কড়া ব্যবস্থার ইঙ্গিত পুরমন্ত্রীর
পুকুর খননে দুর্নীতির নালিশ ঝাড়গ্রাম পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে
রাজ্যের ৬ পুরসভায় আসন্ন ভোট নিয়ে সরগরম পরিস্থিতির মধ্যেই বাম-নিয়ন্ত্রিত ঝাড়গ্রাম পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে একটি পুকুর খননকে কেন্দ্র করে কার্যত ‘পুকুর-চুরি’র অভিযোগ তুলেছেন পুরসভার দুই তৃণমূল কাউন্সিলর প্রশান্ত রায় ও শিউলি সিংহ। একই অভিযোগে সরব হয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্বও। ইতিমধ্যে প্রশাসনিক তদন্তও শুরু হয়েছে। প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞায় আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে খনন-কাজ। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে ঝাড়গ্রামের বর্তমান পুরবোর্ডকে ভেঙে দেওয়ার জন্য সরকারি-স্তরে পদক্ষেপ করা হবে।
উপ-পুরপ্রধান সিপিআইয়ের প্রদীপ মৈত্র-র ৭ নম্বর ওয়ার্ডে একটি পুকুর-খননকে ঘিরেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি নথি বলছে, বছর খানেক আগে ওই ওয়ার্ডের কদমকাননের কদমকানালি মৌজায় পুকুর-খননের জন্য ঝাড়গ্রাম পুরসভাকে ৮ লক্ষ ৪৮ হাজার ৯১৬ টাকা বরাদ্দ করেছিল অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতর। অথচ ২০১০-এ একই জায়গায় নিজস্ব উদ্যোগেই খনন-কাজ করেছিল পুরসভা। এতেই শেষ নয়, গত জুলাইয়ে ওই জায়গায় পুকুর থাকার কথা জানিয়ে (জেএল নম্বর: ৩৯৩, প্লট নম্বর: ১৮৮) সংস্কারের জন্য ‘জল ধরো, জল ভরো প্রকল্পে’ পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের কাছেও ফের ৮ লক্ষ ৪৮ হাজার ৯১৬ টাকাই চাওয়া হয়। যদিও ওই টাকা এখনও দেয়নি পুর-দফতর।
পুর-দফতরের কাছে টাকা চাওয়ার মাত্রই মাস ছ’য়েক আগে, গত বছর জানুয়ারিতেই অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের বরাদ্দের চিঠি পেয়েছিল পুরসভা। ওই দফতরের তরফে শর্ত হিসাবে জানিয়ে দেওয়াও হয়েছিল, ‘প্রকল্পটি রূপায়ণের আগে নিশ্চিত করতে হবে যে, অন্য কোনও উৎস (সোর্স) থেকে টাকা (ফান্ড) নেওয়া হয়নি’। যদি অন্য কোনও উৎস থেকে টাকা নেওয়ার কথা জানা যায়, তবে বরাদ্দ ফেরত দিতে হবে বলেও স্পষ্ট জানানো হয়েছিল। অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের বরাদ্দকৃত টাকা পেতে অবশ্য দেরি হয়।
কদমকানন এলাকার সেই বিতর্কিত জায়গা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
গত এপ্রিলের শেষে পুরবোর্ডের মিটিংয়ে পুকুর-খনন বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সপ্তাহখানেক আগে শুরু হয় খনন-কাজ। তৃণমূলের দুই কাউন্সিলর প্রশান্তবাবু ও শিউলিদেবীর অভিযোগ, “অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতর নতুন পুকুর-খননের জন্যই টাকা দিয়েছে। অথচ নিয়ম-বহির্ভূত ভাবে সেই টাকায় পুরনো পুকুর পুনর্খননই করছে পুরসভা।” এলাকাবাসীর একাংশেরও বক্তব্য, আগে ওই জায়গায় একটি ডোবা ছিল। বছর দু’য়েক আগে পুরসভাই নিজস্ব উদ্যোগে একদফা খনন-কাজ করেছিল। এখন সেই পুকুরটিতেই খোঁড়াখুঁড়ি হচ্ছে।
প্রশান্ত রায়, শিউলি সিংহ এবং ঝাড়গ্রামের কংগ্রেস নেতা নিখিল মাইতিরা একযোগে প্রশাসনিক মহলে এই নিয়ে অভিযোগ করেন। তাঁদের বক্তব্য, “পুকুর খননের নামে পুকুর- চুরি করছে ক্ষমতাসীন বাম পুর-কর্তৃপক্ষ। একই পুকুরকে ‘কুমির ছানা’র মতো দেখিয়ে রীতিমতো কারচুপি করা হচ্ছে।” প্রশান্তবাবুদের অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসে অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতর। শুক্রবার খনন-স্থলে গিয়ে অভিযোগ খতিয়ে দেখেন ওই দফতরের মহকুমা আধিকারিক শিবানীশঙ্কর দাস। তিনি বলেন, “শর্তভঙ্গ করে পুকুরটি খনন করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। পুরসভাকে তাই পুকুর-খননের কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
৭ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপিতা তথা উপ-পুরপ্রধান সিপিআইয়ের প্রদীপ মৈত্র-র অবশ্য দাবি, “২০১০ সালে ওই জায়গায় মাটি খোঁড়া হলেও আদপে পুকুর-খনন করা হয়নি। স্থানীয় রাস্তা সংস্কারের প্রয়োজনে ওই জায়গায় মাটি খোঁড়া হয়েছিল। এ বারই প্রথম পুকুরটি খনন করা হচ্ছিল।” অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের পর পুর-দফতরের কাছে ফের টাকা চাওয়ার মধ্যেও অনৈতিক কিছু দেখছেন না উপ-পুরপ্রধান। তাঁর বক্তব্য, “আদিবাসী অধ্যুষিত মৌজায় উন্নয়ন-কাজে একাধিক দফতর থেকে টাকা নেওয়ায় বাধা নেই।” অন্য দিকে, প্রশান্তবাবুদের অভিযোগ পেয়ে গত ২ এপ্রিল রাজ্য পুর-দফতরের যুগ্ম-সচিবও ঝাড়গ্রামের পুর-প্রধানকে চিঠি পাঠিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ করতে বলেছেন। পুরপ্রধান সিপিএমের প্রদীপ সরকারের অবশ্য দাবি, “ওই এলাকায় একই জায়গায় একই দাগ নম্বরে একাধিক পুকুর আছে।” তা কী করে সম্ভবজানতে চাওয়ায় ক্ষুব্ধ পুরপ্রধানের প্রতিক্রিয়া, “বিরোধীরা না-বুঝে বিতর্ক তৈরি করছে। উন্নয়ন-কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এ রকম চললে আমরা অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের টাকা ফেরতই দিয়ে দেব।” অন্য দিকে, পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের হুঁশিয়ারি, “অভিযোগ প্রমাণিত হলে ঝাড়গ্রাম পুরবোর্ড ভেঙে দেওয়ার জন্যও পদক্ষেপ করা হতে পারে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.