|
|
|
|
কর্মসংস্থানের জন্য জমি দিন, আবেদন এ বার মমতারই |
গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় • ফুরফুরা শরিফ |
জমি-আন্দোলনের ‘ফসল’ তুলেই রাজ্যে তাঁর ক্ষমতায় আরোহণ। সেই জমির জন্যই জনতার দরবারে আবেদন জানাতে হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
রেলমন্ত্রী থাকাকালীন যে প্রকল্পের শিলান্যাস করেছিলেন তিনি, সেখানেই এখন জমি পেতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে রেলকে। আসরে নামতে হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে। বলতে হচ্ছে, “জমি নিলে রেল চাকরি দেয়। টাকাও দেয়। রেলপথ তৈরি হলে কর্মসংস্থান হয়। রাজ্যে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যেই রেলকে জমি দিন।”
ঘটনাচক্র এক: মুখ্যমন্ত্রী মমতা এই আবেদন জানাচ্ছেন ফুরফুরা শরিফ থেকে ডানকুনি পর্যন্ত রেলপথের কাজের জন্য। যে প্রকল্প হুগলি জেলার। যে জেলার সিঙ্গুর তৃণমূল নেত্রী মমতার জমি-আন্দোলনের অন্যতম ‘স্মারক’!
ঘটনাচক্র দুই: হুগলি জেলার মাটিতে দাঁড়িয়ে মমতা যখন জমির জন্য জনতার কাছে আর্জি জানাচ্ছেন, সেই সময়ে তাঁরই উদ্যোগে তাঁর সরকারের বর্ষপূর্তি পালনের প্রক্রিয়া চলছে। জমি-আন্দোলনই যে সরকারের ক্ষমতায় আসার অন্যতম ‘ভিত’! |
|
শ্রদ্ধাবনত। বৃহস্পতিবার ফুরফুরা শরিফে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: দেবাশিস রায় |
ফুরফুরা শরিফে এসে বৃহস্পতিবার সংখ্যালঘুদের জন্য একগুচ্ছ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন মমতা। তারই মধ্যে খোঁজখবর করেছেন, ডানকুনি থেকে ফুরফুরা শরিফ, ২২ কিলোমিটার রেলপথের কাজ কী অবস্থায় আছে। সেই সূত্রেই জানতে পেরেছেন জমি-জটের কথা। রেল সূত্রের খবর, প্রকল্পের কাজ যে ঢিমে তালে চলছে, সে কথা জানানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে। জনতার উদ্দেশে মমতা তাই বলেছেন, “এই রেল প্রকল্পের কাজে আপনাদের সহযোগিতা চাই। আপনারা সাহায্য করবেন তো?” জনতা অবশ্য সামনা-সামনি ‘হতাশ’ করেনি মুখ্যমন্ত্রীকে। সমস্বরে উত্তর দিয়েছে, “হ্যাঁ!”
ফুরফুরা শরিফ থেকে ডানকুনি হয়ে তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর পর্যন্ত রেলপথের কাজ চলছে কয়েক বছর ধরে। কয়েকটি জায়গায় তা শেষের পথে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, আগামী ৪ জুন আরামবাগ-তারকেশ্বর রেলপথের উদ্বোধন করতে আরামবাগে যাবেন তিনি। দিন পনেরোর মধ্যে ডানকুনিতে রেলের যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানার উদ্বোধন করতেও আসবেন।
বস্তুত, ফুরফুরা শরিফ থেকে ডানকুনি হয়ে বিষ্ণুপুর পর্যন্ত রেলপথের কাজে বিভিন্ন সময়ে নানা জায়গায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। রেলের নিজস্ব কিছু সমস্যা তো আছেই, সেই সঙ্গে ঠিকাদার সংস্থার ‘গাফিলতি’র কথাও জানিয়েছেন রেলকর্তারা। আরামবাগে ‘রাজনৈতিক বাধা’য় জমি অধিগ্রহণের কাজে সমস্যা হচ্ছে বলেও এর আগে অভিযোগ উঠেছে। চণ্ডীতলা থেকে ডানকুনি পর্যন্ত অংশে জমি পেতেও সমস্যা হচ্ছে। ডানকুনিতে রেলের কারখানা তৈরির সময়েই গড়ে উঠেছিল ‘ডানকুনি-চণ্ডীতলা জমি বাঁচাও কমিটি’। কমিটির অন্যতম নেতা তথা প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক ভক্তরাম পানের বক্তব্য, “কাজ কবে হবে, তা রেলই বলতে পারবে। তবে ডানকুনি-ফুরফুরা শরিফ রেলপথ তৈরি হলে চণ্ডীতলার কালীপুরে বহু বাড়ি ভাঙা পড়বে।” তা হলে কি কমিটি রেলের জমি অধিগ্রহণের কাজে বাধা দেবে? এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন ভক্তরামবাবু।
এ দিনের অনুষ্ঠানে পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকি ছাড়াও ছিলেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, আবাসন প্রতিমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, রাজ্য সংখ্যালঘু বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু আয়েশ মণ্ডল, বোর্ডের কর্তা খলিল আহমেদ প্রমুখ। মুখ্যমন্ত্রী ফুরফুরা শরিফে একটি আইটিআই কলেজ, দু’টি মহাফেজখানা তৈরি-সহ একাধিক প্রকল্প ঘোষণা করেছেন। জেলার কয়েক জন কৃতী মুসলিম পড়ুয়ার হাতে সরকারি প্রকল্পে আর্থিক সাহায্যও তুলে দিয়েছেন। |
|
|
|
|
|