাঠের তৈরি ভবনের ১২টি ক্লাস রুমের চাল উড়ে গিয়েছে। বেশ কয়েকটি কম্পিউটার নষ্ট হয়েছে। |