|
|
|
|
দৌত্যে আরএসপি |
খুনে জড়াচ্ছে সিপিএম, ফুঁসছে ভিএস গোষ্ঠী |
সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
দলত্যাগী নেতার খুনের ঘটনা ঘিরে সঙ্কট ঘোরালো হচ্ছে সিপিএমে।
এক দিকে, কেরল পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল সিপিএমের প্রাক্তন নেতার খুনের ঘটনায় সিপিএমেরই দুই নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। অন্য দিকে, দলীয় দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এনে সঙ্কট আরও না-বাড়ানোর অনুরোধ নিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ভি এস অচ্যুতানন্দনের কাছে দরবার করতে নেমেছে আরএসপি। তাতে আপাতত রফা-সূত্র মেলেনি। বরং, দলের কর্মীদের গ্রেফতারের জেরে পিনারাই বিজয়ন ও সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঘনীভূত হচ্ছে ভি এস শিবিরে। যার জের এসে পড়ছে পলিটব্যুরোতেও। ভি এসের পাশে দাঁড়াতে চাইছে পলিটব্যুরোর একাংশ। অন্য অংশ কেন্দ্রীয় কমিটিতেই ভি এস-কে ‘চরম হুঁশিয়ারি’ দিতে চাইছে!
মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে সম্প্রতি কেরলের কোঝিকোড় জেলায় খুন হন প্রাক্তন সিপিএম নেতা টি পি চন্দ্রশেখরন। চার বছর আগে সিপিএমের সঙ্গে সম্পর্ক চুকে যাওয়ার পরে তিনি আরএমপি নামে নতুন দল গড়েছিলেন। টি পি-হত্যার তদন্তে গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল মঙ্গল ও বুধবার যাঁদের গ্রেফতার করেছে, তার মধ্যে আছেন কোঝিকোড়ে সিপিএমের দু’টি লোকাল কমিটির দুই সদস্য পি রবীন্দ্রন এবং কে সি রামচন্দ্রন। পুলিশের দাবি, ‘ব্যক্তিগত কারণে’ টি পি-কে খুন করার জন্য রামচন্দ্রন ঘাতকদের একটি দলকে টাকা দিয়েছিলেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উমেন চান্ডি বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, খুনের ঘটনায় জড়িত কাউকেই ছাড়া হবে না। তাঁর ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক পরিচয় যা-ই হোক।
ঘটনা এমন মোড় নেওয়ায় প্রবল ‘অস্বস্তি’তে সিপিএম নেতৃত্ব। টি পি খুনের পরে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিজয়ন মন্তব্য করেন, যে ‘বিশ্বাসঘাতক’, সে ‘বিশ্বাসঘাতক’ই থাকে। তাঁর ওই মন্তব্যের সঙ্গে খুনের তদন্তে সিপিএমের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের ঘটনাকে এক করে দেখছে বিজয়ন-বিরোধী শিবির। ওই মন্তব্যের প্রতিবাদ করেই বিজয়নের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছেন ভি এস। এর জেরে রাজ্য সম্পাদককে অভিহিত করেছেন ‘এস এ ডাঙ্গের মতো স্বৈরতান্ত্রিক’ বলে! পলিটব্যুরোর পরামর্শে বিজয়ন দলের রাজ্য নেতৃত্বকে নির্দেশ দেন, আপাতত ভি এস-কে নিয়ে মন্তব্যে না-যেতে। কিন্তু গত দু’দিনের ঘটনা নতুন ‘বিড়ম্বনা’য় ফেলেছে সিপিএমকে। নিহত টি পি-র স্ত্রীর অভিযোগ, তদন্ত থেকে বোঝা যাচ্ছে, খুনের ছক সিপিএম নেতৃত্বেরই। যদিও তিরুঅনন্তপুরম থেকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য বলেন, “পুলিশ বলছে, ধৃত নেতা বলেছেন ব্যক্তিগত কারণে এই কাজ করেছেন। দল হিসাবে সিপিএম-কে জড়ানো ঠিক নয়।”
সিপিএমের নেতা-কর্মীরা পুলিশের জালে পড়ার আগেই বিবাদমান দুই শিবিরের মধ্যে ‘দৌত্য’ করতে নেমেছিল আরএসপি। বিজয়নের সঙ্গে কথা বলেই আরএসপি-র সাধারণ সম্পাদক টি জে চন্দ্রচূড়ন এবং প্রাক্তন মন্ত্রী এন কে প্রেমচন্দ্রন গিয়েছিলেন ভি এসের সঙ্গে দেখা করতে। বিজয়ন যখন ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে ‘নবকেরল যাত্রা’ করছিলেন, প্রাথমিক আপত্তি সত্ত্বেও তার শেষ পর্বে ভি এস যোগ দিয়েছিলেন আরএসপি-র মধ্যস্থতাতেই। এ বার হাতে-গরম ফল মেলেনি। ভি এস ‘নরম’ হতে রাজি হননি বলেই আরএসপি সূত্রের খবর। আরএসপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, “এই সঙ্কটের সময় সিপিএমের মধ্যে এমন বিবাদ বামপন্থীদের পক্ষেই ক্ষতিকর। ব্যক্তিতান্ত্রিক ঝোঁক তাঁর মধ্যে থাকলেও ভি এসের মতো নেতাকে বাম আন্দোলনের জন্য দরকার। তাই আলোচনা চালাতে চেয়েছি।” ২ জুন তিরুঅনন্তপুরমের নেয়াট্টিঙ্কারা কেন্দ্রে বিধানসভা উপনির্বাচন। তার আগে বিজয়ন-শিবির মুখ বন্ধ করে থাকতে চাইছে। কিন্তু ৯-১০ জুন দিল্লিতে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে তারা এই প্রশ্নে হেস্তনেস্ত চায়। শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ এর মধ্যেও বিরোধী শিবিরের আক্রমণ থেকে ভি এস-কে রক্ষা করতে চায়। পলিটব্যুরোর এক সদস্যের কথায়, “ভি এস-কে পলিটব্যুরোয় না-নেওয়ায় পরিস্থিতি জটিল। এর পরে তাঁকে শাস্তি দিলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে।”
নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম বৈঠকেই দলের শীর্ষ নেতাদের রাজ্যওয়াড়ি দায়িত্বের পুনর্বণ্টন হবে। দলীয় সূত্রে খবর, তেমন রদবদল হচ্ছে না। রাজ্যের বাইরে সময় দিতে না-পারায় বিমান বসু অসমের দায়িত্ব থেকে ‘অব্যাহতি’ পেতে পারেন। কারাট যথারীতি উত্তরপ্রদেশ ও পঞ্জাবের ভার হাতে রাখতে পারেন। ওড়িশার যৌথ দায়িত্বে থাকার কথা পলিটব্যুরোর নতুন সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্রের। |
|
|
|
|
|