|
|
|
|
|
কর্মী নেই, মহিলা
থানায় আস্থাও নেই জনতার
দেবজিৎ ভট্টাচার্য • কলকাতা |
|
কোথাও দু’টো, কোথাও বা তিনটে। রাজ্যের খুব কম মহিলা থানাতেই দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা এ পর্যন্ত দুই অঙ্ক ছুঁয়েছে।
তা হলে কি পশ্চিমবঙ্গে নারী নির্যাতনের ঘটনা কমে গেল?
রাজ্যের একাধিক পুলিশকর্তা অবশ্য বলছেন, “এই তথ্য থেকে কোনও উপসংহারে পৌঁছানো সম্ভব নয়। কারণ, জেলার অন্যান্য থানায় রোজই গড়ে তিনটে নারী নির্যাতনের অভিযোগ জমা পড়ছে।”
পুলিশি-তথ্য মোতাবেক, নারী নিগ্রহের নথিভুক্ত মামলার সংখ্যার নিরিখে অন্ধ্রপ্রদেশের স্থান দেশে সবচেয়ে উপরে। তার পরেই পশ্চিমবঙ্গ। ২০১০-এ অন্ধ্রে ২৭২৪৪টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল। পশ্চিমবঙ্গে ২৬১২৫টি। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা জানাচ্ছেন, স্টেট ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো এখনও চূড়ান্ত তথ্য পেশ না-করলেও প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী, ২০১১ সালে রাজ্যে নারী নির্যাতনের ঘটনা ২৭ হাজার পেরিয়ে গিয়েছে।
তবে মহিলা থানায় এত কম মামলা দায়ের হচ্ছে কেন?
এর মূল কারণ হিসেবে লোকাভাব ও পরিকাঠামোর অভাবের দিকে আঙুল তুলেছেন একাধিক পুলিশকর্তা। তাঁরা বলছেন, “অনুমোদিত পদের অর্ধেকেরও কম পুলিশকর্মী নিয়ে তড়িঘড়ি ওই থানাগুলো চালু করেছে রাজ্য সরকার। সেখানে অভিযোগ করলে কবে তদন্ত শেষ হবে, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে সংশয় যথেষ্ট।”
যেমন হুগলির চুঁচুড়া মহিলা থানা। এখানে সাব ইনস্পেক্টর এক জন। তিনিই থানার ওসি। আর আছেন চার জন এএসআই ও ১৬ জন কনস্টেবল। গত ৬ জানুয়ারি ঘটা করে থানাটির উদ্বোধন হলেও এ পর্যন্ত দায়ের হয়েছে সাকুল্যে দু’টি মামলা। পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি মহিলা থানার অবস্থাও তথৈবচ। ১৮ মার্চ চালু হওয়ার পরে এ পর্যন্ত মাত্র তিনটি অভিযোগ ওই থানার খাতায় নথিভুক্ত হয়েছে। চুঁচুড়ার মতো কাঁথিতেও ওসি-ই একমাত্র সাব ইনস্পেক্টর। এএসআই দু’জন, বাকিরা কনস্টেবল কিংবা হোমগার্ড। ব্যতিক্রম শিলিগুড়ি। গত ফেব্রুয়ারিতে চালু হওয়ার পরে এখানে ২৮টি মামলা দায়ের হয়েছে। এক পুলিশকর্তার কথায়, “শিলিগুড়িতে সাব ইনস্পেক্টর ও সহযোগী পুলিশকর্মী বেশি থাকায় আমজনতার মনে আস্থা বেড়েছে। নির্যাতিতা মেয়েরাও অনেক বেশি সংখ্যায় থানামুখো হয়েছেন।”
মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের ৬৫টি মহকুমায় একটি করে মহিলা থানা হবে। প্রথম দফায় এক বছরের মধ্যে ২০টি চালু হওয়ার কথা ছিল। অথচ এ পর্যন্ত চালু হয়েছে মাত্র সাতটি। এমতাবস্থায় পুলিশমহলেই প্রশ্ন উঠেছে, লোকাভাব না-মিটিয়ে কেন চটজলদি মহিলা থানা খুলতে উদ্যোগী হল রাজ্য সরকার?
বস্তুত স্বরাষ্ট্র দফতরের তথ্য বলছে, এসআই, এএসআই এবং কনস্টেবল মিলিয়ে রাজ্য পুলিশে অনুমোদিত মহিলা কর্মীর সংখ্যা যেখানে ৫৫১৯, সেখানে আছেন মাত্র ১৮৪৯ জন!
এবং এত কম পুলিশ নিয়ে যে কোনও ভাবেই পৃথক মহিলা থানা ভাল ভাবে চালানো সম্ভব নয়, সে ব্যাপারে পুলিশকর্তারা নিশ্চিত। এক অফিসারের আক্ষেপ, “নারী নির্যাতনের ঘটনা নথিভুক্তির বিচারে দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও মহিলা পুলিশের সংখ্যার বিচারে পশ্চিমবঙ্গ দেশের প্রথম দশ রাজ্যের মধ্যেও নেই।” মাস চারেক আগে ভুবনেশ্বরে আয়োজিত মহিলা পুলিশের চতুর্থ জাতীয় সম্মেলনের তথ্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “দেশে মহিলা পুলিশ সবচেয়ে বেশি তামিলনাড়ুতে ১০২২৫ জন। ওড়িশা দ্বিতীয় স্থানে, তাদের আছে ৩০৯২ জন।”
ওই সব রাজ্যে কী ভাবে এত মহিলা পুলিশ পাওয়া গেল? রাজ্যের এক স্বরাষ্ট্র-কর্তার ব্যাখ্যা, “পুলিশে নিয়োগের ক্ষেত্রে ১০% পদ যাতে মহিলাদের জন্য রাখা হয়, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ২০০৮-এ সব রাজ্যকে নির্দেশ পাঠিয়েছিল। সেই নির্দেশ মেনে অন্যান্য রাজ্য পুলিশবাহিনীতে মেয়েদের চাকরি দিলেও পশ্চিমবঙ্গে কখনও হয়নি। ফলে ঘাটতি দিন দিন বেড়েই চলেছে।”
|
প্রমীলা বাড়ন্ত |
পদ |
অনুমোদিত |
আছেন |
এসআই |
৩৩৫ |
৯৪ |
এএসআই |
৩৮৬ |
৮৮ |
কনস্টেবল |
৪৮০৪ |
১৬৬৭ |
|
|
|
|
|
|