তীব্র দাবদাহে কাহিল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা। কড়া রোদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তাপমাত্রার পারদ। কৃষি গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার বালুরঘাটের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছয় প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। জেলা জুড়ে বাড়ছে জলকষ্ট। সেই সঙ্গে পেটের রোগ। সোমবার জলের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বালুরঘাট থেকে হরিরামপুর এলাকা। নলকূপে জল না-ওঠায় পঞ্চায়েত দফতরে তালা ঝুলিয়ে দেয় বাসিন্দারা। দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক দুর্গাদাস গোস্বামী বলেন, “গরমের মাত্রা উদ্বেগজনক ভাবে বেড়েছে। জলের সমস্যা মেটাতে ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” জেলা সভিধিপতি মাগদালিনা মুর্মু বলেন, “পরিস্থিতি সামাল দিতে পুরনো নলকূপ মেরামত করা এবং নতুন নলকূপ বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।” দাবদাহের প্রকোপ দেখে উদ্বিগ্ন কৃষি দফতরের কর্তারা। জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা লক্ষীরাম মান্ডি বলেন, “গরম যে ভাবে বেড়ে চলেছে তাতে সমস্যায় পড়বেন পাট চাষিরা। জলের অভাবে সবজি চাষও মার খাবে।” চলতি মাসে জেলার হরিরামপুর ও কুমারগঞ্জ ব্লকের কিছু এলাকায় কালবৈশাখীর প্রভাবে স্বস্তি ফিরেছিল জেলায়। কিন্তু গত এক সপ্তাহ থেকে গরম হাওয়ার সঙ্গে দাবদাহ বাড়তে থাকায় উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তাপমাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে জলকষ্ট। জেলার মাঝিয়ান কৃষি গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার বালুরঘাটের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছয় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। জেলার তপন, হরিরামপুর, বংশীহারি, কুমারগঞ্জ, কুশমন্ডি এলাকায় জলস্তর নামতে শুরু করেছে। তপন ব্লকের পাহাড়পুর, সন্ধ্যাপুকুর, ডাং মালঞ্চা, হরিবংশীপুর, লস্কর, নিমগাছি, দৌড়গঞ্জ এলাকায় নলকূপ থেকে জল উঠছে না। এলাকার জলাশয়গুলি শুকিয়ে কাঠ হয়েছে। বাধ্য হয়ে নোংরা জল ব্যবহার করে বাসিন্দারা পেটের অসুখে ভুগছেন। তপন পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি আনিসুর রহমান বলেন, “জলস্তর ক্রমশ নামছে। মার্ক টু টিউবওয়েল থেকে জল উঠছে না। নলকূপ মেরামতের টাকা নেই। পরিস্থিতির কথা জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।” এ দিকে জলের দাবিতে জেলা জুড়ে বিক্ষোভও বেড়ে চলেছে। পাইপ লাইনে গোলযোগের ফলে তপন ব্লকে জন স্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জল সরবরাহ দু’দিন থেকে বন্ধ। সোমবার সকাল থেকে এলাকার বাসিন্দারা বিডিও অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। তৃণমূলের নেতৃত্বে গ্রামবাসীরা হরিরামপুরের পুন্ডরি গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তৃণমূল নেতা সোনা পাল বলেন, “মার্ক-টু নলকূপ থেকে জল উঠছে না। মেরামতের কোনও ব্যবস্থা করায় বাসিন্দারা তীব্র জলকষ্টে কাহিল হয়ে পড়েছে।” সেচ এবং পানীয় জলের দাবিতে বিক্ষোভ হয় বালুরঘাটেও। আরএসপির সংযুক্ত কিসান সভার কর্মী সমর্থকরা এ দিন জলের দাবিতে বালুরঘাটে প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। মহকুমাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে সংগঠনের জেলা সম্পাদক ক্ষিতীশ সরকার বলেন, “জেলা জুড়ে জলের জন্য হাহাকার উঠেছে। অথচ প্রশাসনের হেলদোল নেই। দ্রুত জল সরবরাহের ব্যবস্থা না হলে লাগাতর আন্দোলন শুরু হবে।” |