‘খুনিদের দেখতে চাই, বলছেন ছেলেহারা বাবা
রের মধ্যে ঘুমন্ত অবস্থায় অষ্টম শ্রেণির স্কুল-ছাত্রের রহস্যজনক ভাবে খুনের ঘটনায় মেদিনীপুর শহরের বরিশাল কলোনি ও তার আশপাশের এলাকার পরিবেশটাই পাল্টে গিয়েছে। এলাকা জুড়ে চাপা আতঙ্ক। দুপুরের পর একের পর এক বাড়ির সদরে তালা পড়ছে। বাড়ির বাইরেও সে ভাবে কেউ বেরোচ্ছেন না। রাস্তা শুনশান। ঠিক এক সপ্তাহ আগে, গত শুক্রবার বিকেলে বরিশাল কলোনির একটি বাড়ির মধ্যে থেকে ওই ছাত্রের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। দেখতে দেখতে সপ্তাহ ঘুরল। কিন্তু এখনও ঘটনার কিনারা হয়নি। বৃহস্পতিবার সেই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সন্তানহারা বাবা বলছিলেন, “খুনিদের দেখতে চাই। এ ভাবে কেউ কাউকে খুন করতে পারে? পুলিশ তদন্ত করছে। পুলিশি তদন্তে এখনও আস্থা রয়েছে। কিন্ত, দ্রুত অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা জরুরি।” বলতে বলতে চোখের জল মুছলেন। মনে পড়ে গেল এক সপ্তাহ আগের সেই সকালটার কথা। ছোট ছেলের সঙ্গে সেই সকালেই তো তাঁর শেষ দেখা। পরে ‘ভয়ঙ্কর’ সেই ঘটনার খবর পেয়ে যখন অফিস থেকে বাড়ি ফিরলেন, তখন সব শেষ। শুধু দেখলেন ছেলের নিথর দেহটা।
নিহত স্কুলছাত্র অভিষেকের বাবা প্রবীর নাগ। নিজস্ব চিত্র।
গত শুক্রবার দুপুরে বাড়ির মধ্যেই রহস্যজনক ভাবে খুন হয় অষ্টম শ্রেণির ছাত্র অভিষেক নাগ। বাবা প্রবীর নাগ মেদিনীপুর পুরসভার কর্মী। মা মিতাদেবী গৃহবধূ। একটি স্টেশনারি দোকানও দেখভাল করেন। দুই ছেলের মধ্যে অভিষেকই ছোট। বড় ছেলে অভিরূপ দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। যৌথ পরিবার। প্রবীরবাবুরা তিন ভাই। বরিশাল কলোনি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। একটা বাড়ির পাশেই আরেকটা বাড়ি। চুরি-ছিনতাইও সে ভাবে হয় না। এমন এলাকায় বাড়ির মধ্যে নিজের ঘরেই কী ভাবে ওই ছাত্র খুন হয়ে গেল, স্বাভাবিক ভাবেই সে নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এতটুকু একটা ছেলেকে কে বা কারা কেনই বা চপার চালিয়ে, হাতের শিরা কেটে নৃশংস ভাবে খুন করল--তদন্তে নেমে সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ব্যস্ত পুলিশও। স্থানীয়দের দাবি মেনে ঘটনাস্থলে পুলিশ কুকুর এনেও তদন্ত হয়েছে। তবে তাতে ‘অগ্রগতি’ কিছু হয়নি। কুকুরটি বাড়ির পিছন দিকে একটি পুকুরের পাড় হয়ে কিছুদূর গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। কুকুরের গতিবিধি দেখে পুলিশ অনুুমান করেছিল, খুনি ওই পথেই গিয়েছে। ব্যস্, এইটুকুই। নিহত ছাত্রের দেহে ছুরি বা চপার জাতীয় কিছুর আঘাতের চিহ্ন ছিল। শহরে এমন ঘটনা নজিরবিহীন। যে ছুরি বা চপার জাতীয় কিছু দিয়ে অভিষেককে আঘাত করা হয়, সেটিও এখনও পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। ইতিমধ্যে বাড়ি ও তার আশপাশ এলাকায় তল্লাশি চালানো হয়েছে। খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রের খোঁজে পুকুর ও কুয়োয় চুম্বক ফেলেও তল্লাশি চালানো হয়েছে। কিছুই মেলেনি।
বৃহস্পতিবার নিজের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সেই সকালটার কথাই মনে পড়ছিল প্রবীরবাবুর। তাঁর কথায়, “ছেলেটা ভোরেই স্কুল চলে গিয়েছিল। পরীক্ষা ছিল। আমি ঘরের মেঝেয় শুয়েছিলাম। যাওয়ার আগে বলেছিল, মেঝে ছেড়ে যেন খাটে উঠে শুই।” পরে অভিষেক যখন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে আসে, তখন প্রবীরবাবু পুরসভায় চলে গিয়েছেন। তাঁর কথায়, “বিকেলে ঘটনার খবর পেয়েই বাড়ি ফিরে আসি। তখন তো সবই শেষ।” ছেলের কাছ থেকে কী কখনও কোনও আশঙ্কার কথা শুনেছিলেন? সন্তানহারা বাবা বলছিলেন, “কখনও শুনিনি। ওইটুকু ছেলের কি কোনও শত্রু থাকতে পারে! এলাকার সবাই ওকে ভালবাসত। ক্রিকেট-ফুটবল খেলায় আগ্রহ ছিল। বিকেল হলেই মাঠে যেত।” ইতিমধ্যে দু’দফায় ফরেন্সিক দল এসেও তদন্ত করেছে। বাড়ির মধ্যে থেকে নানা নমুনাও সংগ্রহ করেছে। পুলিশ পরিবারের লোকজন, অভিষেকের বন্ধু-পরিচিতদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। প্রবীরবাবু বলেন, “পুলিশ যে বসে নেই, সেটা ঠিক। তবে অভিযুক্ত কেউ তো এখনও ধরাও পড়ল না। তাই এলাকায় চাপা আতঙ্ক রয়েছে। আজ আমার ছেলে খুন হয়েছে। কাল অন্য কারও ছেলেও এ ভাবে খুন হতে পারে। দ্রুত অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা জরুরি।” তাঁর কথায়, “কোন বয়সের কে বা কারা এই নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে, তা জানা জরুরি।” পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরির অবশ্য আশ্বাস, “অভিযুক্তদের চিহ্নিত করার সব রকম চেষ্টাই চলছে।” একটা ঘটনা। অনেক প্রশ্ন। আপাতত, এই সব প্রশ্নের উত্তরই খুঁজছে বরিশাল কলোনি। শহর মেদিনীপুরও।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.