বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়
বহাল ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ শিক্ষাকর্মী, বাংলা বিভাগে ‘পদত্যাগ’
ক চতুর্থ শ্রেণির কর্মীকে বদলি করেও বিভাগে ফেরানোর প্রতিবাদে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান-সহ তিন শিক্ষক পড়ানো ছাড়া বাকি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। বৃহস্পতিবার ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ষোড়শীমোহন দাঁ-র কাছে তাঁরা ‘পদত্যাগপত্র’ জমা দেন। তবে রেজিস্ট্রার শ্রীপতি মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “তিন শিক্ষকের পদত্যাগ নিয়ে রাজনীতির খেলা চলছে।”
যে তিন শিক্ষক এই পদক্ষেপ করেছেন তাঁদের মধ্যে বাংলা বিভাগের প্রধান অলোক চক্রবর্তী ছাড়াও রয়েছেন রমেন সর ও অরুণকুমার ঘোষ। রমেনবাবু বিভাগের নৈশ শাখার দায়িত্বে আছেন। সাঁওতালি ভাষা বিভাগে ও উচ্চতর বিদ্যাচর্চা কেন্দ্রের বিশেষ দায়িত্বে আছেন অরুণবাবু। তাঁদের বক্তব্য, “রেজিষ্ট্রারকে বারবার বলা সত্ত্বেও ওই কর্মীকে বিভাগে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আমরা যথারীতি ক্লাস নেব। তবে তার বাইরে অতিরিক্ত কোনও দায়িত্ব আর পালন করব না।”
তিন শিক্ষক এই পদক্ষেপ করার পরেই বাংলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের কাছে গিয়ে স্মারকলিপি জমা দেন। তাঁদের বক্তব্য, ‘পদত্যাগপত্র’ গৃহীত হলে তাঁরা সমস্যায় পড়বেন। এমএ চতুর্থ সেমিস্টারের পরীক্ষাও সামনে। ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অবশ্য বলেন, “তিনটি পদত্যাগপত্র রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।” রেজিস্ট্রার শ্রীপতি মুখোপাধ্যায় আবার বলেন, “ওই কর্মীর সঙ্গে আরও ১০ জনকে বদলি করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের, আমার একার নয়। এর প্রতিবাদে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে ওঁরা ঠিক করেননি।”
নিশিকান্ত নন্দী নামে যে শিক্ষাকর্মীকে নিয়ে এই গণ্ডগোল, তাঁর বিরুদ্ধে ভুরি-ভুরি অভিযোগ রয়েছে শিক্ষকদের। অলোকবাবুদের অভিযোগ, ওই কর্মী দুর্নীতিতে জড়িত। তিনি বিভাগীয় প্রধানের নির্দেশ শোনেন না। এমনকী গবেষণার কাজে কোন ছাত্র বা ছাত্রীকে নেওয়া হবে, সেই ব্যাপারেও তিনি হস্তক্ষেপ করতেন। এই নিয়ে অনেক শিক্ষকেরই ক্ষোভ ছিল। মৌখিক ভাবে কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানোও হয়। গত ২ মার্চ নিশিকান্তবাবুকে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে বদলি করা হয়েছিল। কিন্তু দিন দশেক আগে তাঁকে ফের বাংলা বিভাগে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ দিনই সেই বদলির নির্দেশ বিভাগে পৌঁছেছে।
নিশিকান্তবাবু পাল্টা বলেন, “আমি টানা ২৭ বছর বাংলা বিভাগে কাজ করেছি। সেখানকার সব কিছু আমার নখদর্পণে। ওখানে রাতেও কাজের সুযোগ রয়েছে। তার জন্য অতিরিক্ত হাজার টাকা মেলে। সেটা আমার দরকার। কেন ওই তিন স্যার আমার উপরে রেগে গিয়েছেন, বুঝতে পারছি না। তবে কর্তৃপক্ষ আমায় যেখানে কাজ করতে বলবেন, সেখানেই করব।” বাম জমানায় নিশিকান্তবাবু সিপিএম-ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত ছিলেন। কিন্তু এখন ‘পরিস্থিতি’ পাল্টে গিয়েছে। টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সভাপতি নির্ভীক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সম্পাদক সন্তু ঘোষের মতে, “তিন জনের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত মোটেই শিক্ষকসুলভ নয়। হঠকারি সিদ্ধান্ত।” এ প্রসঙ্গে বাংলার বিভাগীয় প্রধানের বক্তব্য, “বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাপ দিয়ে আমাদের ওই বদলির নির্দেশ মানতে বাধ্য করছেন। তারই প্রতিবাদে আমরা পদত্যাগ করেছি।” রেজিস্ট্রার পাল্টা বলেন, “ওঁরা যদি লিখিত ভাবে ওই শিক্ষাকর্মীকে বাংলা বিভাগে না দেওয়ার জন্য আমায় বলতেন, সেটা বিবেচনা করতাম। কিন্তু ওঁরা পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। আমার কাছে বাংলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা এসেছিলেন। আমি ওঁদের বলেছি, তোমরা রাজনীতির মধ্যে জড়িও না। লেখাপড়ায় মন দাও।” এই পদত্যাগ নিয়ে ‘রাজনীতির খেলা’ চলছে বলে তিনি মন্তব্য করায় বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের কাছে দরবার করেন। তিন শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে ষোড়ষীবাবু তাঁদের আশ্বাস দিয়েছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.