স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির জন্য সরকারি ভর্তুকির পরিমাণ বৃদ্ধির ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, “মা-মাটি মানুষের সরকারের এক বছর পূর্তিতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ ২০% থেকে বাড়িয়ে ৩০% করে দেওয়া হল।”
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যাঁরা রোজগার করেন’, তাঁদের জন্য এই ঘোষণা সরকারের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘উপহার’। তবে প্রধান শাসক দলের নেতৃত্বের একাংশের অভিমত, পঞ্চায়েত ভোটের আগে গ্রামীণ মহিলাদের আরও বেশি করে কাছে টানার প্রয়াসই এই ঘোষণার নেপথ্য কারণ।
শুধু ভর্তুকির পরিমাণ বৃদ্ধিই নয়, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য-সদস্যাদের (যাঁদের অধিকাংশই গ্রামের বাসিন্দা) জন্য এ দিন একগুচ্ছ সুযোগ-সুবিধার কথা মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন। নেতাজি ইন্ডোরে সরকারি অনুষ্ঠান এ দিন কার্যত জনসভার রূপ নিয়েছিল। প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মহিলাদের ভিড় দেখে আপ্লুত মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “সমাজের পরিবর্তন করতে গেলে গ্রামে গ্রামে উন্নয়নের আনন্দধারা ঝরাতে হবে।” সভায় রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রও বলেন, “গ্রামে ৭০% মানুষ বাস করেন। সুতরাং গ্রামের প্রগতি না-হলে বাংলার অগ্রগতি হবে না।” এই বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, পঞ্চায়েত ভোটের আগে গ্রামেই নজর দিতে চাইছে রাজ্য সরকার। |
নেতাজি ইন্ডোরে এ দিন জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশন কর্মসূচির (যার ‘আনন্দধারা’ নামকরণ করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীই) আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও অনুষ্ঠানের আয়োজক পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, অর্থমন্ত্রী অমিতবাবু, শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র, আবাসনমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মঞ্চেই সুব্রতবাবু, অমিতবাবুর সঙ্গে কথা বলে মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেন, “আমি কারও সঙ্গে আলোচনা না-করে হুট করে কোনও কিছু ঘোষণা করে দিই না!” ভর্তুকি বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য জেলা থেকে ব্লক স্তর পর্যন্ত বিপণন কেন্দ্র খোলা হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। বিশেষত, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর তৈরি জিনিসপত্র বিদেশে রফতানির ব্যবস্থা করার জন্যও সুব্রতবাবুকে বলেন মমতা। তাঁর কথায়, “বিদেশের বাজারেও ওঁদের তৈরি জিনিসের চাহিদা আছে।” সেই সঙ্গে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের স্বাস্থ্য বিমা চালু করার জন্য মঞ্চে বসে-থাকা রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুকে নির্দেশ দেন মমতা। সামাজিক মুক্তি কার্ড এবং এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক তৈরির ক্ষেত্রে পূর্ণেন্দুবাবুর দফতরের কাজে ‘অসন্তুষ্ট’ মুখ্যমন্ত্রী এ দিন কিন্তু স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, “অসংগঠিত শ্রমজীবীদের জন্য যেমন বিমা আছে, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ভাই-বোনেদের তেমন স্বাস্থ্য বিমা চালু করা হবে। বিমার পরিমাণ হবে ৩০ হাজার টাকা করে।’’ ঘোষণার পরেই শ্রমমন্ত্রীকে লক্ষ করে মমতা বলেন, “স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্প তৈরির জন্য তিন মাস সময় দিলাম!” |
পঞ্চায়েত ভোটে ‘উন্নয়ন’কেই যে তাঁরা হাতিয়ার করতে চান, তা দলীয় স্তরে মমতা জানিয়েও দিয়েছেন। সেই লক্ষ্যেই তাঁর সরকারের এক বছরের কাজের অগ্রাধিকারেও গ্রাম ও পঞ্চায়েতের উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সুব্রতবাবু বলেন, “স্বনির্ভর গোষ্ঠী প্রকল্প রূপায়ণে এত দিন রাজ্য পর্যায়ে কোনও স্বতন্ত্র পরিকাঠামো ছিল না। এ বার থেকে ‘আনন্দধারা’ প্রকল্পে রাজ্য পর্যায়ে রূপায়ণের দায়িত্ব থাকছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য গ্রামীণ জীবিকা মিশন নামে একটি নথিভুক্ত সমিতির উপরে এবং প্রকল্প তদারকির দায়িত্বে থাকবেন সরকারি আধিকারিকেরা। তাঁদের নেতৃত্ব দেবেন এক জন স্টেট মিশন ডিরেক্টর।” আর সমস্ত কাজ তদারকির জন্য সুব্রতবাবুর সভাপতিত্বে একটি ‘টাস্ক ফোর্স’ গঠন করা হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান। রাজ্যে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর বিকাশে তাঁরা সমস্ত রকম সহযোগিতা করবেন বলে জানান কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী শিশির অধিকারী। তবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাষ্ট্রয়ত্ত ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী ‘হুঁশিয়ারি’ দেন, “কেন্দ্রীয় সরকারি স্তরে আমি ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিদের বলছি, আপনারা স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে সময়মতো ঋণ দেবেন। কারণ, স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে কাজ করার সুযোগ দিলে গ্রামের উন্নতি হবে।” |