জঙ্গলমহলে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পূর্বতন বাম সরকার জিন্দল গোষ্ঠীর ইস্পাত-লগ্নি এনেছিল শালবনীতে। পালাবদলের পরে নতুন সরকারও একই লক্ষ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ে উৎপাদন শিল্পতালুক (ম্যানুফ্যাকচারিং হাব) গড়তে চলেছে। এ ব্যাপারে শিল্পমহলের থেকে আগ্রহপত্র চেয়েছে তারা। আগ্রহপত্র চাওয়া হয়েছে ‘মাস্টার প্ল্যান’ বা পরিকাঠামো-সহ পুরো তালুকটির নকশা তৈরি করার ক্ষেত্রেও।
শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, বামফ্রন্ট সরকার পিছিয়ে পড়া জঙ্গলমহলে উন্নয়নের কোনও পরিকল্পনাই তৈরি করতে পারেনি। কিন্তু এই শিল্পতালুক সার্বিক ভাবে অনেক বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেবে। সাহায্য করবে এলাকার বিচ্ছিন্নতাবাদ আন্দোলনে যুক্তদের মূল স্রোতে ফিরতে। শিল্পমন্ত্রী বলেন, “প্রকল্পের জন্য চিহ্নিত জমিটি শিল্প স্থাপনের উপযোগী। যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভালো।” সাম্প্রতিক সিঙ্গাপুর সফরে সেখানকার জুরং গোষ্ঠীকেও এই ধরনের পরিকল্পনা রূপায়ণে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছেন তিনি।
নিগম ও শিল্প দফতর সূত্রের খবর, গোয়ালতোড়ে কৃষি দফতরের অধীন ওই জমি কার্যত পড়েই ছিল এতদিন। এ বার সেটিকে শিল্পের কাজে লাগাতে চায় রাজ্য। সম্প্রতি নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টরের তরফে এ ব্যাপারে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রায় ৯৫০ একর জমি রয়েছে। এবং সেখানে একটি ‘ম্যানুফ্যাকচারিং হাব’ তৈরির পরিকল্পনা নিগমের। এ জন্য আগ্রহী সংস্থার কাছ থেকে প্রস্তাব চেয়েছে তারা। প্রস্তাবিত প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ তথ্য, সংস্থার নির্ভরযোগ্যতা, প্রয়োজনীয় জমির পরিমাণ ইত্যাদি সাদা কাগজে লিখে নিগমের দফতরে পাঠাতে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি, নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টরেরই জারি করা আর এক বিজ্ঞপ্তিতে শিল্পতালুকের মাস্টার প্ল্যান তৈরির জন্য উপদেষ্টা সংস্থাগুলির কাছ থেকে আগ্রহপত্র চাওয়া হয়েছে। জমির ব্যবহার, পরিকাঠামো-সহ গোটা তালুকটির নকশা কী রকম হবে, সেই পরিকল্পনাই যার মূল বিষয়। নিগম সূত্রের খবর, আগামী সপ্তাহে আগ্রহপত্রগুলি খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হতে পারে।
পার্থবাবু জানিয়েছেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলা, মহেশতলা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের আরও ৫-৬টি শিল্প তালুক গড়ার পরিকল্পনা আছে তাঁদের। যেমন, ইতিমধ্যেই মহেশতলা পুরসভাকে জমির ব্যাপারে সহযোগিতা করতে বলেছে শিল্প দফতর। শিল্পোন্নয়ন নিগমের পাশাপাশি শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগমও তা গড়তে পারে। আবার যৌথ উদ্যোগেও তা তৈরি হতে পারে বলে ইঙ্গিত শিল্পমন্ত্রীর।
তবে শিল্পের জন্য জোর করে জমি না নেওয়ার ব্যাপারে রাজ্য সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা কঠোর ভাবে মেনে চলা হবে বলে এই পরিপ্রেক্ষিতে আরও একবার জানিয়ে দেন শিল্পমন্ত্রী। তিনি বলেন, “কোথায় জমি পড়ে রয়েছে বা কোন সংস্থা জমি নিয়েও তা ফেলে রেখেছে, নতুন শিল্প গড়ার জন্য সেগুলিই চিহ্নিত করা হচ্ছে। কিন্তু আগের সরকারের মতো আমরা শিল্প গড়তে জোর করে কারও থেকে জমি নেব না।”
নিগম সূত্রের খবর, বিভিন্ন শিল্পতালুকে এখনও কিছু জমি খালি রয়েছে। তাদের হিসেব অনুযায়ী, এখন যে সব শিল্প -তালুকে জায়গা রয়েছে, তা এই রকম-
• পানাগড়ে প্রায় ৭০০ একর,
• রঘুনাথপুরে প্রায় ৫৫০ একর,
• নৈহাটির ঋষি বঙ্কিম পার্কে প্রায় ৮৭ একর,
• খড়্গপুরের কাছে বিদ্যাসাগর পার্কে প্রায় ৪০০ একর,
• বড়জোড়াতে প্রায় ৪০ একর।
তবে শিল্প সংস্থারও চাহিদা যতটা রয়েছে তাতে অচিরেই সেই সব শিল্পতালুক ভরে যাবে বলে দাবি নিগমের কর্তাদের। |