রেকর্ড বিদ্যুতের চাহিদাতেও
অস্বস্তি চরমে, আর্দ্রতায় পোয়াবারো জীবাণুদের
ঙ্কের হিসেবে আগের দিনের তুলনায় তাপমাত্রা কিছুটা কমে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার কলকাতায় তাপপ্রবাহ হয়তো ছিল না। কিন্তু তার বদলে আর্দ্রতার দাপটে অস্বস্তি যে-ভাবে পেড়ে ফেলল, তার চেয়ে চরম তাপপ্রবাহও বুঝি ছিল ভাল!
বুধবার আবহমণ্ডলের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আবহবিদদের মনে হয়েছিল, বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলতে পারে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তা হয়নি। বরং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমে গেল প্রায় আড়াই ডিগ্রি সেলসিয়াস। কলকাতা তাপপ্রবাহ এড়াল ঠিকই। কিন্তু যেটা হল, সেটাও রেকর্ড। অস্বস্তির রেকর্ড। ৬৯ ডিগ্রির মাত্রা (স্বাভাবিকের থেকে ১৪ ডিগ্রি বেশি) ছুঁয়ে এ দিন মহানগরীতে রেকর্ড করে ফেলেছে অস্বস্তিসূচক। তার এই দাপট আরও কাহিল করে দিল মানুষকে।
তাপপ্রবাহে ঘরের মধ্যে থাকলে তবু কিছুটা রেহাই মেলে। কিন্তু আর্দ্রতার দরুন অস্বস্তিসূচক বাড়তে থাকলে অস্বস্তি বাড়ে ঘরে-বাইরে সর্বত্রই। ঘরে থেকে পূর্ণ গতিতে পাখা চালিয়েও স্বস্তি মেলে না। কারণ, এই দুঃসহ অবস্থায় প্রচুর ঘাম হয়। শরীরে ঘাটতি দেখা দেয় জল ও নুনের। শরীরের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। কমে যায় মানুষের দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা। বাতাসে ভেসে বেড়ানো নানা ধরনের জীবাণু এই পরিস্থিতিতে সহজেই প্রবেশ করে মানুষের দেহে।
পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, তাপপ্রবাহের একটা সুফল আছে। তাপমাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে তা জীবাণুদের নিষ্ক্রিয় করে দেয় অনেকটাই। কিন্তু আর্দ্রতা বেড়ে গেলে ওই সব জীবাণু সক্রিয় হয়ে ওঠে। অতিরিক্ত ঘাম থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় কাহিল হয়ে পড়া শরীরকে সহজেই আক্রমণ করে তারা। তাই কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকার ঘরে ঘরে গলাব্যথা, কানব্যথা, জ্বরের রোগীর ছড়াছড়ি। লাইন বাড়ছে চিকিৎসকের চেম্বারে।
এই চরম অস্বস্তিকর অবস্থায় খাস কলকাতায় এ দিন বেলা সওয়া ৩টেয় বিদ্যুতের চাহিদা পৌঁছে যায় ১৮৫৪ মেগাওয়াটে। সিইএসসি-র মতে, দুপুরে বিদ্যুতের চাহিদার ক্ষেত্রে এটা রেকর্ড। তাদের নথি বলছে, আগে কোনও গ্রীষ্মের দুপুরেই বিদ্যুতের চাহিদা এই মাত্রায় পৌঁছয়নি। বিদ্যুতের চাহিদার ক্ষেত্রে আগের রেকর্ড ছিল ১৭৯২ মেগাওয়াট। ১৪ মে। সে-দিন কলকাতায় অস্বস্তিসূচক ছিল ৬৮ ডিগ্রি। তাপপ্রবাহের মধ্যেও বুধবার বেলা সওয়া ৩টেয় কলকাতায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৭৫৭ মেগাওয়াট।
রাজ্যের ১৩টি জেলা (কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের ১১টি) জেলায় বুধবার শুরু হয়েছিল তাপপ্রবাহ। আগের দিনের থেকে ওই দিন কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চার ডিগ্রিরও বেশি বেড়ে যায়। স্বাভাবিকের থেকে ছ’ডিগ্রি বেশি ছিল সেটা। ছিল না ছিটেফোঁটা মেঘ। তার ভিত্তিতে আবহবিদদের মনে হয়েছিল, বৃহস্পতিবার কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আরও তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে ১০৪ বছর আগেকার ৪৩.৭ ডিগ্রির মাত্রা ছুঁয়ে ফেলবে। মে মাসের মহানগরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকডর্র্ ওটাই।
বুধবার কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছে গিয়েছিল ৪০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বৃহস্পতিবার তা বাড়ার বদলে প্রায় আড়াই ডিগ্রি কমে হয়ে যায় ৩৮.১। স্বাভাবিকের থেকে এটাও তিন ডিগ্রি বেশি। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় পাঁচ ডিগ্রি বেশি হলে হাওয়া অফিসের ভাষায় সেটাকে বলে ‘তাপপ্রবাহ’। সেই অর্থে এ দিন শহরে তাপপ্রবাহ ছিল না ঠিকই। কিন্তু বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধির জেরে এক লাফে অনেকটাই বেড়ে যায় আপেক্ষিক আর্দ্রতা। ফলে অস্বস্তি বাড়তেই থাকে। এক সময় অস্বস্তিসূচক পৌঁছে যায় ৬৯ ডিগ্রিতে। সাম্প্রতিক কালে কবে কলকাতায় অস্বস্তিসূচক এই মাত্রায় পৌঁছেছিল, মনে করতে পারছেন না আবহবিজ্ঞানীরা। ২০১০ সালের ১৫ মে কলকাতার অস্বস্তিসূচক পৌঁছে গিয়েছিল ৬৯ ডিগ্রির কাছাকাছি। আবহবিদদের মতে, এ দিনের অস্বস্তিসূচকের মাত্রা কলকাতার ক্ষেত্রে রেকর্ড।
কলকাতা বৃহস্পতিবার তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচলেও দক্ষিণবঙ্গের ন’টি এবং উত্তরবঙ্গের তিনটি জেলায় এ দিনও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল লাগামছাড়া। বাঁকুড়ায় তা পৌঁছে যায় প্রায় ৪৫ ডিগ্রিতে। বীরভূমের শ্রীনিকেতন এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৪ ডিগ্রি। পানাগড়ে ৪৩ ডিগ্রি। আজ, শুক্রবারেও দক্ষিণবঙ্গের ওই সব জেলায় তাপপ্রবাহ চলবে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
কিন্তু ঝড়বৃষ্টির খবর কী? এই অস্বস্তিকর আবহাওয়া থেকে রেহাই মিলবে কবে?
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানাচ্ছেন, আজ, শুক্রবার থেকেই আবহাওয়ায় পরিবর্তনের সূচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন একটি ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে এ দিন সকাল থেকেই মেঘ ঢুকতে শুরু করেছে কলকাতায়। সেই মেঘ পাড়ি দিচ্ছে উত্তরবঙ্গে। তাপপ্রবাহে আক্রান্ত সেখানকার তিন জেলা (মালদহ, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর)-য় শুক্রবার রাতেই বৃষ্টির আশা আছে। শুক্রবার রাতে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হতে পারে দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতেও।
আর কলকাতা?
গোকুলবাবু বলেন, “শুক্রবার পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়, তার উপরেই সব নির্ভর করছে। তবে আবহাওয়ার কিছুটা পরিবর্তন হচ্ছেই। শনি-রবিবারের মধ্যে বৃষ্টি আশা করতে পারেন কলকাতাবাসী।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.