সাইকেলই ধরিয়ে দিল অভিযুক্তকে।
ঘটনার দু’মাসের মাথায়। কাটোয়ার কাছারি পাড়ায় গৃহকর্ত্রী বিজলি দাসকে (৫৩) খুনের অভিযোগে তাঁর দেওর অশোক দাসকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিকেলে অশোকবাবুকে তাঁর নিজের বাড়ি থেকেই ধরা হয়।
পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “বাড়ি এবং বিভিন্ন লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কিছু সূত্র পাওয়া গিয়েছিল। সেই সূত্র ধরেই অশোকবাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। খুনের কারণ জানতে ওঁকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার। তাই অভিযুক্তের পুলিশ হেফাজতের জন্য আদালতে আবেদন করা হবে।” তবে, পারিবারিক কোনও বিবাদেই এই খুন কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
|
অশোক দাস। নিজস্ব চিত্র। |
গত ১৬ মার্চ রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ বিজলিদেবীকে প্রথম মৃত অবস্থায় দেখতে পান তাঁর জামাই, হাসপাতাল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা মিঠু মণ্ডল। শ্যালক সন্দীপের কথা মতো শাশুড়িকে রাতের খাবার দিতে ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দোতলায় উঠে কারও সাড়াশব্দ না পেয়ে ঘরের শিকল খুলতেই দেখেন ওই দৃশ্য। এর পরে মিঠুবাবুই পাশের ঘর থেকে ডেকে তোলেন অশোকবাবুকে। বাইরে বেরিয়ে এসে চিৎকার করে লোকজন ডাকেন।
রাতেই বিজলিদেবীর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের সন্দেহ ছিল, বিছানার উপরেই প্রথমে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় বিজলিদেবীকে। এর পরে তাঁর গলায় কাপড়ের ফাঁস লাগিয়ে খাট লাগোয়া জানলায় লোহার রডে বেঁধে ফেলে খুনি। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়, মৃতদেহের মাথার পিছনে আঘাত ছিল। শরীরের বিভিন্ন অংশে ছিল স্পষ্ট ধস্তাধস্তির চিহ্ন।
ঘটনার পর থেকে দফায় দফায় জেরা করা হয়েছে অশোকবাবু, বিজলিদেবীর ছেলে সন্দীপ এবং জামাই মিঠু মণ্ডলকে। কুকুর এনে তল্লাশিও চলে। কিন্তু প্রমাণের অভাবে কাউকেই গ্রেফতার করা যায়নি।
সপ্তাহ দেড়েক আগে এলাকারই এক যুবকের থেকে নতুন একটি তথ্য পান বাসিন্দারা। জানা যায়, ঘটনার দিন রাত আটটা থেকে ন’টার মধ্যে বিজলিদেবীর বাড়ির গায়ে একটি সাইকেল রাখা ছিল। পাড়ার লোক জন খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন, ওই সাইকেলটি ছিল অশোকবাবুরই। সেই মতো তাঁরা পুলিশকে ঘটনাটি জানান। পুলিশের সন্দেহের খাতায় আগে থেকেই ছিল অশোকবাবু আর মিঠুবাবুর নাম। পুলিশ এর পরে সাইকেল নিয়ে দু’জনকেই থানায় দেখা করতে বলে। পুলিশ জানিয়েছে, মিঠুবাবু নিজের সাইকেল নিয়ে থানায় এলেও অশোকবাবু এসেছিলেন পরিচিত এক জনের সাইকেল নিয়ে। পরে পুলিশ তা জানতে পেরে অশোকবাবুকে ফের নিজের সাইকেল নিয়েই থানায় এসে দেখা করতে বলে। স্থানীয় সেই যুবককে পরে থানায় ডেকে পাঠিয়ে সাইকেলটি দেখানো হলে তিনি সেটি চিহ্নিত করেন।
কিন্তু, রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে অশোকবাবু ঠিক কোন জায়গায় ছিলেন তা নিয়ে তাঁর বক্তব্যে অসঙ্গতি খুঁজে পায় পুলিশ। এর পরেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
সন্ধ্যায় বিজলিদেবীর ছেলে সন্দীপবাবু বলেন, “আমাদেরও কাকার প্রতি সন্দেহ ছিল। পুলিশ যেন যথেষ্ট প্রমাণ সংগ্রহ করে।” পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়া পুরসভার পিছনে স্কুল কম্পাউন্ড রোডের প্রথম গলিতে অশোকবাবুর নিজের বাড়ি। সেখানে থাকেন তাঁর স্ত্রী এবং ছেলে। কিন্তু প্রতি দিন রাতে সেখানে খাওয়াদাওয়া করে ঘুমনোর জন্য পৈত্রিক বাড়িতে চলে আসতেন অশোকবাবু। |