কারও ভাল লাগে শরৎ-বঙ্কিম। কারও ধ্যানজ্ঞান সচিন। কারও আবার ক্রিকেট একেবারে ভাল লাগে না। এক জায়গায় অবশ্য তাদের সকলেরই পছন্দ মেলে। ফিজিক্স, কেমিস্ট্রির বই নিয়ে সময় কাটাতে ভালবাসে তারা সবাই।
জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় জেলার মুখ উজ্জ্বল করেছে এই ছয় পড়ুয়া। তাদের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান পাওয়া শৌভিক চক্রবর্তী ও রাজা মাজি বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলের ছাত্র। মেডিক্যালের সপ্তম স্থানাধিকারী অর্ণব মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি রানিগঞ্জের বাঁশড়ায়। অর্ণব অবশ্য পড়াশোনা করেছে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে। মেডিক্যালে ১৩ নম্বরে নাম থাকা অর্পণ সামন্ত বর্ধমানের সিএমএস হাইস্কুলের ছাত্র। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ১৫ তম স্থান পাওয়া শুভম মাইতি ও মেডিক্যালে ১৭তম স্থানে থাকা অর্চি ঘাঁটির বাড়ি দুর্গাপুরে।
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে দ্বিতীয় শৌভিক থাকে বর্ধমানের পীরপুকুরে। বাবা কাশীনাথ চক্রবর্তী রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার। ছেলের লেখাপড়ার জন্য হাটগোবিন্দপুর থেকে শহরে এসে বাড়ি ভাড়া করে রয়েছেন তাঁরা। শৌভিক জানায়, জয়েন্ট এন্ট্রান্সের জন্য দিনে প্রায় ১০ ঘণ্টা পড়াশোনা করেছে সে। তার দাবি, আলাদা কোনও কোচিং নয়, শুধু পাঠ্যবই ভাল ভাবে পড়েই মিলেছে এই সাফল্য। তবে চার জন গৃহশিক্ষকের সাহায্য নিতে হয়েছে তাকে। তার বাবা কাশীনাথবাবু বলেন, “ভবিষ্যতে অ্যাপ্লায়েড ফিজিক্স নিয়ে গবেষণা করতে চায় আমার ছেলে।” |
শৌভিকের সহপাঠী রাজাকে অবশ্য এ দিন বাড়িতে পাওয়া যায়নি। বর্ধমানের খালেরবিলে তার বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, সকালেই সে কলকাতা চলে গিয়েছে। তার মা রিক্তা মাজি বলেন, “আমাদের দেশের বাড়ি চাঁচাইয়ে। উচ্চশিক্ষিত হয়েও আমার স্বামী চাকরি নেননি। নিজেদের জমিতে চাষবাসই করেন।” রাজার যাদবপুরে পড়ার ইচ্ছে। তার বাড়ির লোকজন জানান, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে রাজার নাম প্রথম দশে থাকবে, তা তাঁরা আশা করেছিলেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি ক্রিকেটের পোকা রাজা সচিনের ভক্ত।
মেডিক্যালে ১৩ নম্বরে নাম থাকা অর্পণের বাড়ি বর্ধমানের বাজেপ্রতাপপুরে। তাদের দেশের বাড়ি ভান্ডারডিহির কাছে সরিষাডাঙায়। বাবা অশোক সামন্ত টেলিকম বিভাগের কর্মী। অর্পণ জানায়, জয়েন্টের আগে দিনে প্রায় আট ঘণ্টা লেখাপড়া করত সে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে লেখাপড়া করার ইচ্ছে রয়েছে তার। ডাক্তার হয়ে সে গ্রামের মানুষের সেবা করতে চায় বলে জানায় অর্পণ।
দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার এলাকার বাসিন্দা শুভম এখনও ঠিক করে উঠতে পারেনি, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কোন শাখা নিয়ে পড়বে। তবে পড়াশোনা করতে চায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বাবা সাধনবাবু ব্যাঙ্ককর্মী। দশম শ্রেণি পর্যন্ত সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে পড়াশোনা। উচ্চ মাধ্যমিক হেমশিলা মডেল স্কুলে। ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেট দেখতেও খুব ভাল লাগে, জানাল শুভম। দুর্গাপুর ডিএভি স্কুলের ছাত্রী অর্চির বাবা সজলকান্তিবাবু ডাক্তার। তাঁকে দেখেই ডাক্তারি পড়ার বাসনা, জানাল অর্চি। ফেলুদা ও শার্লক হোমসের ভক্ত এই কিশোরী জানায়, বড় হয়ে সে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হতে চায়। বৃহস্পতিবার ফল বেরোনোর সময়ে অবশ্য এ রাজ্যে ছিল না রানিগঞ্জের বাঁশড়ার অর্ণব। মাধ্যমিকেও ভাল ফল করেছিল সে। অঙ্কে ১০০, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৯ এবং জীবন বিজ্ঞানে ৯৮ নম্বর পেয়েছিল। তার বাড়ির লোকজন জানান, ডাক্তারি পড়তে চাইলেও অর্ণবের লক্ষ্য গবেষণা। শরৎচন্দ্র, বিভূতিভূষণ থেকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সবার লেখাই পছন্দ বলে জানায় এই কিশোর।
|