নিজস্ব সংবাদদাতা • জলপাইগুড়ি |
জলপাইগুড়ি জেলা ভেঙে আলিপুরদুয়ার জেলা গঠনের প্রক্রিয়া আরও এক ধাপ এগোল। বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি জেলাশাসকের দফতরে সর্বদল বৈঠকে আলিপুরদুয়ারকে পৃথক জেলা হিসেবে করার প্রস্তাব সর্বসম্মত ভাবে গৃহীত হয়েছে। নতুন জেলার ভৌগোলিক সীমা নিয়ে তিনটি প্রস্তাবও পেশ করেছে প্রশাসন। এদিন বৈঠকের পরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “আলিপুরদুয়ারকে পৃথক জেলা হিসেবে স্বীকৃতির দেওয়ার যে প্রক্রিয়া রাজ্য সরকার শুরু করেছে তাতে সব দলের প্রতিনিধিরাই খুশি। সকলেই রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানান। জেলা ভাগের সিদ্ধান্ত সমর্থন করে এদিন সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। নতুন জেলার ভৌগোলিক বিন্যাস নিয়ে মতামত দিতে বামদলগুলি কিছুটা সময় চান। তবে কংগ্রেস-তৃণমূল সহ অন্যদলগুলি বলেছে, এ দিনের বৈঠকেই সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে যেতে পারত। তবে আমরা সব দিক বিবেচনা করতে ফের ২৮ মে বৈঠক হবে।” ওই বৈঠকের পরে আলিপুরদুয়ারের নানা এলাকায় উৎসব শুরু হয়ে যায়। বিকেল থেকেই পটকা, আতসবাজি ফাটিয়ে আবির মেখে উচ্ছ্বাসে ভেসে যান আলিপুরদুয়ার শহর, কালচিনি, জয়গাঁ সহ বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ। আলিপুরদুয়ার জেলা গঠন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন চলছে। বাম আমলে সেই দাবি নিয়ে আরএসপি আন্দোলন করলেও সিপিএমের তরফে তাতে সাড়া দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। তৃণমূল নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতা দখলের পরে জলপাইগুড়ি জেলা ভাগ করার দাবি নিয়ে উদ্যোগী হয়। ঘটনাচক্রে, তার পরেই সম্প্রতি সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু উত্তরবঙ্গে দলীয় কাজে গিয়ে তাঁদের দলের অবস্থান বদলের কথা ঘোষণা করেন। |
বিমানবাবু জানিয়ে দেন, তাঁরা আলিপুরদুয়ারকে পৃথক জেলা করার সিদ্ধান্ত নীতিগতভাবে সমর্থন করেন। দলীয় সূত্রের খবর, প্রস্তাবিত জেলা গঠনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে আলিপুরদুয়ারের তো বটেই, গোটা জলপাইগুড়ি জেলায় দলের কর্মী-সমর্থকদের যে ‘চরম অস্বস্তি’তে পড়তে হবে, তা সিপিএমের অনেক নেতাই বুঝতে পেরেছেন। জেলা নেতৃত্বের একাংশের কাছ থেকে সেই বিষয়ক ‘বার্তা’ পেয়েই খোদ রাজ্য সম্পাদককে আসরে নামতে হয় বলে সিপিএমের অন্দরের খবর। শুধু তাই নয়, ‘অসুস্থতা’র কারণে প্রবীণ সিপিএম নেতা মানিক সান্যাল জেলা সম্পাদকের পদ থেকে সরলেও জেলা ভাগ নিয়ে সর্বদল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু, পুরো সময় থাকতে পারেননি। তবে অসুস্থতা সত্ত্বেও মানিকবাবুর বৈঠকে অংশগ্রহণ হওয়াটা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই। এমনকী, আরএসপি জেলা নেতাদের কয়েকজন মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতি জেলা ভাগ নিয়ে নিজেদের ‘আন্তরিকতা’ বোঝাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। |
সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জেলা হবে সেটা স্বাগত জানাই। বৈঠকে সর্বসম্মত প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। জেলার ভৌগোলিক গঠন নিয়ে প্রস্তাবের কাগজপত্র প্রশাসনের তরফে পাওয়ার পরে আমরা আলোচনা করে মতামত দেব।” জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহন বসু, আলিপুরদুয়ারের কংগ্রেস বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায়, প্রদেশ কংগ্রেস নেতা বিশ্বরঞ্জন সরকার উপস্থিত ছিলেন। তৃণমূলের তরফে কৃষ্ণকুমার কল্যাণী, মৃদুল গোস্বামী, চন্দন ভৌমিক উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে এসেছিলেন কালচিনির মোর্চা সমর্থিত নির্দল বিধায়ক উইলসন চম্পামারি। স্বীকৃত রাজনৈতিক দল না হওয়ায় মোর্চা বা আদিবাসী বিকাশ পরিষদকে বৈঠকে ডাকা হয়নি। |