ঋণ পাইয়ে দেওয়ার ‘মিথ্যা প্রতিশ্রুতি’ দিয়ে গ্রাহকদের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তারকেশ্বরের একটি সমবায় ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে। ‘প্রতারিত’ গ্রাহকেরা ঋণ তো পানইনি, উপরন্তু জমা টাকাও ফের পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। লিখিত নালিশ জমা পড়েছে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে। ইতিমধ্যে বিনা নোটিসে ব্যাঙ্কের কয়েকটি শাখা বন্ধ করে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। ফলে, টাকা আদৌ ফেরত পাবেন কিনা, তা নিয়ে চিন্তিত ‘প্রতারিত’ গ্রাহকেরা।
‘তারকেশ্বর কো-অপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেড’ নামে ওই ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ হয়েছে সমবায় দফতরেও। সংশ্লিষ্ট দফতরের হুগলি জেলার ডেপুটি রেজিস্ট্রার বিজয় হালদার বলেন, “তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অনিয়ম প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” প্রশাসন সূত্রের খবর, তারকেশ্বরের বিডিও সুমন মুখোপাধ্যায়ও লিখিত ভাবে থানাকে তদন্ত করে ‘উপযুক্ত ব্যবস্থা’ নিতে বলেছেন। বিডিও দফতরের অফিসারেরা চেয়ারম্যানের বক্তব্য ভিডিও রেকর্ডিং করে এনেছেন। দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “চেয়ারম্যানের বক্তব্যে যথেষ্ট অসঙ্গতি রয়েছে। যদিও ওঁর দাবি, কোনও অনিয়ম হয়নি।” |
কী ভাবে ‘প্রতারিত’ হয়েছেন গ্রাহকেরা?
খানাকুলের পূর্ব রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা রঞ্জন মান্না বাদাম বীজ ব্যবসায়ী। গত বছরের ২৬ নভেম্বর ওই সমবায় ব্যাঙ্কের চাঁপাডাঙা শাখায় তিনি একটি সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলেন। রঞ্জনবাবু জানান, অ্যাকাউন্ট খোলার দিন থেকে গত ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৭ লক্ষ ৭ হাজার ২০০ টাকা জমা করেছেন। প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগে তিনি জানিয়েছেন, অ্যাকাউন্টটি খোলার জন্য ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান আনসার আলি সাহানা, তাঁর ছেলে হাবিব এবং ব্যাঙ্কের এক কর্মী বেশ কয়েক বার তাঁর বাড়িতে যান। রঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘আমাকে ওঁরা বলেছিলেন, নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা দিলে পনেরো দিনের মধ্যে ২৫ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়া হবে। ওঁদের বিশ্বাস করে বহু কষ্টে টাকা জোগাড় করে ব্যাঙ্কে জমা দিই।” বলাইবাহুল্য, ঋণ পাননি রঞ্জনবাবু। তারপর থেকে টাকা ফেরত চেয়েও পাচ্ছেন না বলে তাঁর অভিযোগ। চাঁপাডাঙা, বালিগোড়ি, খানাকুলের বালিপুরের অনেকে এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন বলে দাবি পুলিশের। গ্রাহকদের আরও অভিযোগ, ইতিমধ্যেই ব্যাঙ্কের চাঁপাডাঙা শাখা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খোলা হচ্ছে না বালিগোড়ী শাখাও। তারকেশ্বর শাখা অফিস মাঝে মধ্যেই বন্ধ থাকছে। হাবিব বলেন, “আমি ব্যাঙ্কের ব্যাপারে কিছুই বলব না। আমি ব্যাঙ্কের কোনও ব্যাপারে যুক্ত নই।”
চেয়ারম্যান আনসার আলি সাহানার সঙ্গে বহু বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি টেলিফোন ধরেননি। গত শুক্রবার চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করতে গেলে ব্যাঙ্কের কর্মীরা বলেন, “উনি মিটিং করছেন। কিছু বলার থাকলে আমাদের বলুন।” প্রায় আধ ঘণ্টা পরে সেখানে হাজির হন তারকেশ্বরের জিয়ারার এক গ্রাহক। ব্যাঙ্কের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে চেয়ারম্যানকে টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়ে চিৎকার-চেঁচামিচি শুরু করেন তিনি। বেরিয়ে আসেন স্বয়ং চেয়ারম্যান। যদিও ‘সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি’ পরিচয় দিয়ে কথা বলতে গেলে আনসার নিজেই বলেন, “চেয়ারম্যান এখন নেই। অন্য দিন আসবেন।” এই বলে তিনি ভিতরে চলে যান। |