বনগাঁয় একটি পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক মঞ্চের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই স্বপ্ন দেখে আসছেন এখানকার মানুষ। তাঁদের দীর্ঘদিনের সেই স্বপ্ন এ বার পূরণ হতে চলেছে। বনগাঁ শহরে একটি পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বা অডিটোরিয়ামের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সম্প্রতি ৫০ লক্ষ টাকা অনুমোদন করা হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল বৃহস্পতিবার বলেন, “বনগাঁয় একটি অডিটোরিয়াম তৈরির জন্য বিএডিপি (সীমান্ত এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প) প্রকল্পে কেন্দ্রের কাছে দেড় কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল। প্রথম পর্যায়ে ৫০ লক্ষ টাকা অনুমোদন করা হয়েছে। কাজের শেষ পর্যায়ে বাকি টাকা পাওয়া যাবে। আগামী তিন বছরের মধ্যে ওই কাজ শেষ করা হবে।”
খবর শুনে বনগাঁয় সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষজন স্বাভাবিক ভাবেই খুশি। যদিও কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছেন না। বয়সের দিক থেকে বেশ পুরনো মহকুমা শহর হলেও বনগাঁয় আজ পর্যন্ত কোনও সাংস্কৃতিক মঞ্চ তৈরি হয়নি। অথচ সংস্কৃতির বিভিন্ন পথে এই শহরের মানুষের অবাধ বিচরণের ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। |
বিশেষ করে রাজ্যে নাট্যচর্চার অন্যতম পীঠস্থান এই মহকুমা শহর। কিন্তু নাট্য অনুশীলন বা মঞ্চস্থ করা, গান-বাজনার অনুষ্ঠান-সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করার মতো কোনও মঞ্চ শহরে না থাকায় সাধারণ মানুষের ক্ষোভের শেষ ছিল না। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে বহু দরবারও করেছেন তাঁরা। কিন্তু সবই ‘কাকস্য পরিবেদনা’। গত ২৫শে বৈশাখ ফের শহরে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বা রবীন্দ্রভবনের দাবিতে একটি সংগঠনের তরফে সই সংগ্রহের অভিযান হয়। শেষ পর্যন্ত সেই দাবি পূরণের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ দিন বনগাঁর মহকুমাশাসক অভিজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, “অর্থ অনুমোদনের নথিপত্র আমাদের কাছে এলেই কাজ শুরু করা হবে। পূর্ত দফতর ওই কাজ করবে।”
শহরে সাংস্কৃতিক মঞ্চ তৈরির এমন অগ্রগতিতে উৎসাহী কবি মলয় গোস্বামী বলেন, “অনেক দিন আগেই এটা হওয়া উচিত ছিল। মঞ্চ তৈরি হয়ে গেলে আমি নিজেই একটি নাটক মঞ্চস্থ করব ঠিক করেছি। বনগাঁর সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের এটা একটা বড় প্রাপ্তি।” কবি স্বপন চক্রবর্তী বলেন, “এ বার পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরি হওয়ার বিষয়ে আমি আশাবাদী। এর ফলে নাটক, নাচ, গানের মতো পারফরমিং আর্টস-এর সঙ্গে যাঁরা যুক্ত তাঁরা উপকৃত হবেন।” পাশাপাশি তাঁর প্রস্তাব, বড় মঞ্চটির পাশেই একটি ছোট মঞ্চ তৈরি হোক। যেখানে সাহিত্যবাসর, কবিতা পাঠের মতো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে।
মহকুমা প্রশাসন ও বনগাঁ পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, বনগাঁ শহরের ‘ললিতমোহন বাণী ভবন’টি ভেঙে সেখানেই তৈরি করা হবে নতুন সাংস্কৃতিক মঞ্চ। বর্তমানে ‘ললিত মোহন বাণী ভবন’টির জরাজীর্ণ অবস্থা। প্রশাসনের তরফে সেটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বনগাঁ পাবলিক লাইব্রেরির সম্পাদক স্বপন মুখোপাধ্যায় বলেন, “ললিতমোহন বাণী ভবনের জমি আমাদের। ওখানে সাংস্কৃতিক মঞ্চ তৈরির ক্ষেত্রে আমাদের সম্মতির কথা বনগাঁর প্রাক্তন মহকুমাশাসক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়কে জানিয়ে দিয়েছিলাম।” বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান জ্যোৎস্না আঢ্য বলেন, “বনগাঁর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে। সাংস্কৃতিক মঞ্চের কাজ যাতে দ্রুত শেষ হয় সে ব্যাপারে যাবতীয় পদক্ষেপ করা হবে।” বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস জানান, সাংস্কৃতিক মঞ্চ তৈরির জন্য প্রয়োজনে তাঁর বিধায়ক তহবিল থেকে অর্থ সাহায্য করা হবে। |