|
|
|
|
জমি মিলবে কী ভাবে |
খনি অঞ্চলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রস্তাব প্রশ্নের মুখে |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
আসানসোল-রানিগঞ্জে অব্যবহৃত খনির কয়লা দিয়ে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র চালানোর প্রস্তাব এলেও তার বাস্তবায়নের সম্ভাবনা ঘিরে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। এর মূলে রয়েছে জমি-সমস্যা। পাশাপাশি ‘পদ্ধতিগত’ কারণেও প্রস্তাবটির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছুটা সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে বলে কয়লা সংস্থা-সূত্রের খবর।
রাজ্যের খনি অঞ্চলে ১৩০০ মেগাওয়াটের ওই ‘সুপার ক্রিটিক্যাল’ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গড়ার প্রস্তাব দিয়েছে প্রমোদকুমার মিত্তলের সংস্থা। মুখ্যমন্ত্রী তাতে ‘বিশেষ উৎসাহ’ দেখিয়েছেন। কিন্তু জমি পাওয়ার অসুবিধেই যেখানে শিল্পায়নের পথে মূল বাধা, যেখানে এনটিপিসি বা লারসেন অ্যান্ড টুবরো (এলঅ্যান্ডটি)-র প্রকল্প-প্রস্তাবও জমির ফাঁসে আটকে, সেখানে প্রমোদকুমারের প্রকল্পে
জমি কী ভাবে মিলবে, শিল্প দফতরের অনেক অফিসার তা বুঝতে পারছেন না। ওঁদের সংশয়ে বাড়তি মাত্রা জুড়েছে খনি এলাকার জমি বিক্রিতে কোল ইন্ডিয়া’র বিধি-নিষেধ।
কী রকম?
ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেড (ইসিএল)-এর এক সূত্রের ব্যাখ্যা: বর্ধমানের খনি
অঞ্চলে জমি বণ্টনের স্বতন্ত্র নীতি রয়েছে। ভূগর্ভে কয়লা আছে, এমন জায়গায় শিল্প গড়তে জমি দেওয়া হয় না। যে কারণে অন্ডালে বিমাননগরীর প্রস্তাবিত প্রকল্প-এলাকা থেকে বেঙ্গল এরোট্রোপলিস’কে বেশ কিছু জমি ছাড়তে হয়েছে ইসিএলের আপত্তিতে।
প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা সহজ হবে না বলে ইসিএলের সূত্রটি মন্তব্য করেছেন।
পশ্চিমবঙ্গে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার ঠিক পরে পরে রাজ্যে ১৬০০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিল এলঅ্যান্ডটি। প্রস্তাবটি নিয়ে সংস্থার চেয়ারম্যান স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। এলঅ্যান্ডটি এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক ভাবে ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে তৈরি ছিল। কিন্তু পছন্দমতো জমি না-পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত তাদের পিছিয়ে আসতে হয়েছে। রাজ্য শিল্প দফতরের খবর: এলঅ্যান্ডটি ১২০০ একর জমি চেয়েছিল। রাজ্যের তরফে উত্তরবঙ্গ ও পশ্চিম মেদিনীপুরে দু’টো জমি দেখানো হলেও তা তাদের পছন্দ হয়নি। এলঅ্যান্ডটি’র এক সূত্রের বক্তব্য: তাঁরা এমন জায়গায় জমি চেয়েছিলেন, যেখানে জলের সমস্যা নেই, যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভাল। তেমন জমি পাওয়া যায়নি।
এবং উপযুক্ত জমি না-পেলে তাদের পক্ষে যে প্রকল্প বাস্তবায়িত করা সম্ভব নয়, এলঅ্যান্ডটি’র তরফে তা পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলত উদ্যোগটি আপাতত বিশ বাঁও জলে। কাটোয়ায় এনটিপিসি-র প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজও জমিজনিত জটিলতায় থমকে রয়েছে। এনটিপিসি’কে সরাসরি মালিকদের থেকে জমি কিনতে বলে দিয়েছে রাজ্য সরকার। অথচ লালফিতের ফাঁস ও দালাল-দৌরাত্ম্যের মতো বিবিধ বাধায় সে প্রক্রিয়াও সে ভাবে শুরু করা যায়নি।
এই অবস্থায় কয়লা সংস্থার আপত্তির বাধা কাটিয়ে প্রমোদকুমারের প্রকল্পের ভাগ্যে জমির শিকে কতটা ছিঁড়বে, শিল্প দফতরের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে। বস্তুত দফতরের আধিকারিকদের অনেকে বলছেন, এই প্রস্তাবে সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা আসতে পারে ইসিএলের তরফে। যার পিছনে ‘পদ্ধতিগত কারণের’ বড় ভূমিকা থাকতে পারে। সেটা কী?
ইসিএল সূত্রের খবর: প্রমোদকুমারের সংস্থা যে সব অব্যবহৃত খনির কয়লা দিয়ে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে, সম্প্রতি সেই খনিগুলো থেকেই কয়লা তোলার জন্য ডাকা ‘গ্লোবাল টেন্ডারে’ তারা সাড়া দেয়নি। আসানসোল-রানিগঞ্জে পড়ে থাকা এমন বহু খনি এখন জলাধারে পরিণত হয়েছে। ইসিএলের দাবি, খনিগুলো অব্যবহৃত হলেও পরিত্যক্ত নয়। তবে জল-মিথেন-আগুনে ভরপুর এই সব ‘গ্রেড-৩’ খনি থেকে কয়লা উত্তোলন খুব কঠিন। আর্থিক সমস্যার দরুণ ওই কাজের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি আমদানি করাও ইসিএলের সাধ্যের বাইরে। তাই প্রক্রিয়াটি ‘আউটসোর্স’ করতে গত বছর কয়েকটি সংস্থার কাছ থেকে দরপত্র চাওয়া হয়েছিল। তালিকায় প্রমোদকুমারের সংস্থার নামও ছিল। কিন্তু তখন তারা এতে আগ্রহ দেখায়নি।
এবং বছর না-ঘুরতেই একই সংস্থার নতুন প্রস্তাবে কিছুটা বিভ্রান্তি ও সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে বলে ইসিএল-সূত্রের খবর। প্রমোদকুমার শনিবার মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে প্রকল্পের বিস্তারিত পরিকল্পনা জমা দেন। মুখ্যমন্ত্রী এতে যথেষ্ট আগ্রহ দেখিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, উদ্যোগটিতে রাজ্য সরকার যাতে যাবতীয় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, তা নিশ্চিত করতে তিনি রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্তকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে সরকারি সূত্রের খবর। জমির গেরো কাটবে কী ভাবে?
বিদ্যুৎমন্ত্রী অবশ্য মানেন না যে, জমি আদৌ কোনও সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। রবিবার তিনি বলেন, “খনিগুলোর সঙ্গেই জমি রয়েছে। ঠিকঠাক পরিকল্পনা করলে তাতেই প্রকল্প হতে পারে। হলে ওখানে কর্মসংস্থান হবে, অন্যান্য শিল্পও গড়ে উঠবে।” কিন্তু খনি-অঞ্চলে জমি বণ্টনে কোল ইন্ডিয়ার বিধি-নিষেধ?
মনীশবাবু বলছেন, “আমি আশাবাদী। পড়ে থাকা খনিগুলো দিতে কয়লামন্ত্রক আপত্তি করবে কেন?”বিদ্যুৎমন্ত্রী আগেই জানিয়ে রেখেছেন, বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকার শীঘ্রই দিল্লির সঙ্গে কথা বলবে। |
|
|
|
|
|