জঙ্গলমহলে ‘পরিবর্তন’
তৃণমূলের ‘শান্তি’র দাবির পাল্টা‘রক্তাক্ত স্মৃতি’ই অস্ত্র সিপিএমের
রাজ্য-শাসনের বর্ষপূর্তিতে জঙ্গলমহলে শান্তি ফেরানোর দাবি ফলাও করে প্রচার করছে তৃণমূল। আর সেই প্রচারের মোকাবিলায়, বিশেষত পঞ্চায়েত ভোটের আগে, জঙ্গলমহলের অতীত-সন্ত্রাসের স্মৃতিকেই হাতিয়ার করতে চাইছে সিপিএম। বছর খানেক আগেও ‘মাওবাদী-তৃণমূল’ যৌথ আক্রমণে জঙ্গলমহলে তাদের জেরবার হতে হয়েছিল বলে দাবি সিপিএমের। সেই আক্রমণে কী ভাবে দলের নেতা-কর্মী-সাধারণ সমর্থকরা নিহত, অপহৃত হয়েছেনসেই তথ্য স্মরণ করিয়ে দিতে চাইছেন সিপিএম নেতৃত্ব। পাশাপাশি, জঙ্গলমহলে ‘দলমত নির্বিশেষে’ সব নিহতের পরিবারকে আর্থিক অনুদান, সন্ত্রাসের ফলে আহতদেরও সাহায্য দেওয়ার দাবি তুলছেন তাঁরা।
বাম জমানায় এবং এখন তৃণমূল-শাসনে জঙ্গলমহলের পরিস্থিতির তুল্যমূল্য পরিসংখ্যান দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। শান্তি ফেরানোর কৃতিত্ব দাবি করে প্রচার শুরু করেছে তৃণমূল। তাতে জঙ্গলমহলে এমনিতেই কোণঠাসা সিপিএমের অস্বস্তি কিছুটা বেড়েছে। পাশাপাশি, নেতাই-কাঁটাও রয়েছে। গত বছর লালগড়ের নেতাই গ্রামের গুলি-কাণ্ডে চার মহিলা-সহ ৯ গ্রামবাসীর নিহত হওয়ার ঘটনায় জঙ্গলমহলে সিপিএমের সশস্ত্র শিবির থাকার তৃণমূল-দাবিটি কার্যত মান্যতা পায়। গত বছর বিধানসভা ভোটে তার খেসারতও দিতে হয় সিপিএমকে। সেই সঙ্গে সন্ত্রাস মোকাবিলায় তাদের সরকারের ব্যথর্তার দায়ও রয়েছে। তবুও তৃণমূলের ‘সাফল্য’ দাবির পাল্টা অতীতের ‘রক্তাক্ত অধ্যায়ে’র স্মৃতিই উস্কে দিতে চাইছেন সিপিএম নেতৃত্ব।
‘যুক্তি’ হিসাবে এক সিপিএম নেতার ব্যাখ্যা, “আমরা ক্ষমতায় থাকাকালীন মাওবাদীদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে গেলে তৃণমূলই নানা ভাবে বাধা দিয়েছে। জনগণের কমিটি-সহ মাওবাদী মদতপুষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নানা ভাবে বামফ্রন্ট সরকারকে বিব্রত করেছে। কেবলমাত্র পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলেই আমাদের দলের প্রায় দু’শো নেতা-কর্মী-সমর্থক খুন হয়েছেন। এখনও ৩৫-৪০ জন নিখোঁজ। যারা এক সময়ে সন্ত্রাসে মদত দিত, তারাই এখন রাজ্যের ক্ষমতায়। সেটাই প্রচারে তুলে ধরা হবে।” সেই সঙ্গে বিরোধীদল হয়ে সিপিএম যে মাওবাদীদের হাত ধরেনি, সেটাও ফলাও করে প্রচারের পরিকল্পনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেলপাহাড়ি ও লালগড়ের দুই সিপিএম নেতা। তাঁরা জানান, কোনও অবস্থাতেই যাতে নিচুতলার কর্মীরা মাওবাদীদের সমর্থন না করেন, সে ব্যাপারে শাখাস্তর পর্যন্ত নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। সাম্প্রতিক প্রতিটি কর্মিসভাতেও বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে।
অন্য দিকে, ‘তৃণমূল-মাওবাদী সখ্যতা’র প্রমাণ দিতে ক্ষেত্র-বিশেষে সভা-সমাবেশে তৃণমূল নেতাদের আগের বক্তব্য এবং ক্ষমতায় আসার পর ওই নেতা-নেত্রীদের বক্তব্যের অডিও বা ভিডিও ক্লিপিংস শোনানো বা দেখানোর ব্যবস্থাও করতে চলেছে সিপিএম। ‘সচিত্র প্রদর্শনী’র কথাও ভাবা হচ্ছে। মাওবাদী কিংবা তৃণমূলের হাতে দলের কোনও নেতা-কর্মী আক্রান্ত হয়ে থাকলে সেই ঘটনা স্মরণে রক্তদান শিবির আয়োজনের অভিনব পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। যেমন, আগামী ২২ মে সাঁকরাইলের কুলটিকরিতে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে গত বছর ওই দিনে তৃণমূলের হাতে সিপিএম নেতা বাদল রানার রক্তাক্ত হওয়ার স্মৃতি উস্কে দিতে। ঝাড়গ্রাম মহকুমায় সিপিএমের ৯টি জোনাল কমিটির অধীনে ৩৯টি লোকাল কমিটি এবং তিনশোর কাছাকাছি শাখা-কমিটি রয়েছে। শাখাস্তরে এখন সিপিএমের কর্মি-বৈঠক চলছে। দলের কৃষক ও যুব সংগঠনেরও বুথ-ভিত্তিক কমিটি পুনর্গঠনের কাজ চলেছে। এই মুহূর্তে বড় ধরনের সমাবেশে না-গেলেও চলতি মাসেই পশ্চিম মেদিনীপুরের জামবনি, শিলদা ও বেলপাহাড়িতে বেশ কয়েকটি ছোট প্রকাশ্য সভার আয়োজনও করা হচ্ছে। ১৮ ও ২০ তারিখে ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া, চুবকা, চন্দ্রি, পাটাশিমুল অঞ্চলেও প্রকাশ্য সভা হবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.