এখনও পর্যন্ত সেয়ানে-সেয়ানে। যাকে বলে একে অপরকে মেপে নেওয়া, সেই কাজটাই করে চলেছে বিশ্বনাথন আনন্দ ও বরিস গেলফাঁ। তাই জয়-পরাজয়ে নয়, বৃহস্পতিবারের পঞ্চম গেমটাও ড্র হল। এখন দু’জনেই আটকে আড়াই পয়েন্টে।
বুধবারের বিশ্রামের পর ফের দু’জন লড়াই শুরু করল গতকাল। এই দু’দিনে আমি যেখানে গিয়েছি, অফিস থেকে অ্যাকাডেমিসর্বত্র প্রশ্ন একটাই। আনন্দ কবে জিতে লিড নেবে? একটি অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, চুনী গোস্বামী, প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়দের সঙ্গে। তাঁরাও একই কথা জানতে চাইছেন। দাবাড়ু না হলেও মনে-প্রাণে সবাই চাইছেন এক জন ভারতীয় হিসাবে আনন্দই জিতুক।
সারা দেশের সঙ্গে ভারতীয় দাবামহলেও মাঝে মাঝে অসহ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে এই প্রতীক্ষা। সবাই বলছেন, আনন্দ এ বার একটা গেম জিতে যাক। কিন্তু ঘটনা হল, আনন্দের প্রতিদ্বন্দ্বী গেলফাঁও যে বিস্তর হোমওয়ার্ক করে এসেছেন। সেটা বোঝা যাচ্ছে প্রতি গেমেই। বিশ্ব দাবামহলে একটা প্রশ্ন উঠেছিল গত ক’দিনে। আনন্দ কবে কিংস পন মুভ দিয়ে শুরু করবে। বৃহস্পতিবার সাদা ঘুটি নিয়ে আনন্দ কিংস পনই খেলেছিল। কুইন্স পনের মতো আনন্দ এই ওপেনিং চালেও খুবই স্বচ্ছন্দ। সাধারণত কিংস পনের জবাব হিসাবে গেলফাঁ সিশিলিয়ান ন্যাজডর্ফ অথবা কিংস পন-ই খেলে থাকে। আমার মনে হয়, আনন্দের সেকেন্ডরা এই দুই চালের বিরুদ্ধে কোনও ব্রহ্মাস্ত্র তৈরি রেখেছিল। যে গেলফাঁ যেই ওই চালদুটোর একটা দেবে তখনই তাকে ধরাশায়ী করা যাবে সেই ব্রহ্মাস্ত্রে। কিন্তু সেটা আর হয়নি।
গেলফাঁর কৃতিত্ব বিপক্ষের মনোভাব আগেভাগেই বুঝতে পারা। প্রচলিত ওই দুই চালের ধার-পাশ দিয়ে না হেঁটে গেলফাঁর চাল ছিল পেলিক্যান ডিফেন্স। যা শেষ বার গেলফাঁ খেলেছিল ২০০৩-এ। এ দিনের এই পেলিক্যান-রক্ষণ পুরোপুরি চমকে দিল আনন্দকে। আর তাই পাঁচ নম্বর গেমের দখল সে ভাবে নিতে পারেনি আনন্দ। শেষ পর্যন্ত ম্যচটা ড্র হয়ে যায় ২৭ চালের পর। আনন্দই প্রস্তাব দিয়েছিল ড্রয়ের।
যে পেলিক্যান ডিফেন্সে গেলফাঁ জবাব দিয়েছিল সেটা যদি আনন্দ গ্রহণ করত তা হলে খেলাটা কিন্তু বেশ আকর্ষণীয় হতে পারত। আসলে এই ডিফেন্সের বিরুদ্ধে খেলাটা আরও ডায়নামিক রাখা যেত। কিন্তু আনন্দ হয় ভয় পেয়ে গিয়েছিল। না হলে একেবারেই চমকে গিয়েছিল। তাই ওর খেলা বৃহস্পতিবার কিছুটা গুটিয়ে রইল।
এখন যে ভাবে খেলা এগোচ্ছে তাতে একটা ব্যাপার মনে হচ্ছে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যে দুই দাবাড়ুই চাইছে একে অপরকে ক্লান্ত করে দেওয়ার। কে আগে ক্লান্ত হবে তার উপরই মনে হয় নির্ভর করছে চ্যাম্পিয়নশিপের দখলদারি। চল্লিশোর্ধ্ব দুই দাবাড়ুর ক্ষেত্রে সেটা অবশ্যই একটা ফ্যাক্টর বটে। |