অসুস্থকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য সীমান্তে টহলরত জওয়ানদের অনেক অনুরোধ করেছিলেন রোগীর আত্মীয় ও গ্রামবাসীরা। কিন্তু বিএসএফ গেট না-খোলায় কাঁটাতারের বেড়ার পাশেই আড়াই ঘণ্টা ধরে ছটফট করতে করতে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার গভীর রাতে মালদহের কালিয়াচক থানার দুইশতবিঘি গ্রামের সীমান্তে ১৩ নম্বর গেটের কাছে হাদিনগরে ঘটনাটি ঘটেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম রুলি বিবি (১৯)। বাড়ি ওই এলাকাতেই। ৮ মাস আগে গ্রামের দিনমজুর রজ্জাকের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। সকালে ঘটনাটি জানাজানি হতেই এলাকার বাসিন্দারা মৃতদেহ আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে গেট খোলার ব্যাপারে বিএসএফের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দেওয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। জেলা পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে।”
গেট না-খোলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ১২৩ নম্বর ব্যাটালিয়নের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড প্রণয় কুমার। তিনি বলেন, “বিওপি’র সেক্টর ইনচার্জকে গেট খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গেট খোলার আগেই ওই মহিলা মারা যান।”
চরিঅনন্তপুরের দুইশতবিঘি এলাকার মধ্যে দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া থাকায় এলাকার হাদিনগর গ্রামের প্রায় ১২০ থেকে ১৩০ পরিবার কাঁটাতারের বেড়ার ও-পারে চলে গিয়েছেন। অনেকের আবার এ-পারে বাড়ি থাকলেও জমি ও-পারে রয়েছে। সকলেই ভারতীয় ভোটার। সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া হওয়ায় এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই সমস্যা রয়েছে সীমান্তের আরও বহু এলাকাতে। বাসিন্দারা সারা দিনে তিন বার এ-পার ও-পার করতে পারেন। সন্ধ্যা ৬টায় গেট বন্ধ করে দেয় বিএসএফ।
পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার রাত ১২টা নাগাদ হাদিনগরের রুলি বিবি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর বুকে ব্যথা শুরু হয়। তাঁর আত্মীয় ও কয়েকজন গ্রামবাসী রুলি বিবিকে হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য কাঁটাতারের বেড়ার কাছে গেটে নিয়ে আসেন। রুলি বিবির কাকা সানাউল্লা হক বলেন, “গেট খোলার জন্য জওয়ানদের হাত-পা ধরে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু জওয়ানেরা কোনও কথাই শোনেননি। ভোর ৩টে নাগাদ রুলি মারা যায়।” পুলিশ সূত্রের খবর, দেহটির ময়না-তদন্ত করা হচ্ছে। সম্ভবত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মহিলার মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভবেশ মণ্ডল বলেন, “বিএসএফ গেট খুলে দিলে রুলি বিবি বেঁচে যেত। চোখের সামনে এক জন গৃহবধূকে মরতে দেখলাম। অথচ কিছুই করতে পারলাম না।” রাজ্যের নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “বিএসএফ যা করেছে তা অমানবিক।” সিপিএম বিএসএফ জওয়ানদের শাস্তির দাবি তুলেছে। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা কালিয়াচকের প্রাক্তন বিধায়ক বিশ্বনাথ ঘোষ বলেন, “ওই জওয়ানদের শাস্তির দাবি করছি।” কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী বলেন, “বিষয়টি সংসদে তুলব। এটা মেনে নেওয়া যায় না।” |