|
|
|
|
অভিযুক্ত ১২ সিপিএম নেতা-কর্মী |
জননী ইটভাটা কাণ্ডে চার্জশিট সিবিআইয়ের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কাঁথি |
নন্দীগ্রাম নিখোঁজ-কাণ্ডে লক্ষ্মণ শেঠ-সহ ১২ সিপিএম নেতা-কর্মী এখনও জেলবন্দি। ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির ৭ সমর্থককে খুন করে দেহ লোপাটের সেই মামলায় ওই ১২ জন-সহ ৮৮ জন সিপিএম নেতা-কর্মীর নামে চার্জশিট দিয়েছে সিআইডি। পাঁচ বছর আগের সেই নন্দীগ্রাম-পর্বের বহু-চর্চিত জননী ইটভাটা-কাণ্ডেও এ বার আরও ১২ সিপিএম নেতা-কর্মীর নামে চার্জশিট দিল সিবিআই।
মঙ্গলবার কাঁথি এসিজেএম আদালতে এই মামলায় আগে ধৃত, আপাতত জামিনে মুক্ত ১০ জনের সঙ্গেই পটাশপুরের মথুরা গ্রামের সিপিএম কর্মী প্রশান্ত বেরা ও ফাজিলপুর গ্রামের তাপস সামন্তকে ‘ফেরার’ ঘোষণা করে মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৫৩ ও ৪৫৪ ধারায় অপরাধের উদ্দেশ্যে সমবেত হওয়া এবং অস্ত্র-আইনের ২৫, ২৭ ও ২৯ নম্বর ধারায় বেআইনি অস্ত্র মজুতের অভিযোগে চার্জশিট পেশ করেছে সিবিআই। ‘ফেরার’ দু’জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছেন এসিজেএম কুমকুম বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ২৪ ডিসেম্বর মামলার পরবর্তী দিন ধার্য হয়েছে।
২০০৭-এর ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে জমি-রক্ষার আন্দোলনকারীদের উপরে গুলিবর্ষণে ১৪ জনের নিহত হওয়া, শতাধিক মানুষের আহত হওয়ার ঘটনায় জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। ১৫ তারিখেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল উচ্চ আদালত। তদন্তে গিয়ে ১৭ মার্চ নন্দীগ্রামের গোকুলনগরের উল্টো দিকে খেজুরির শেরখাঁচকের জননী ইটভাটা থেকে ১০ সিপিএম নেতা-কর্মীকে সশস্ত্র অবস্থায় গ্রেফতার করেন সিবিআই অফিসারেরা। নন্দীগ্রামের ভূমি-কমিটির অভিযোগ ছিল, খেজুরির দিক থেকে নিয়মিত হামলা চলছে। হামলা চালানোর জন্য তখনকার প্রধান শাসকদল সিপিএম বাইরে থেকে সশস্ত্র ক্যাডারদের এনে খেজুরিতে জড়ো করছে বলেও অভিযোগ ছিল কমিটির। জননী ইটভাটা থেকে পটাশপুর, ভূপতিনগর এলাকায় সিপিএমের একাধিক লোকাল কমিটি, শাখা কমিটি বা যুব সংগঠনের সদস্য অম্বিকেশ ঘোড়ুই, কানাইলাল দাস, মনোরঞ্জন মাইতি, রাজকুমার জানা, নাড়ু মাইতি, অরিন্দম কুইল্যা, শক্তি দাস, শচীন প্রামাণিক, রতিকান্ত মাইতি, পঞ্চানন শাসমলকে গ্রেফতার করেন সিবিআই অফিসারেরা। তাঁদের হেফাজত থেকে উদ্ধার হয় ৯টি রাইফেল, ৪টি রিভলবার, একটি পিস্তল। আগ্নেয়াস্ত্রগুলির বেশ কয়েকটি স্বয়ংক্রিয় এবং বিদেশি। প্রতিটিই ছিল গুলিভর্তি। আরও বেশ কয়েক বাক্স গুলি, কার্তুজের পাউচ, বোমা তৈরির প্রচুর সরঞ্জাম, দূরবীন, কালো প্যান্ট-টি’শার্ট, জলপাই রঙের হেলমেট, ৫টি মোবাইল হ্য্ান্ডসেটের সঙ্গেই উদ্ধার হয় সিপিএমের দলীয় পতাকা এবং দলের বেশ কিছু প্রচারপত্র। এর ফলে সিপিএম নেতৃত্বের বিড়ম্বনা বাড়ে। রাজ্য সরকার সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করে। ধৃত ১০ জনকে রাজ্য সিআইডি-র হাতে তুলে দেয় সিবিআই। কিন্তু সিআইডি ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট না-দেওয়ায় একে একে সব অভিযুক্তই জামিনে মুক্তি পান। ২০০৭-এর ১৬ নভেম্বর হাইকোর্ট নন্দীগ্রাম-পর্বের নানা অভিযোগ নিয়ে ফের সিবিআইকেই তদন্ত করতে বলে। সে সময়ে সিবিআই অবশ্য একমাত্র নাড়ু মাইতি ছাড়া অন্য অভিযুক্তদের আর কাউকেই খুঁজে পায়নি। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশও তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার। এ দিকে ফের সিবিআই তদন্তের বিরোধিতায় বাম সরকার সুপ্রিম কোর্টেও যায়। তদন্তের চূড়ান্ত অনুমতি পেতেই কেটে যায় দীর্ঘ সময়। শেষমেশ গত মঙ্গলবার কাঁথি এসিজেএমের আদালতে ৪৮ জনের সাক্ষ্য-সম্বলিত ৪৫ পাতার চার্জশিট পেশ করল সিবিআই। |
|
|
|
|
|