|
|
|
|
সৌর আলো পেল সেবক |
সৌমিত্র কুণ্ডু • সেবক |
স্বাধীনতার পর গ্রামে প্রথম আলোর ব্যবস্থা হল। সন্ধ্যার পর স্ত্রী ছেলেমেয়েদের নিয়ে এ বার আর অন্ধকারে কাটাতে হবে না পহলমন ছেত্রী, তেজবাহাদুর রাই, বাসন্তী গোয়ালদের। কেরোসিন তেল না মিললে রাতে পড়াশোনা করা সম্ভব হয় না ঋতু ছেত্রী, অনিতা ছেত্রী,অঞ্জলি ছেত্রীদের মতো বনবস্তির কচিকাঁচাদের। এ বার আর সেই সমস্যা নেই। প্রত্যন্ত লালটং বনবস্তির কচিকাঁচা থেকে বাসিন্দারা তাই খুশি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা এলাকার বিধায়ক গৌতম দেবের বিধায়ক তহবিলের টাকায় বৃহস্পতিবার তাঁদের ঘরে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা হল। প্রত্যন্ত এই এলাকা থেকে দীর্ঘপথ পেরিয়ে স্কুলে যেতে পড়ুয়াদের যাতে সমস্যা না হয় সে জন্য তাঁদের একাংশকে দেওয়া হল সাইকেলও। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী বলেন, ‘‘এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় সন্ধ্যা হলেই অন্ধকারে ডুবে থাকত মানুষ। কোনও সাংসদ, বিধায়ক এত দিন এই এলাকায় এসেছেন বলে মনে হয় না। আমার নির্বাচন ক্ষেত্রে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির ১ নম্বর বুথ এলাকা এটি। তাই দায়বদ্ধতা রয়েছে এখানকার বাসিন্দাদের প্রতি। উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে গরিব বাসিন্দাদের বসবাস এই সমস্ত এলাকার মানুষদের উন্নয়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই এলাকাকে ‘মডেল ভিলেজ’ হিসাবে গড়ে তোলা হবে। আজ, তাদের জন্য সৌরবিদ্যুতের আলোর ব্যবস্থা হল। মুখ্যমন্ত্রী এখানে কখনও এলে তিনি সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন।” |
|
আগামী ১৯ মে রাজ্যে নতুন সরকারের যখন বর্ষপূর্তি হতে চলেছে তার প্রাক্কালে এই কাজ করতে পেরে খুশি মন্ত্রীও। তাঁর কথায়, “এটা একটা আলাদা অনুভূতি। আমরা বাংলাকে আলোয় উদ্ভাসিত করব।” ৪কিলোমিটার দূরেই চমকডাঙি গ্রাম। এই দুটিকে নিয়ে পর্যটনের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। সেবকগামী জাতীয় সড়ক থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার বনপথ পেরিয়ে নদীর ধারে ওই বনবস্তি। তিস্তার পাড়ে ছবির মতো গ্রাম লালটং। সাকুল্যে ২৭ টি পরিবারের বসবাস। বিদ্যুৎহীন গ্রাম সন্ধ্যা নামলেই অন্ধকারে ঢেকে যায়। ১৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বেতগাড়ায় রেশন দোকান থেকে সন্ধ্যার আগে কেরোসিনের বন্দোবস্ত করতে পারলে ঘরে আলো জ্বলে। অন্যথায় চাঁদের আলোই ভরসা। তার উপর হাতির উপদ্রব। বছর দু’য়েক গরুমারা অভয়ারণ্য থেকে বেরিয়ে আসা দুটি গণ্ডারও এলাকায় চষে বেড়াচ্ছে। সন্ধ্যা হলেই তাই কচিকাঁচাদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় কাটে জিতেন শৈব, ইন্দ্রবাহাদুর ছেত্রী, টিকা কুমারী ছেত্রীদের। জিতেনবাবুর এক ছেলে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, অপর জন উচ্চমাধ্যমিক দেবেন। তিনি বলেন, ‘‘হাতি, গণ্ডারের উপদ্রবের মধ্যে এ বার আর অন্ধকারে কাটাতে হবে না। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খুবই সমস্যা হত।” অপর বাসিন্দা দিলবাহাদুর ছেত্রী বলেন, “বেতগাড়া রেশন দোকান থেকে সপ্তাহে ১ লিটার কেরোসিন তেল মেলে। তা দিয়ে সব দিন রাতে আলো জ্বালানো সম্ভব হত না। গৌতমবাবুকে এই জন্য ধন্যবাদ।” ২৭টি বাড়ির প্রতি ক্ষেত্রে রান্না ঘর-সহ ২টি ঘরে সৌর আলোর ব্যবস্থা হয়েছে। এলাকায় পাঁচটি পথবাতিও লাগানো হয়েছে সৌরবিদ্যুতের। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ৩ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। প্রত্যন্ত ওই এলাকা থেকে পড়ুয়া, বাসিন্দাদের কাজেকর্মে যেতে হয় অন্তত ২০ কিলোমিটার দূরে শালুগাড়া অথবা আরও ৫ কিমি পেরিয়ে শিলিগুড়ি শহরে। এ দিন তাই পড়ুয়াদের স্কুলে যাতায়াতের সুবিধার জন্য ২৮ জনকে সাইকেলও দেওয়া হয় বিধায়ক তহবিলের অর্থে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী জানিয়েছেন, আজ যাদের সাইকেল দেওয়া হল না সেই সমস্ত পড়ুয়াদের নামও তালিকায় রয়েছে। তাদেরও সাইকেলের ব্যবস্থ করা হবে। সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থার উদ্বোধন অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রবীণ বাসিন্দা ইন্দ্রবাহাদুর ছেত্রী বলেন, “এর আগে যাঁরা সরকারে ছিলেন তাঁরা কোনও দিন আমাদের এখানে আসেননি। বর্তমান সরকার আন্ধকার বস্তিতে আলো দিয়েছে। এলাকার উন্নয়নের পরিকল্পনা নিচ্ছে। জলের ব্যবস্থা-সহ অন্য সমস্যা মেটাতে তাদের উদ্যোগী হতে বলব।” |
|
|
|
|
|