রায়বরেলী
আটকে পড়া রেল প্রকল্প চালু করুন, মুকুলকে বললেন সনিয়া
মির বদলে চাকরি নীতি চালু করে এখন নিজেই প্যাঁচে পড়েছে রেল। আর সেই প্যাঁচে আটকে যাওয়া রেল প্রকল্প চালু করার জন্য এ বার রেলমন্ত্রীকে অনুরোধ করলেন স্বয়ং সনিয়া গাঁধী।
সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের হাত ধরে নির্বাচনী যুদ্ধে বিপুল সাফল্য পাওয়ার পরে রেলের জমিনীতিতে বড়সড় বদল আনেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেলের প্রকল্পে জমিদাতাদের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১০ সালে তাদের জমি অধিগ্রহণ নীতিতে পরিবর্তন আনে রেল। আর সেই পরিবর্তিত নীতির ফাঁদেই এখন আটকা পড়েছে রেল। যাঁরা ওই নিয়ম চালু হওয়ার আগে রেলের প্রকল্পে স্বেচ্ছায় জমি দিয়েছিলেন, তাঁরাই এখন চাকরির দাবিতে বেঁকে বসেছেন! যার জেরে বহু প্রকল্পের কাজ থমকে গিয়েছে বলে জানিয়েছে রেল মন্ত্রক। এই পরিস্থিতিতে নিজের লোকসভা কেন্দ্র রায়বরেলীর একটি রেল প্রকল্পের আন্দোলনজনিত সমস্যা মেটাতে রেলমন্ত্রী মুকুল রায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন সনিয়া। দ্রুত সমস্যা মিটিয়ে কারখানাটি চালু করতে বলেছেন তাঁকে।
রেলের প্রকল্পে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে জমি অধিগ্রহণের নীতিই বরাবর অনুসরণ করেছে রেল মন্ত্রক। কিন্তু মমতা সেই নিয়মের আংশিক পরিবর্তন করে ২০১০ সালের জুলাই-এ একটি সার্কুলার জারি করেন। তাতে বলা হয়েছিল, ওই সার্কুলার জারির পর থেকে রেলের প্রকল্পে জমি দানকারী ইচ্ছুক পরিবারের এক জনকে রেলে চাকরি দেওয়া হবে।
সমস্যার শুরুও তখন থেকেই। ওই নিয়ম চালু হওয়ার আগে রেলের বিভিন্ন প্রকল্পে যাঁরা স্বেচ্ছায় জমি দিয়েছিলেন, তাঁরাও এখন চাকরির দাবিতে সরব হয়েছেন। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, সে সময় তাঁরা স্বেচ্ছায় জমি দিলেও অনেকেই দিতে চাননি। চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওই সার্কুলার জারি হওয়ার পরে সেই অনিচ্ছুকরাই জমি দিয়ে চাকরি পেয়েছেন। একই প্রকল্পে জমিদাতাদের ক্ষতিপূরণের প্রশ্নে রেল কেন বিভেদ করবে, তা নিয়েই সরব তাঁরা। দাবি, প্রয়োজন ক্ষতিপূরণ ফিরিয়ে নিক রেল। বদলে চাকরি দেওয়া হোক সকলকেই। মন্ত্রকের বক্তব্য, চাকরির সুবিধা তাঁরাই পাবেন, যাঁরা সার্কুলার জারির পরে জমি দিয়েছেন। আন্দোলনকারীরা সেই যুক্তি মানতে নারাজ। এই জটিলতা কী ভাবে সামলানো যাবে, তার পথ খুঁজে পাচ্ছেন না রেল কর্তারা। আজ রেলমন্ত্রী মুকুল রায়ও বলেন, “আমার হাত-পা বাঁধা। নিয়মের বাইরে গিয়ে কিছু করা খুব কঠিন।”
জমি নিয়ে স্থানীয়দের বিক্ষোভে বন্ধ হয়ে গিয়েছে রায়বরেলী থেকে ছাপরা পর্যন্ত বহু প্রকল্পের কাজ। রায়বরেলীর রেল কোচ কারখানাটি চালুর ব্যাপারে মাঠে নেমেছেন সনিয়া। স্থানীয় আন্দোলনকারীদের রেলে চাকরি দিয়ে সমস্যা মেটানো যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতে রেলমন্ত্রীকে আর্জি জানান তিনি।
বিহারের ছাপড়া ও মাড়হাওড়ার ছবিটাও কমবেশি একই রকম। ২০০৭ সালে বিহারের সারণ জেলায় মাড়হাওড়ায় একটি লোকো কারখানার ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব। ওই প্রকল্পের জন্য রেল দফায় দফায় ক্ষতিপূরণ দিয়ে জমি অধিগ্রহণ করে। কিন্তু ২০১০ সালে ওই নীতি প্রণয়ন হওয়ার পরে প্রথম পর্বে যাঁরা জমি দিয়েছিলেন, তাঁরা চাকরির দাবিতে সরব হয়েছেন। এক সমস্যা ছাপরাতেও। জটিলতা কাটাতে গত কাল ছাপরা ও মাড়হাওড়ার প্রকল্প দু’টি নিয়ে আলোচনা করতে রেলমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন বিহারের বিজেপি সাংসদ শাহনওয়াজ হুসেন ও রাজীবপ্রতাপ রুডি। আজ রেলমন্ত্রী মুকুল রায় বলেন, “বিহারের দু’টি প্রকল্প নিয়ে যে জট রয়েছে তা দ্রুত খুলে যাবে।” কিন্তু কোন পথে, তার জবাব নেই কারও কাছে।
তবে রেল মন্ত্রকের এখন শিরে সংক্রান্তি রায়বরেলীর প্রকল্পটি নিয়ে। বিশেষ করে সনিয়া মাঠে নামায় নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছেন রেল কর্তারা। রেল মন্ত্রকের পরিকল্পনা রয়েছে, জট কাটিয়ে আগামী মাসে কারখানাটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার। কারখানাটি চালু হলে তাতে প্রায় ৫০০০ জন এবং অনুসারী শিল্পেও সমসংখ্যক বা তার বেশি লোকের চাকরির সম্ভাবনা রয়েছে।
পরিকল্পনা যা-ই থাকুক, প্রকল্পটি ঘিরে স্থানীয় মানুষের বিক্ষোভ কী ভাবে সামাল দেওয়া যাবে, সেটিই এখন রেলকর্তাদের কাছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.